ইসলামের দৃষ্টিতে হরতাল হারাম এবং প্রাসঙ্গিক কথা।


‘হরতাল’ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম হওয়া সম্পর্কে অনেক আয়াত শরীফ প্রয়োজ্য হয়। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা অনুসরণ করো আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন।” (সূরা বাক্বারা/১৭০)
আরো ইরশাদ করেন, “তারা কি জাহিলী যুগের হুকুম-আহকাম তলব করে অথচ আল্লাহ পাক থেকে উত্তম হুকুমদাতা ঈমানদারদের জন্য কে রয়েছে?” (সূরা মায়িদা/৫০)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি যা আদেশ-নির্দেশ, হুকুম-আহকাম নাযিল করেছেন বা দিয়েছেন হুবহু সেটাই মানতে হবে, পালন করতে হবে। তার খিলাফ যদি কেউ করে তার সম্পর্কে আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা আদেশ-নির্দেশ করবেনা তারা কাফির।” (সূরা মায়িদা/৪৪)
আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন, “তারা যালিম এবং তারা ফাসিক।” (সূরা মায়িদা/৪৫, ৪৭) আল্লাহ পাক তিনি উনার আদেশ-নির্দেশের বাইরে আমল করলে কুফরী হবে। আর আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নির্দেশ পালন করতে হলে আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ কর যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সূরা আনফাল/১)

আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন, “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন! তোমরা একমাত্র আমাকে অনুসরণ কর।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
অর্থাৎ প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানকে প্রতি ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করতে হবে।
আর সেজন্যই আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলে দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক, উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব/২১)
অর্থাৎ তিনিই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং উনার তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-পদ্ধতি, অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। উনার খিলাফ কোন কাজই করা যাবে না। তাই আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/৮)
এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ইবনে খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, (ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি?

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে?
অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনিও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনদে আহমদ, বায়হাক্বী)
সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ করা হারাম। অতএব, বিধর্মীদের দ্বারা তৈরিকৃত অস্ত্রপাতি, মাল-সামানা ব্যবহার করা হচ্ছে মুবাহ্ যা নিয়তের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এতে কাউকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হয়না।
আর হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, গণতন্ত্র, নির্বাচন, ব্লাসফেমী আইন ইত্যাদি বিধর্মীদের দ্বারা প্রবর্তিত পদ্ধতি, আইন-কানুন ও তর্জ-তরীক্বা অবলম্বন করার দ্বারা বিধর্মীদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হয়, তাই তা আমল করা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। উল্লেখ্য, হরতাল শব্দের অর্থ বিশৃঙ্খলা, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচার, অবাধ্যতা, অরাজকতা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধ ইত্যাদি। হরতালের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য যানবাহন, হাটবাজার, দোকানপাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি বন্ধ করা। হরতাল গুজরাটি শব্দ। ‘হর’ অর্থ প্রত্যেক। ‘তাল’ অর্থ তালা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।
কাজেই যার অর্থই বিশৃঙ্খলা, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচারিত, অবাধ্যতা, বিক্ষোভ, প্রতিরোধ তা কি করে ইসলামের জন্য হতে পারে? কারণ মুসলমানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “মুসলমান ওই ব্যক্তি যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে।” (বুখারী) এরপরও বলতে হয়, হরতালের উদ্ভাবক ও প্রবর্তক হচ্ছে ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুসলিম বিদ্বেষী মুশরিক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, ব্রিটিশদের রাউলাট আইন বাতিল করার জন্য তার প্রতিবাদে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে, তার নাম দেয়া হয় হরতাল। এই হরতাল পালিত হওয়ার কথা ছিল ১৯১৮ সালের ৩০শে মার্চ। পরে এই তারিখ পিছিয়ে ৬ই এপ্রিল করা হয়। ফলে কোন স্থানে ৩০ মার্চ আবার কোন স্থানে ৬ই এপ্রিল সর্বপ্রথম হরতাল পালিত হয়।
বলাবাহুল্য, হরতাল গুজরাটি শব্দ। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু, সে দাবি আদায়ের পদ্ধতির নামকরণ করে হরতাল। এছাড়াও হরতাল হারাম হওয়ার উৎস ও কারণ হলো- (১) বিজাতীয়দের উদ্ভাবিত পন্থা। (২) জন-জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি। (৩) জান-মালের ক্ষতি। (৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়া। (৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টা। অথচ আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব/২১)
তাহলে কি করে বলা যেতে পারে যে, মুসলমানদের জন্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিখ্যাত মুসলিম বিদ্বেষী মুশরিক মহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে অনুসরণ করে, তার উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত হরতাল করা জায়িয ও জরুরী? তাহলে কি গান্ধীর প্রবর্তিত হরতাল ব্যতীত ইসলাম অপূর্ণ? অথচ আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “আজকে আমি তোমাদের দ্বীনকে কামিল করলাম এবং তোমাদের উপর নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের উপর সন্তুষ্ট রইলাম।” (সূরা মায়িদা/৩))
অতএব, হারাম হরতালকে জায়িয ও জরুরী বলা কাট্টা কুফরী। যদি কেউ বিধর্মী বা বিজাতীয়দের অনুসরণ ও অনুকরণ করে তবে তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (মিশকাত) যারা বলে, আল্লাহ পাক তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার জন্য একক কোন পন্থা বা নিয়ম বলে দেননি।

এর জবাবে বলতে হয়, তাদের এ বক্তব্যও সম্পূর্ণ কুফরী। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথাবার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা এটার থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি?

তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরাও কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে ইহুদী-নাছারারা বিভ্রান্ত রয়েছে? আল্লাহ পাক উনার কছম! আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তিনি যদি এখন থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।”
তাই আমরা দেখতে পাই, ইহুদী-খ্রিস্টান তথা বিধর্মীরা যে সকল আমল করত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও সে আমল করতেন না, তাদেরকে কোনরূপ অনুসরণও করতেন না; এবং তিনি আমাদেরকেও কঠোরভাবে বিধর্মীয় আমল ও অনুসরণ না করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। অথচ হরতাল হলো মুসলিম বিদ্বেষী কাট্টা মুশরিক গান্ধীর তর্জ-তরীক্বা যা করা মুসলমানদের জন্য শুধু হারামই নয় বরং তা করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, শুধু এক্ষেত্রেই নিষেধ করা হয়নি বরং প্রতিক্ষেত্রেই নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, ইহুদী-নাছারারা আশূরার একদিন রোযা রাখত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে হাবীবীকে দু’দিন রোযা রাখতে বললেন। ইহুদী-নাছারারা দেরি করে ইফতার করত, এর পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের তাড়াতাড়ি ইফতার করতে বলেন। আবার ইহুদীরা শুধুমাত্র পাগড়ী ব্যবহার করত, এর পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি টুপি ছাড়া পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন এবং টুপিসহ পাগড়ী ব্যবহার করতে বলেছেন। দাড়ী ও মোচের ব্যাপারে মজুসী (অগ্নি উপাসক) ও মুশরিকদের বিরোধিতা করতে বলেছেন।
যেমন, তারা দাড়ী কাটত ও মোচ বড় করত। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘তোমরা দাড়ী বড় কর ও মোচ ছোট কর।’ ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্ পাক, উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমানদের আস্তিক-নাস্তিক, ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা বিজাতীয়, বিধর্মীদের অনুসরণ না করে খিলাফ করতে বলেছেন।
অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ পাক তিনি বলেন, তিনিই একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শ, যা কুরআন শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “তোমাদের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মধ্যে (চরিত্র মুবারক-এ) সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব/২১)
আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনিই একমাত্র আদর্শ এবং এ আদর্শের খিলাফ কোন কাজ করা যাবেনা। তাই আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ অন্যত্র বলেন, “তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/৭)
যার ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত মালিক ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি তোমাদের মধ্যে দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত তোমরা সে দুটো জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত গোমরাহ হবে না। একটি হলো, আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও অপরটি হলো, আমার সুন্নাহ শরীফ।” (বুখারী) তাহলে এরপরও কি করে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ পাক তিনি এককভাবে কোন পন্থা বা নিয়ম বলে দেননি?
প্রকৃতপক্ষে এরা ওই আয়াত শরীফ-এরই মিছদাক যে আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তাদের অন্তর থাকা সত্ত্বেও তারা উপলব্ধি করতে পারেনা, তাদের চোখ থাকা সত্ত্বেও তারা দেখতে পায়না এবং তাদের কান থাকা সত্ত্বেও তারা শুনতে পায়না। তারা মূলত চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তার চাইতেও অধম এবং তারা গাফিল শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আ’রাফ/১৭৯) হাদীস শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “সমস্ত আসমানী কিতাবে যা কিছু রয়েছে তা কুরআন শরীফ-এ রয়েছে। আর কুরআন শরীফ-এ যা রয়েছে তা সূরা ফাতিহাতে রয়েছে।”
আর আল্লাহ পাক তিনি সূরা ফাতিহাতে বলেন, তোমরা দোয়া করো- “(আল্লাহ পাক) আমাদের সরলপথ প্রদর্শন করুন।” সরলপথ কোনটি? এবং কাদের পথটা সরল পথ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত? সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক তিনি পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলেন, “যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে উনাদের পথ।” অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি যাঁদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন উনাদের পথকে সরলপথ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ পাক তিনি কাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন? “আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত দিয়েছেন
যাঁরা নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছলেহ উনাদেরকে এবং উনারাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা/৬৯)
আল্লাহ পাক তিনি যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন উনারা হচ্ছেন দু’শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। প্রথম শ্রেণী হচ্ছেন নবী বা রসূল আলাইহিমুস সালামগণ। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছলেহ অর্থাৎ যারা বিলায়েতের হক্বদার অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলে দিলেন, আমি নবী এবং আউলিয়া-কিরামগণকে যে পথ দিয়েছি সেটাই সরল পথ এবং সে পথই তোমরা তলব কর।

এর খিলাফ পথে চলতেও পারবেনা এবং তলবও করতে পারবে না। তাই আল্লাহ পাক তিনি সূরা ফাতিহার পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ সেটা উল্লেখ করেছেন, তোমরা এ দোয়াও করবে, “আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তাদের পথ দিবেন না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা, (ইহুদী-নাছারা)।”
কুরআন শরীফ নাযিলের উছূল হচ্ছে, নুযূল খাছ হুকুম আম। অর্থাৎ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে কোন উপলক্ষ নিয়ে কিন্তু তার হুকুম বলবৎ থাকবে ব্যাপকভাবে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত।

অর্থাৎ সূরা ফাতিহাতে যদিও ইহুদী-নাছারাদের পথ থেকে পানাহ চাইতে বলা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে ইহুদী-নাছারাদের সাথে সাথে হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, মুশরিক, বেদ্বীন, বদ দ্বীন, বিদয়াত, বেশরা, গোমরাহ ইত্যাদি সকল প্রকার লোকদের পথ থেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি সত্যিই আমরা সূরা ফাতিহা মানি, স্বীকার করি এবং নামাযে প্রত্যেক রাকয়াতে তিলাওয়াত করে দোয়া করি তাহলে আমরা কি করে বিখ্যাত মুশরিক, মুসলিম বিদ্বেষী গান্ধী কর্তৃক উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত হরতাল জায়িয ও জরুরী বলে ফতওয়া দিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে হরতালকে জায়িয ও জরুরী বলে ফতওয়া দেয়া কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, কোন মুসলমানদের জন্য কোন অবস্থাতেই বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই।
যারা জায়িয ও জরুরী বলবে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের হুকুম হচ্ছে তওবা করার সময় তিনদিন; অন্যথায় শাস্তি মৃতুদণ্ড।

তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment