‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’, ‘সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম’, ‘সাইয়্যিদে ঈদে আকবার’ ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’


‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’, ‘সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম’, ‘সাইয়্যিদে ঈদে আকবার’ ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’-এর সম্মানার্থে
বৎসরের সর্বশ্রেষ্ঠ এ মুবারক দিনটি সর্বোত্তমভাবে পালনের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা তথা আলাদা বাজেট বরাদ্দ, গোটা রবীউল আউয়াল শরীফব্যাপী সারাদেশে অনুষ্ঠান পালন এবং ছুটি ঘোষণার জন্য আইন প্রণয়ন করা প্রসঙ্গে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘মাননীয় স্পিকার’ ও ‘মাননীয় সংসদ সদস্য’দের প্রতি উদাত্ত আহবান।


মুহতারাম,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে সংসদ একটি সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান। মাননীয় সংসদ সদস্যগণ শুধু জনপ্রতিনিধিই নন; তারা আইনপ্রণেতাও বটে। সুতরাং ইসলামী অনুষঙ্গে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
মুহতারাম,
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪০ বছর হলো। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এদেশবাসী স্বাধীনতার সুফল কতটুকু লাভ করেছে তা এক মহা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশে আজও চলছে ঔপনিবেসিক আমলের আইনকানুন। যে ঔপনিবেসিক আইনকানুনে এদেশে ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের আবেগ, অনুভূতি, চেতনার তথা ধর্মীয় ভাবাবেগের কিছুই প্রতিফলিত হয়নি।
মুহতারাম,
এদেশ আজ স্বাধীন। জালেম পাকিরা চলে গেছে। কিন্তু দেশ আজও জুলুম-শোষণ তথা দুর্নীতির করাল থাবা থেকে মুক্ত হয়নি। সিন্ডিকেট মজুদদারি বেড়েছে চরমভাবে। ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে অবিশ্বাস্যভাবে। লেলিহান অগ্নিশিখার মতো ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। ধনী আরো ধনী হচ্ছে। গরিব আরো গরিব হচ্ছে। বাড়ছে রাহাজানি, ছিনতাই, ডাকাতি। বাড়ছে খুন-ধর্ষণ, নারী টিজিংসহ হাজারো নারী নির্যাতন। সামাজিক ভারসাম্য একেবারে ভেঙ্গে গেছে। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হয়েছে।

মুহতারাম,
৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে এ অবস্থা তো হতে পারে না। কারণ, মুসলমান শান্তির ধর্ম ইসলাম-এ বিশ্বাসী।
আর ইসলাম-এ বিশ্বাসী মানুষ
দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে না।
দয়া-মমতাহীন হতে পারে না।
পরের হক নষ্ট করতে পারে না।
নৈতিকতাবিহীন কাজে মশগুল হতে পারে না।
নারীর প্রতি আগ্রাসী হতে পারে না।
নারীর প্রতি অসম্মান দেখাতে পারে না।
মুহতারাম,
তারপরেও তা হচ্ছে। অথচ এ প্রেক্ষাপটে নিত্যনতুন আইনও হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও সুফল মিলছে না।
মুহতারাম,
এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, এদেশের শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানকে তাদের দ্বীন ইসলামের ভিত্তিতে উজ্জীবিত করা হচ্ছে না। ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি আকর্ষিত করা হচ্ছে না। ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে না।
মুহতারাম,
এদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসীদের দ্বীন ইসলাম-এর মূল শিক্ষা এবং প্রধান মূল্যবোধ হলো- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন। কারণ, যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনিসহ কোনো নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করা হতো না এবং উনাদের বিশেষ কোনো ঘটনাও সংঘটিত হতো না।
শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন না হলে- আসমান-যমীন, লওহো-কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, বেহেশত-দোযখ এক কথায় কায়িনাতের কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ কতো মহান, কতো বড় খুশি বা ঈদের দিন হবে তা ভাষায় বর্ণনার অযোগ্য। আর সে দিনটি উপলক্ষে যদি যথাযথ আড়ম্বর, জাঁকজমক ও সর্বোচ্চ আয়োজনের সাথে খুশি প্রকাশ না করা হয়; তাহলে যে কতো কঠিন শাস্তির বিষয় হবে, তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
সঙ্গতকারণেই ইসলামী শরীয়ত এ দিনটিকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর বলে ঘোষণা করেছে এবং এ ঈদ পালন বা উদযাপন করাকে ফরযে আইন করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্যে তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস/৫৮)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট আগমন করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এই বলে পাঠিয়েছেন যে, “আপনি যদি না হতেন তবে আমি জান্নাত ও জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” (দায়লামী, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাত সৃষ্টি করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করেছেন মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করার উদ্দেশ্যে।
মুহতারাম,
এদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আর মুসলমান বা ইসলামের মূলকথা হলো- “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
বলাবাহুল্য, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ আদৌ উচ্চারিত হতো না, যদি- ‘মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উচ্চারণ না হতো।
অর্থাৎ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন ইসলামের মূল হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
আর উনার প্রতি সব আবেগ, মুহব্বত, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আদব জানানোর মূল মাধ্যম হচ্ছে উনার আগমনের দিন- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ যথাযথভাবে পালন।
মুহতারাম,
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর শান ও মান
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন বলেই
তিনি এদিনে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করেছেন। বঙ্গভবনে মীলাদ শরীফ পাঠের ব্যবস্থা করেছেন।
এবং এ ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনা থেকেই স্বাধীনতা উত্তরকাল হতেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সব স্কুল-কলেজে
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ পালন করা হয়।
কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, হামদে বারী তায়ালা, নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রচনা প্রতিযোগিতা, মীলাদ শরীফ পাঠ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়।
মুহতারাম,
সেক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিতে আপনিসহ সব সংসদ সদস্যদের আশু কর্তব্য,
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ দিবসটি যথাযথভাবে পালনের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বাধিক আয়োজন করা। প্রসঙ্গে আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হওয়া।
বৎসরের সর্বশ্রেষ্ঠ এ মুবারক দিনটি সর্বোত্তমভাবে পালনের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা তথা আলাদা বাজেট বরাদ্দ, মাসব্যাপী সারাদেশে অনুষ্ঠান পালন এবং ছুটি ঘোষণার জন্য আইন প্রণয়ন করা প্রসঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করা।
পাশাপাশি সম্ভাব্য আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে এদিনের গুরুত্ব, ভাবমর্যাদা রক্ষার্থে সব অনৈসলামী কাজ বন্ধ করনে জোরালো ভূমিকা রাখা।
এবং মূলত এ দিনের সম্মানে সব হারাম কাজ বন্ধ করে সর্বাত্মকভাবে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান ফুটিয়ে তোলা। উনার প্রতি মুহব্বত প্রকাশ করা। উনার আদর্শ অনুসরণ করা। সুন্নতসমূহ পালন করা।


মুহতারাম,
মহাজোটের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ২৩(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ছিলো, “কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না”।
পাশাপাশি আরো উল্লেখ ছিলো,
“সব ধর্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।”
মুহতারাম,
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে উল্লেখ্য যে, ৯৭ ভাগ দেশবাসী মুসলমানের ধর্ম বা দ্বীন- ‘ইসলাম’-এর শিক্ষা ও মূল্যবোধ হলো-
সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, আবেগ ও অনুভূতি দিয়ে সর্বাধিক ব্যয় করে সবচেয়ে প্রাধান্য ও গুরুত্ব এবং মহা আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে
‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ,
সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম,
সাইয়্যিদে ঈদে আকবর
পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ’ সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালন করা।
সঙ্গতকারণেই আপনাদের সরকারের উচিত-
এ বিষয়ে যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূর্ণভাবে পূরণ করা।
৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা।
ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।
ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করুন। তাওফীক দান করুন। গায়েবী মদদ করুন। (আমীন)

নিবেদক
আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম
সম্পাদক- দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত
কেন্দ্রীয় আহবায়ক- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, বাংলাদেশ।
(রাজাকার, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ বিরোধী ও ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ
উন্মোচনকারী সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি দ্বীনী মজলিস।)


তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.
Read more ...

সুমহান ২৮ ছফর।। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুল হুমাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সুমহান




মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান- মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সম্বলিত দিবসগুলিকে স্মরণ করিয়ে দিন সমস্ত কায়িনাতকে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে ধৈর্যশীল ও শোকরগোজার বান্দা-বান্দীদের জন্য ইবরত ও নছীহত রয়েছে। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত শরীফ- ৫)
আজ ঐতিহাসিক সুমহান বরকতময় ২৮শে ছফর।
আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ইমামুল হুমাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদত দিবস।
আর নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার ইমাম, আফযালুল আউলিয়া হযরত ইমাম মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস।
এ উপলক্ষে সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ অর্থাৎ ঈছালে ছওয়াবের মাহফিল করে উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করা।
সরকারের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- এ পবিত্র দিবসটি পালনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করা।


যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ তথা শাহাদত দিবস হচ্ছে ২৮শে ছফর। আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, (হে বিশ্ববাসী)! আমি তোমাদের নিকট নুবুওওয়াতের দায়িত্ব পালনের কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার আত্মীয়-স্বজন উনাদের তথা বংশধর উনাদের সাথে সদাচরণ করবে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বা আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা এবং উনাদের খিদমত করা, উনাদের সাওয়ানেহ উমরী জানা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইমাম হাসান বিন আলী বিন আবী তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় বিলাদত শরীফ লাভ করেন। হিজরী ৩য় সনে শা’বান মাসের ১৫ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি বা বুধবার হযরত হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আলী ইবনে আবী তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন: যখন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে তাশরীফ আনেন এবং ইরশাদ করেন: আমার সন্তানকে আমাকে দেখাও, উনার কী নাম রেখেছো? আমি বললাম: আমি উনার নাম রেখেছি- হারব (যুদ্ধ)। তিনি ইরশাদ করলেন: বরং তিনি হাসান। অর্থাৎ উনার নাম মুবারক হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। উনার জিসিম মুবারক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি অপেক্ষা অপর কেউ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন না।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের সাথে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন; তখন তিনি ছোট্ট শিশু। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন সিজদায় ছিলেন। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৃষ্ঠ মুবারক-এ অথবা কাঁধ মুবারক-এ উঠে বসলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নিয়েই অতি স্নেহপরায়ণভাবে দণ্ডায়মান হলেন। তিনি যখন নামায শেষ করলেন, লোকেরা উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এই শিশু উনার সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করলেন তা আপনি আর কারো সঙ্গে করেননি। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করলেন, “ইনি হচ্ছেন আমার রায়হানা অর্থাৎ আমার এক ফুল। আমার এ সন্তান হচ্ছে সাইয়্যিদ, অচিরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দ্বারা মুসলমানদের দুটি দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করবেন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শত্রুরা উনাকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। প্রতিবারই তিনি অসুস্থ অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ-এ গিয়ে দোয়া করেন, আর সাথে সাথেই সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু শেষবার অর্থাৎ ষষ্ঠবার যে বিষ পান করানো হয় তা ছিলো অত্যন্ত মারাত্মক বিষ, অর্থাৎ হিরক চূর্ণ। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার আদত ছিলো এই যে, তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাযের সময় পানি পান করতেন। উনি যে কলসি থেকে পানি পান করতেন সে কলসির মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যেনো কেউ কিছু ফেলতে বা বিষ মিশ্রিত করতে না পারে। কিন্তু শত্রুরা হিরকচূর্ণ কলসির মুখে বেঁধে রাখা কাপড়ে মিশিয়ে দিলো। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিদিনের ন্যায় পানি পান করার জন্য কলসি থেকে পাত্রে পানি ঢাললেন- তখন হিরকচূর্ণ বিষসহ পানি পাত্রে পড়লো। তিনি তা পান করার সাথে সাথে মারাত্মক বিষক্রিয়া শুরু হলো এবং তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবার আর উনার পক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ-এ যাওয়া সম্ভব হলো না। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বুঝতে পারলেন যে, উনার বিছাল শরীফ-এর সময় নিকটবর্তী। তাই তিনি ছোট ভাই সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে সংবাদ দিলেন। তিনি আসলে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ভাই! এই খিলাফতের জন্য আমাদের পিতা শহীদ হয়েছেন। আমিও শহীদ হচ্ছি। কাজেই, এই খিলাফতের আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এই খিলাফত থেকে দূরে থাকবেন। খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত বাতিল করে দেয়া হলো। এ কারণেই হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফত ফিরিয়ে নেননি।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, উক্ত মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণেই ৪৯ হিজরী সনের ২৮শে ছফর প্রায় ৪৬ বৎসর বয়স মুবারক-এ তিনি শাহাদাতবরণ করেন বা বিছাল শরীফ লাভ করেন। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র জান্নাতুল বাক্বীতে দাফন করা হয়। মূলকথা হচ্ছে- হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হচ্ছেন সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। উনার মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর উনাকে অনুসরণ করা ফরয। যে বিষয়টি ফরয সে বিষয়ে ইলম অর্জন করাও ফরয। তাই উনার বরকতময় সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক জানাও সকলের জন্য ফরয। পাশাপাশি ৯৭ ভাগ মুসলমান দেশের সরকারের জন্যও ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, উনার জীবনী মুবারক মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এই পবিত্র ছফর মাসেরই ২৮ তারিখ পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনার সম্পর্কে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হিজরী একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম হবে আমার নাম মুবারক-এর অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে অগণিত মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মোঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন আকবরের শাসনামলে মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদের পরিবর্তে নানা প্রকার দেব-দেবী ও শিরকীর খেয়ালে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। গুমরাহ শাসক আকবর প্রবর্তিত মনগড়া ‘দ্বীনে ইলাহী’ মতবাদের অনুশাসনে ঈমান হারিয়ে বিদয়াত, শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়ে যায়। অজ্ঞতা ও অবহেলাভরে মানুষ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত ও আহকামের অবলুপ্তি ঘটাতে থাকে। মুসলমানদের এই ঘোর দুর্দিনে রিসালতের ধারায় তাওহীদ ও আধ্যাত্ম (তাসাউফ) চিন্তার পুনর্বিন্যাসের জন্য উপমহাদেশে একজন মুজাদ্দিদ আগমনের মজবুত ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে যায়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মানুষের বিবেক, মন ও অনুভূতিতে ইসলামের নবায়ন ঘটানোর জন্যে আকবর সৃষ্ট ফিৎনার চরমকালে ৯৭১ হিজরীর ১৪ই শাওয়াল (ইংরেজি ১৫৬৩ সাল) ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন পাঞ্জাব প্রদেশের পাতিয়ালার সিরহিন্দ শরীফ-এ। মাত্র ছয় বছর বয়স মুবারক-এ তিনি কুরআন শরীফ হিফয করেছিলেন। অতঃপর কানপুরস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জগৎ বরেণ্য আলিমগণের নিকট তিনি হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ, সাহিত্য, কাব্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ ইসলামী ইলমের সকল শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কামালতের পরিপূর্ণ ধাপে উত্তরণের জন্য তিনি ওলীকুল শিরোমণি হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইসলামের ক্ষতিসাধনে বিধর্মীদের তুলনায় উলামায়ে ‘ছূ’দের (দুনিয়াদার মন্দ আলিম) ভূমিকাই প্রকট। রসূলে মকবুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “দুনিয়ার লোভ সকল পাপের মূল”। তিনি আরো বলেছেন, “দুনিয়াদার আলিম সবচেয়ে মন্দ ব্যক্তি।”
প্রতিপত্তি, খ্যাতি ও অর্থ লালসায় তদানীন্তন বিশ্ববিখ্যাত দুনিয়াদার আলিম তথা উলামায়ে ছূ’ মোল্লা মুবারক নাগোরী, আবুল ফজল, ফৈজী তারা সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের তাঁবেদারী ও তোষণ নীতিতে লিপ্ত থাকে। তারা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে। আসমানী ওহীর তত্ত্বাবধানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক প্রণীত শরীয়তের পরিবর্তে তারা এক অভিনব শরীয়ত প্রবর্তন করে। সুন্নত ও আহকামের অবলুপ্তি ঘটায়। রাজ দরবারে ‘তা’যীমী সিজদার’ প্রচলন করে। তাওহীদ ও রিসালতে বিশ্বাসী মানুষের অন্তরে বিদয়াত, শিরক ও কুফরীর বুনিয়াদ রচনা করে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুমহান তাজদীদের মাধ্যমে মানুষের সঠিক সমঝের উন্মেষ ঘটান এবং ঈমানের নবায়ন করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজ জীবনে সুন্নতের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিল করেন। মানুষের মাঝে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত অনুসরণের স্পৃহা জাগিয়ে তুলে অবলুপ্ত প্রায় সকল সুন্নত জিন্দা করেন। এ জন্য উনাকে বলা হয় “মুহিইস সুন্নাহ”। মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে সুন্নত জিন্দাকারী হাজার বছরের মহান মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার বড় সাধ, উনার কর্মময় জীবনাবসানের সর্বশেষ কাজটিও যেনো সুন্নতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। তিনি আপনজন, খলীফা ও মুরীদগণ উনাদেরকে ডেকে বললেন, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তেষট্টি বছর বয়সে নশ্বর পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদারে প্রত্যাবর্তন করেন।” অবশেষে সময় ঘনিয়ে এলো। আমল ও ক্ষমতা বহির্ভূত সুন্নত অনুসরণের এ অন্তিম বাসনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণতা দিয়েছেন উনাকে তেষট্টি বছর বয়স মুবারক-এ বিছাল শরীফ দান করে। সুবহানাল্লাহ! হিজরী ১০৩৪ (ইংরেজি ১৬২৪ সাল) ২৮শে ছফর উনি বিছাল শরীফ লাভ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ হয়েছে ২৮শে ছফর। যিনি ছিলেন হাজার বছরের মুজাদ্দিদ ও সুন্নত জিন্দাকারী। পাশাপাশি দ্বীনে ইলাহীসহ সকল বাতিল মতবাদের মূলোৎপাটনকারী। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমুতল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারক জেনে এবং উনাকে অনুসরণ করে ইহকালে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হওয়া এবং পরকালে জান্নাত লাভ করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।


তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.
Read more ...

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার




নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।
আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ-এর মাস হচ্ছে ছফর মাস। অর্থাৎ তিনি ২৮শে ছফর শাহাদাত বরণ করেন।
তাই সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- এ মাসে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বেশি বেশি মুহব্বত প্রকাশ করা এবং উনাদের বেশি বেশি ছানা-সিফত করা।
যা ইহকালে মর্যাদা হাছিল ও পরকালে জান্নাত লাভ করার কারণ।


যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, (হে বিশ্ববাসী)! আমি তোমাদের নিকট নুবুওওয়াতের দায়িত্ব পালনের কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার আত্মীয়-স্বজন উনাদের তথা বংশধর উনাদের সাথে সদাচরণ করবে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘তাফসীরে ইবনে হাতেম, ইবনে কাছির, মাযহারী, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধারা সাইয়্যিদাতুন নিসা আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনি ও উনার আওলাদদ্বয় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে বিশ্বময় জারি রয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বা আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা এবং উনাদের খিদমত করা, উনাদের সাওয়ানেহ উমরী জানা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইমাম হাসান বিন আলী বিন আবী তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় বিলাদত শরীফ লাভ করেন। হিজরী ৩য় সনে শা’বান মাসের ১৫ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি বা বুধবার হযরত হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আলী ইবনে আবী তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন: যখন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে তাশরীফ আনেন এবং ইরশাদ করেন: আমার সন্তানকে আমাকে দেখাও, উনার কী নাম রেখেছো? আমি বললাম: আমি উনার নাম রেখেছি- হারব (যুদ্ধ)। তিনি ইরশাদ করলেন: বরং সে হাসান। অর্থাৎ উনার নাম মুবারক হযরত হাসান আলাইহিস সালাম। উনার জিসিম মুবারক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি অপেক্ষা অপর কেউ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন না।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আদী বিন ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত বারা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে শুনেছি, তিনি বলেন: আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র কাঁধ মুবারক-এর উপর হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছি। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বত করে, সে যেনো ইনাকে (হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে) মুহব্বত করে।” হিজরী ৪০ সনের রমাদ্বান মাসে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা মনোনীত হলেন। চল্লিশ হাজার লোক উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত হন। তিনি খিলাফতের দায়িত্ব ৬ মাস পর্যন্ত পালন করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমার পরে খিলাফত ৩০ বৎসর।’ তন্মধ্যে ২৯ বৎসর ৬ মাস পূর্ববর্তী খলীফাগণ উনাদের সময়ে অতিবাহিত হয়। বাকি ৬ মাস হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি পূর্ণ করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণে ৪৯ হিজরী সনের ২৮শে ছফর প্রায় ৪৬ বৎসর বয়স মুবারক-এ তিনি শাহাদাত বরণ করেন বা বিছাল শরীফ লাভ করেন। হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র জান্নাতুল বাক্বীতে সমাহিত করা হয়।
কাজেই, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ-এর মাস হচ্ছে ছফর মাস। তাই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, এ মাসে বেশি বেশি আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা এবং উনাদের বেশি বেশি ছানা-সিফত করা এবং এর মাধ্যমে ইহকালে মর্যাদা-মর্তবা ও পরকালে জান্নাত লাভ করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দী হাছিল করা।


তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.
Read more ...