নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘দৃষ্টিকে অনুসরণ করো না। প্রথম দৃষ্টি যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন, একশত বছর যদি কোনো ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত আদায় না করে তবে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহের পরিমাণ হবে মাত্র চার লক্ষ সাত শত একটা। পক্ষান্তরে কোনো বেপর্দা পুরুষ ও বেপর্দা মহিলা যদি কোনো জনসমাবেশে বেপর্দা হয়ে যোগ দেয়, যেখানে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা একশজন এবং সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান করে, তবে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণেই তাদের প্রত্যেকের কবীরাহ গুনাহের পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। নাঊযুবিল্লাহ! কাজেই যে সকল পুরুষ ও মহিলারা বেপর্দা হয়ে থাকে, তারা যে দৈনিক কত কোটি কোটি কবীরাহ গুনাহ করে, তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই বেহতর জানেন। তাহলে ইসলামী শরীয়তে পুরুষ মহিলা সকলের জন্য পর্দা পালন করার কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকির করতে হবে।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, পুরুষের জন্য কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ফরযের পরেই ফরয হলো হালাল কামাই করা; আর মহিলাদের জন্য ফরয হলো পর্দা করা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একইভাবে হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, কোন মহিলা পর্দা না করে যদি বেপর্দাভাবে চলে তাহলে এ কারণে সে এবং তার অভিভাবক মহল যারা রয়েছে সকলেই দাইয়ূছের অন্তর্ভুক্ত হবে। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, ‘যে পুরুষ দেখে এবং যে মহিলা দেখায় উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি লা’নত বর্ষণ করেন।’ অর্থাৎ বেপর্দা মহিলা-পুরুষ উভয়ে লা’নতগ্রস্ত; যেরূপ ইবলীস লা’নতগ্রস্ত। নাঊযুবিল্লাহ! এজন্য স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুরুষদেরকে সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘দৃষ্টিকে অনুসরণ করো না। প্রথম দৃষ্টি যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।’ এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছীনে কিরামগণ উনারা বলেছেন, বেগানা পুরুষ ও মহিলার প্রতি দৃষ্টিতে একটি করে কবীরা গুনাহ লিখা হয়ে থাকে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, গবেষণা করে দেখা গেছে যে, প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসাবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশটি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোনো জনসমাবেশে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরস্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ধরা যাক, কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী কোন জনসমাবেশ হলো আর সেখানে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ হয় তাহলে একশ জন পুরুষ ও একশ জন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। মহান আল্লাহ পাক না করুন সে যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবে না। যেমন- একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয, তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয, তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয় তবে তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা; তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। আর হিজরী বছরে ৫০ সপ্তাহ হিসেবে জুমুয়ার সুন্নাত যোগ হবে ৫০টা। বছরে ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা), তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদের (ওয়াজিব) নামায, তা আদায় না করার কারণে ২টা; মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। হিজরী হিসেবে ধরে ৩৫৪ দিনে বৎসর। সে হিসেবে একশ বছরে নামায তরক্ব করলে কবীরাহ গুনাহ হবে ৩৯,৭৬০০টা। যেমন, হিজরী বছর হিসেবে ৩৫৪ দিনে ৫০ সপ্তাহ ৩৫৪ x ১১ = ৩৮৯৪ জুমুয়াতে ১টা সুন্নত বাড়বে ৫০ x ১ = ৫০ -------------------- মোট- ৩৯৪৪টা ৩৯৪৪ x ১০০ বছর = ৩৯৪৪০০টা তারাবীহ ও ঈদ = ৩২ x ১০০ বছর = ৩২০০টা -------------------- মোট- ৩৯৭৬০০টা আর যাকাতে ১০০টা রোযায় ৩০০০টা হজ্জে ১টা অর্থাৎ ১০০ বছর নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত তরক করলে কবীরাহ গুনাহ হবে- সর্বমোট ৪০০৭০১টা। মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, অর্থাৎ একশ বছর কোনো ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাতশত একটা। আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন জনসমাবেশে যোগ দেয়, যে জনসমাবেশে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশ জন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশি হলে এবং বেশি সময় অবস্থান করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ যে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। এটা তো শুধু চোখের গুনাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, কানযুল উম্মাল)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পর্দা করা ফরয আর বেপর্দা হওয়া শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। অতএব, হারাম ও কবীরা গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য নিজে পর্দা করা এবং অধীনস্থদেরকে পর্দা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রত্যেক অভিভাবক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net
|
Recent Comments