যে শব্দ মুসলমানদের ব্যবহার করা উচিৎ নয়


শব্দ ব্যবহারের কুচিন্তায় যোগসাধনের ষড়যন্ত্র ইহুদী খৃষ্টানদের ঐতিহ্যগত প্রবৃত্তি। স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময়ও ইহুদী খৃষ্টানদের এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার ছিল। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, "হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলোনা উনজুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।" (সূরা বাক্বারা ১০৪)
আয়াতের শানে নযুলে বলা হয়েছে, ইহুদীরা রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য "রঈনা" শব্দ ব্যবহার করত যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হল "আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন" যা ভাল অর্থে ব্যবহার হয় আর খারাপ অর্থ হল "হে মূর্খ, হে মেষ শাবক" এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদ দুয়া। ইহুদীরা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। আর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ "রঈনা" শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন তবুও কিছু বলতেন না কেননা আল্লাহু পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না। যেমন কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, "তিনি (হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে মনগড়া কোন কথা বলেন না" (সূরা নজম-৩,৪)
এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহু পাক কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল করে "রঈনা" শব্দের বদলে "উনজুরনা" শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ "রঈনা" শব্দ ভাল-খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহার হলেও "উনজুরনা" শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থে ব্যবহার। তাই যে সকল শব্দের ভাল-খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, সে সকল শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত মুতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহার হয়। তাই মুসলামনদের উচিত নিচের শব্দগুলো পরিহার করা।

(১) আনলাকি থার্টিনঃ ইহুদী খৃষ্টানরা ১৩ কে আনলাকি বলে থাকে কারণ ১৩ সংখ্যার সাথে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক জড়িত। ইংরেজীতে “MUHAMMAD” নাম মুবারকের আদ্যক্ষর হল M, যা ইংরেজী বর্ণমালার ১৩ তম অক্ষর। তাই ইহুদী খৃষ্টানরা বিদ্বেষবশতঃ ১৩ কে অশুভ বা আনলাকি বলে থাকে। এমনকি ইহুদী নাছারাদের প্লেনে, রেলে, জাহাজে, হোটেলে ১৩ নং কোন সিট বা রুম থাকে না কিন্তু মুসলমানদের কাছে ১৩ ই হল শুভ বা লাকি । কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান করা আল্লাহ পাকের নির্দেশ। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সম্মান করবে সে জান্নাতী। আর জান্নাতী হওয়া হলো সৌভাগ্যের লক্ষণ। সে হিসেবে ১৩তম সংখ্যাকে (M) সম্মান ও মুহব্বত করা সৌভাগ্যের বা লাকী হওয়ার বিষয়।
(২) লাকি সেভেনঃ আবার ইহুদী খৃষ্টানরা 7 কে লাকি বলে থাকে। কারণ G ইংরেজী বর্ণমালার ৭তম বর্ণ। তাদের God এর G-এর সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু মুসলামদের নিকট ৭ হল অশুভ বা আনলাকি কারণ God বিশ্বাস করার অর্থ হলো শিরক করা। কারণ God এর রয়েছে Goddess। এতে আল্লাহ পাকের সাথে শরিক করা হয়। যে শিরক করবে সে জাহান্নামী আর জাহান্নামী হওয়াটাই আনলাকি বা বদনছসীবের বিষয়।
(৩) বিশ্ব ব্রহ্মান্ডঃ “বিশ্ব ব্রহ্মান্ড” শব্দটির মধ্যেও ঈমানহানীর ফাঁদ লুকায়িত রয়েছে। কেননা “ব্রহ্মান্ড” শব্দটি এসেছে “ব্রহ্মার আন্ডা” থেকে। বাংলা একাডেমী বিশ্বকোষ মতে, ব্রহ্মা বলতে হিন্দুদের একজন পৌরাণিক দেবতাকে বুঝায়। এই দেবতার আন্ডা(ডিম) রূপে এই ভূমি তথা পৃথিবীকে কল্পনা করে ওরা বলে থাকে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড। তাই এই শব্দ পরিহার করে “কুল-ক্বায়িনাত”, “বিশ্ব”, “পৃথিবী”, “আসমান-যমিন” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে পারি।
(৪) মাংসঃ “মাংস” শব্দটি এসেছে “মায়ের অংশ” শব্দ থেকে। হিন্দুরা গরুকে তাদের মা হিসেবে মান্য করে। তাই গরুর গোশতকে তারা মায়ের অংশ তথা মাংস বলে থাকে। তাই কোন মুসলমানের উচিত নয় কোন প্রাণীর গোশতকে মাংস বলা।
(৫) ঝোলঃ সাধারণত আমরা যে কোন তরকারীর তরল অংশটুকুকে আমরা “ঝোল” বলে থাকি। কিন্তুরা হিন্দুরা এ শব্দকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে থাকে। হিন্দুরা তাদের তৈরী খাবারকে তাদের পদ্ধতিতে পাক-পবিত্র করার জন্য গরুর গোবর ও প্রসাব মিশ্রিত তরল পদার্থ দিয়ে থাকে। হিন্দুরা এই তরল পদার্থকে “ঝোল” বলে থাকে। তাই মুসলমানদের উচিৎ ঝোল না বলে “সুরুয়া” বা “সূরবা” বলা।
(৬) বিসমিল্লায় গলদঃ আমরা শুরুতেই ভুল এই কথাটি প্রকাশ করতে গিয়ে বলে থাকি, “বিসমিল্লায় গলদ”। কিন্তু সূক্ষভাবে বিচার করলে এর অর্থ দাঁড়ায় “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম-এ ভুল” অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এ ভুল। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)। তাই এই শব্দ কোন মুসলমানের ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়।
(৭) কষ্ট করলে কেষ্ট মেলেঃ “কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে” এই প্রবাদটি মুসলমানরা হরহামেশাই ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কোন মুসলমানই জানে না এই “কেষ্ট” হচ্ছে হিন্দুদের একটি দেবতার নাম। তাই এ প্রবাদ ব্যবহার করা উচিত নয়।
(৮) ধান ভানতে শিবের গীতঃ “ধান ভানতে শিবের গীত” এই প্রবাদটিও মুসলমানের ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ “শিব” হিন্দুদের দেবতার নাম আর “গীত” বা গান মুসলমানের জন্য হারাম।
(৯)Rx: সব ডাক্তারাই রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে “Rx” লিখা থাকে। অথচ “Rx” অর্থ হল “Referred To Jesus Christ” অর্থাৎ প্রভু যিশু সমীপে সোপর্দ করে। নাছারাদের “প্রভু যিশু”-এর কাছে আত্ননিবদনের পক্রিয়া অনুসরণের কারণে ঈমান হারিয়ে যে কাট্টা কাফির, মুরতাদ পরিণত হতে হয়, তা মুসলমান ডাক্তারদের ভোঁতা মগজে নেই।
(১০) Md/Mohd: অনেকে তাদের নামের Muhammad শব্দটিকে সংক্ষেপে Md. অথবা Mohd. লিখে থাকে। আর এই সংক্ষিপ্তকরণের মাধ্যমে একদিকে মুসলমানেরা নিজেরাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারককে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে, আবার এর ফলে ইহুদী-নাছারারাও এটি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সুযোগ পাচ্ছে। যেমন- সংক্ষিপ্তাকারে লিখিত Md. অথবা Mohd. কে তারা প্রচার করছে Mouth of Dog বলে।(নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক) তাই Md. বা Mohd. পরিহার করতে হবে।
(১১) Mecca: এমনিভাবে মুসলমানেরা মক্কা শব্দটি ইংরেজীতে Mecca লিখে থাকে। অথচ এই শব্দ দ্বারা ইহুদী-নাছারারা Bar অর্থাৎ শরাবখানা বুঝিয়ে থাকে। তাই মুসলমানদের উচিত Mecca না লিখে Makkah লিখা।
(১২)Mosque: একইভাবে মুসলমানেরা মসজিদ শব্দটিকে ইংরেজীতে Mosque লিখে থাকে। অথচ এই শব্দ দ্বারা ইহুদী-নাছারারা House of Mosquito অর্থাৎ মশার ঘর বুঝিয়ে থাকে। তাই মুসলমানদের উচিত Mosque না লিখে Masjid লিখা।
(১৩) মৌলবাদীঃ মৌলবাদ শব্দের অর্থ হলো “যে কোন ধর্ম বা মতবাদের মূলতত্ত্ব, মৌলিক বা মূল বিষয়সমূহ অথবা মৌলিক বা মূল মতবাদসমূহ”। আর ব্যবহারিক অর্থে ধর্মান্ধ চরমপন্থী আমেরিকান খৃষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের বাইবেল সম্পর্কীয় মতবাদকে মৌলবাদ বলে এবং এ অর্থেই এটা ব্যাপকভাবে পরিচিত। আর এই ধর্মান্ধ চরমপন্থী আমেরিকান খৃষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্ট সম্প্রদায়ই মৌলবাদী বলে পরিচিত। কাজেই মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলা বা মুসলমানগণ নিজেদেরকে মৌলবাদী বলে দাবী করা কখনো কোন মতেই শরীয়তসম্মত হবে না। কারণ এটা খৃষ্টানদের শেয়ার বা চিহ্ন বা আলামত মৌলবাদ।
(১৪) গুণকীর্তনঃ “গুণকীর্তন” শব্দটিও মুসলমানদের পরিহার করা উচিত। কারণ গুণ শব্দের সঙ্গে কীর্তন শব্দ রয়েছে যা হিন্দুদের এক ধরনের গান। তাই মুসলমানরা প্রসংশা করা বলতে পারে।
(১৬) ইসলামিক রাষ্ট্রঃ ইসলাম একটি পুনাঙ্গ দ্বীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রের ধারণার উৎপত্তিস্থল হলো গ্রিসে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত যত মতবাদ সব বিধর্মী মতবাদ। আর রাষ্ট্রের সংজ্ঞা হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। ১. নির্দিষ্ট ভূখন্ড ২. জনসমষ্টি ৩. সার্বভৌমত্ব ৪. সরকার। রাষ্ট্রের এ সংজ্ঞার মাঝে ইসলাম নির্দিষ্ট ভূখন্ড,জনসমষ্টি এবং কথিত রাষ্ট্রীয় সরকার বা সংবিধান এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা কোনটাই স্বীকার করে না। সুতরাং ইসলামে কখনই ইসলামিক রাষ্ট্র বলে কোন শব্দ নেই। তবে খিলাফত ব্যবস্থা ইসলামে রয়েছে।
(১৬) ওরসঃ “ওরস” শব্দের আভিধানিক অর্থ “ওলীমা বা বিবাহের খানা, জিয়ারত, বিবাহের দাওয়াত, বাসর যাপন” ইত্যাদি। পারিভাষিক ও রূপক অর্থ “কোন আউলিয়া-ই-কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের ইন্তকালের দিন ফাতিহা পাঠ উপলক্ষ্যে খাওয়া, ওয়াজ-মাহ্‌ফিল, মীলাদ-ক্বিয়াম ইত্যাদির ব্যবস্থা করা”। পূর্ববর্তী যামানায় ওরস শব্দ ব্যবহার করাকে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ দোষণীয় মনে করেননি। কিন্তু পরবর্তী যামানায় ওরসের নাম দিয়ে বেপর্দা, বেহায়াপনা, গান-বাজনা, মেলা ইত্যাদি বেশরীয়তী কাজ করার কারণে পরবর্তী যামানার হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নেক বা দ্বীনী কাজে ওরস শব্দ ব্যবহার করা না করে “ঈসালে সাওয়াব” বা “সাওয়াব রেসানী” শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
(১৭) লাউঃ কদু হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় খাবার। অনেকে কদুকে লাউ বলে থাকে। কিন্তু লাউ শব্দের খারাপ অর্থ আছে বিধায় কুদকে লাউ বলা মুসলমানদের উচিত নয়।

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment