আখিরী চাহার শোম্বাহ


মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করে; আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।
‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ পালন করা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত-এর অন্তর্ভুক্ত। এটাকে বিদয়াত বলা গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।
এ বছর ২রা ফেব্রুয়ারী ‘বুধবার দিন’ হচ্ছে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ তাই বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের উচিত এ দিনের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করা এবং যথাযথ মর্যাদার সাথে এ মুবারক দিনটি পালনের সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।

যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মুসলমান হিসেবে সমস্ত মুসলমানদেরকেসহ সরকারকে- মুসলমানদের ঈমানের মূল এবং সমস্ত কায়িনাতের রহমত ও নাজাতের মূল আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অকল্পনীয় ও বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা এবং ফাযায়িল-ফযীলতই শুধু নয় পাশাপাশি উনার সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ দিন ও ঘটনা সম্পর্কেও বিশেষভাবে অবগত হতে হবে এবং অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সাথে উনার হক্বও বিশেষভাবে পালন করতে হবে।
আসন্ন পবিত্র ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উপলক্ষে এক আলোচনা মজলিসে রাজারবাগ শরীফ-এ তিনি এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের মাঝেই মাখলুকাতের কামিয়াবী নিহিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যারা উনার প্রতি ঈমান আনবে, উনাকে তা’যীম করবে এবং উনার উপর অবতীর্ণ কুরআন শরীফ-এর অনুসরণ করবে উনারাই হবে সফলকাম।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা হয়েছে যে, “যমীনের যে মাটি মুবারক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক স্পর্শ করেছে তার মর্যাদা আরশে আযীমের চেয়েও লক্ষ-কোটি গুন বেশি।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ পাওয়ার কারণে মাটি মুবারক-এর যদি এতো মর্যাদা-মর্তবা হয়ে থাকে; তাহলে যে তারিখে, যে দিবসে, যে মাসে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সে তারিখ, সে দিবস ও সে মাসের মর্যাদা-মর্তবা কতটুকু হবে সেটা খুব সহজেই অনুধাবনীয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পূর্বে আখিরী চাহার শোম্বাহ বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফযীলতপূর্ণ ঘটনা। তাই সব মুসলমানেরই উচিত এ দিনের ফযীলত হাছিল করা ও আমল করা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ‘আখির’ শব্দটি আরবী। এর অর্থ- শেষ। আর ‘চাহার শোম্বাহ’ হচ্ছে ফারসী শব্দ। এর অর্থ- বুধবার। আরবী ও ফারসী শব্দের সংমিশ্রণে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ বলতে ছফর মাসের শেষ বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলত এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহা খুশির দিন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এ মুবারক দিনটির ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পূর্ববর্তী মাসের অর্থাৎ ছফর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি ভীষণভাবে অসুস্থতা অনুভব করেন। দিন দিন উনার অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। কিন' ছফর মাসের ২৯ তারিখ বুধবার দিন ভোর বেলা ঘুম থেকে জেগে তিনি বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ছুটে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি হাযির আছি।’ তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হে আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আমার মাথা মুবারক-এর ব্যথা দূর হয়ে গেছে এবং শরীর মুবারকও বেশ হালকা মনে হচ্ছে। আমি আজ বেশ সুস্থতা বোধ করছি।’ সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি আনয়ন করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত শরীর মুবারক-এ পানি ঢেলে ভালোভাবে গোসল করিয়ে দিলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এই গোসলের ফলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম উনার শরীর মুবারক হতে বহু দিনের অসুস্থতাজনিত অবসাদ অনেকাংশে দূর হয়ে গেলো। তারপর উনি বললেন, ‘হে আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ঘরে কোনো খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘জী-হ্যাঁ, কিছু রুটি পাকানো আছে।’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আমার জন্য তা নিয়ে আসুন আর হযরত মা ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনাকে খবর দিন, তিনি যেনো উনার আওলাদগণ উনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার নিকট চলে আসেন।’ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনাকে সংবাদ দিলেন এবং ঘরে যে খাবার তৈরি ছিলো তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পরিবেশন করলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনার আওলাদগণ উনাদেরকে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে হাযির হলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মা ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনাকে নিজের গলা মুবারক-এর সাথে জড়িয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন, নাতিগণ উনাদের কপাল মুবারক-এ চুমো খেলেন এবং উনাদেরকে সাথে নিয়ে আহারে বসলেন। কয়েক লোকমা খাবার গ্রহণ করার পর অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা খিদমতে এসে হাযির হলেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও বাইরে এসে হাযির হন। কিছুক্ষণ পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইরে এসে উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে ছাহাবীগণ! আমার বিদায়ের পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে ছাহাবীগণ উনারা ব্যাকুলচিত্তে কান্না শুরু করলেন। উনাদের এ অবস্থা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্ত্বনা দান করলেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ-এ ওয়াক্তিয়া নামাযের ইমামতি করলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীর্ঘদিন অসুস্থতা অনুভবের পর সুস্থ দেহ মুবারক-এ মসজিদে নববী শরীফ-এ আগমন করেন এবং নামাযের ইমামতি করেন এই অপার আনন্দে ছাহাবীগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে অনেক কিছু দান-খয়রাত করেন। কোনো কোনো বর্ণনায় জানা যায় যে, খুশিতে বাগবাগ হয়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত উসমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দশ হাজার দীনার, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করতঃ আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি লাভ করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার মারিফত-মুহব্বতে দগ্ধিভূত ব্যক্তিগণ উনারা সে দিনটিকে মারিফত-মুহব্বত লাভের উসীলা সাব্যস্ত করেছেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, উক্ত দিনের শেষ প্রান্তে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় অসুস্থতা বোধ করেন অতঃপর ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ রফীকে আ’লা উনার পরম দীদারে মিলিত হন।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নীতি অনুসরণে মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ পালন করে আসছেন। কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যারা ছাহাবীগণ উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করে আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ ১০০)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, অনেকে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উদযাপন করাকে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও ভুল। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের অনুসরণে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উপলক্ষে সাধ্যমত গরিব-মিসকীনদেরকে দান-সদকা করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের কারণ। অতএব, বাংলাদেশসহ ও সমস্ত মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের উচিত আখিরী চাহার শোম্বাহ- এ দিনের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করা এবং যথাযথ মর্যাদার সাথে এ দিন পালনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।

সূত্র: দৈনিক আল ইহসান (২২ জানুয়ারী, ২০১১)

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment