ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক!! ঈদ মুবারক!!!


ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক! মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম ঈদ, সকল ঈদের সেরা ঈদ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক মাস সাইয়িদুশ শুহুর, শাহরুল আ’যম পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ। এ মুবারক মাসের ১২ তারিখ মুবারক দিনটি উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম ঈদ উদযাপনের দিন। কারণ এ মুবারক দিনটি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, জুমুয়া ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোনো দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো না।
শুধু তাই নয়, কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না এবং কোনো মু’মিন-মুসলমানের অস্তিত্বও থাকতো না। ফলে শরীয়ত এ মুবারক দিনটিকে নির্ধারণ করেছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’ হিসেবে এবং এ ঈদ পালন করাকে ফরয সাব্যস্ত করেছে।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে যারা খুশি প্রকাশ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে অফুরন্ত নিয়ামত দান করবেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বসমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন না হলে- আসমান-যমীন, লৌহ-কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, বেহেশত-দোযখ এক কথায় কায়িনাতের কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ কতো মহান, কতো বড় খুশি বা ঈদের দিন হবে তা ভাষায় বর্ণনার অযোগ্য। আর সে দিনটি উপলক্ষে যদি যথাযথ আড়ম্বর, জাঁকজমক ও সর্বোচ্চ আয়োজনের সাথে খুশি প্রকাশ না করা হয়, তাহলে যে কতো কঠিন শাস্তির বিষয় হবে, তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
সঙ্গতকারণেই ইসলামী শরীয়ত এ দিনটিকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর বলে ঘোষণা করেছে এবং এ ঈদ পালন বা উদযাপন করাকে ফরযে আইন করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন, কুরআন শরীফ দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিয়েছেন সেজন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এ খুশি প্রকাশ করাটা তাদের যাবতীয় আমল থেকে উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট আগমন করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এই বলে পাঠিয়েছেন যে, আপনি যদি না হতেন তবে আমি জান্নাত ও জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” (দায়লামী, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাত সৃষ্টি করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করেছেন মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করার উদ্দেশ্যে।
এদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আর মুসলমান বা ইসলামের মূলকথা হলো- “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
বলাবাহুল্য, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ আদৌ উচ্চারিত হতো না, যদি- ‘মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উচ্চারণ না হতো। অর্থাৎ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন ইসলামের মূল হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
আর উনার প্রতি সব আবেগ, মুহব্বত, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আদব জানানোর মূল মাধ্যম হচ্ছে উনার আগমনের দিন- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ যথাযথভাবে পালন।
বুখারী, মিশকাত, মাছাহাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন- “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তোমরা গাল-মন্দ, সমালোচনা বা দোষারোপ করো না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে, তবুও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমার খিদমতে এক মুদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মুদ (৭ ছটাক) গম হাদিয়া করে যে ফযীলত অর্জন করেছেন তার সমপরিমাণ ফযীলত তোমরা অর্জন করতে পারবে না।”
কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হাদিয়া করে যে বেমেছাল ফযীলত হাছিল করেছেন পরবর্তী উম্মত যদি সেই ফযীলতের অনুরূপ ফযীলত হাছিল করতে চায় তাহলে তাদের কর্তব্য হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সর্বোচ্চ তাওফীক বা সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করা।
বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!
সেক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিতে সরকারের আশু কর্তব্য, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ দিবসটি পরম মুহব্বত, শান-শওকত এবং জওক-শওকের তথা বিপুল খরচ করে মহা আড়ম্বরের সাথে পালন করা। সাথে সাথে গোটা দেশবাসীকে সম্পৃক্ত করা।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর বরকতময় ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৪৩৩ হিজরী উপলক্ষে পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফ-এ ৫৩ দিনব্যাপী বিশেষ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ৪৫ দিনব্যাপী আয়োজিত এ মাহফিলের প্রথমে ৭ হতে ২৯ ছফর পর্যন্ত ২৩ দিন বিশেষ প্রতিযোগিতা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ রবীউল আউয়াল শরীফ হতে ২৭ রবীউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত ২৭ দিন বিশেষ ওয়াজ শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং তৃতীয় পর্যায়ে ২৮ রবীউল আউয়াল শরীফ হতে ৩০ রবীউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত ৩ দিন বিশেষ সামা শরীফ-এর মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েক ক্যাটাগরির বিশালাকৃতির বিশেষ পোস্টার সারা দেশব্যাপী লাগানো হয়েছে। বিশেষ রেসালা শরীফ প্রকাশ করা হয়েছে। সড়ক দ্বীপে পতাকা লাগানো হয়েছে। স্টিকার, ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলানো হয়েছে, রাজারবাগ দরবার শরীফ-এর আশেপাশেসহ রাজধানী ঢাকার শত শত স্কুল কলেজে ঈদ মুবারক খঁচিত বিশেষ চকলেট বিতরণ করা হয়েছে। রাজারবাগ দরবার শরীফ-এর তত্ত্বাবধানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, হচ্ছে আরো হবে। এছাড়াও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস অতিবাহিত করা হচ্ছে।
আরো উল্লেখ্য, এ উপলক্ষে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (মাদরাসা), দৈনিক আল ইহসান, মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকাসহ অন্যান্য সকল বিভাগ (জরুরী বিভাগ ব্যতীত) ৭ ছফর থেকে ৩০ রবীউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত ৫৩ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫৩ দিনব্যাপী দৈনিক আল ইহসান বন্ধ থাকার পরও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই ছানা-ছিফত প্রকাশার্থে বিশেষ ব্যবস্থায় বের করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment