মহান বিজয় দিবস ও প্রসঙ্গ কথা। আমরা শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই; বরং ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সব রাজাকারদেরও বিচার চাই।


সব প্রশংসা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
আজ ২০ মুহররমুল হারাম/১৪৩৩ হিজরী, ২রা পৌষ/১৪১৮ ফসলী সন, শুক্রবার ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এদেশের আকাশে ৪০ বছর পূর্বের এদিনটিতে প্রথম উঠেছিলো এক স্বাধীন, সমুজ্জ্বল, অত্যুজ্জ্বল অন্যরকম সূর্য। ১৯৭১-এর এদিনে যে সূর্যের উদয় হয়েছিলো তা ছিলো বাঙালির বিজয়ের সূর্য। এদিন তাই এ ভূ-খ-ের বাঙালি জনগোষ্ঠীর ইতিহাসের মহান গৌরবময় দিন।
পঁচিশে মার্চ ভয়াল রাত্রিতে শুরু হওয়া পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যাযজ্ঞ আর নৃশংসতার দীর্ঘ ৯টি মাসে রক্তস্নাত পথ পাড়ি দিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর চার-পাঁচ লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিলো অমূল্য এই স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের এই দিনে পৌষেরই এক পড়ন্ত বিকেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিলো বীর বাঙালি। ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হয়েছিলো মঞ্চ। পাশের ঢাকা ক্লাব থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আনা হয়েছিলো একটি টেবিল ও দুটি চেয়ার। পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন পাকি সেনা ভারতীয় বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলীলে বিকেল চারটা ৩১ মিনিটে সই করে।
১৯৭১ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী দালিলিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এই দিন থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেক রক্ত, অনেক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
তাই আনন্দ উৎসব এবং শোক-শ্রদ্ধার এক অভূতপূর্ব সম্মিলনে দেশের সর্বত্রই আজ পালিত হবে ৪০তম বিজয় দিবস, মুক্তযুদ্ধে বিজয়ের ৪০তম বার্ষিকী। তবে আনন্দঘন এই দিনেও শহীদ পরিবারের সদস্যদের বুকের ভেতর থামেনি রক্তক্ষরণ। স্বজন হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ তারা অনেকটাই ক্লান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন দেশে এখনো অবহেলিত, অপমানিত। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করছে, মন্ত্রী হয়েছে। গেল নির্বাচনেও মনোনয়ন পেয়েছিলো ২৫ যুদ্ধাপরাধী।
বলাবাহুল্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে গোষ্ঠী নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিলো তাদের যথোপযুক্ত বিচার না হওয়ার কারণে আমাদের সামজিক জীবনে ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে এক রাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। সাড়ে তিন দশকেরও অধিক সময় পাড়ি দেয়ার পর এ স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে আজ সেই হিসাব নেয়ার দিন।
স্মর্তব্য, ৪০ বছর একটি রাষ্ট্রের পরিপূর্ণতার বছর। বাংলাদেশকে এখন কোনোক্রমেই আর শিশু রাষ্ট্র বলা যায় না।
অতএব, আজ আমাদের অনুভবে অন্তরের অন্তঃস্থিত প্রগাঢ় প্রশ্নের জোরদার বহিঃপ্রকাশ দরকার যে, আমাদের রক্তের, গর্বের মাতৃভূমি-
কেন এখনো বিশ্বের অনুন্নত দেশের সারিতে?
কেন এখনো অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও দেশের অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষের দিনে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া জোটে না?
কেন হাজার হাজার কোটি টাকার সাহায্যের পরও সিডরে, আইলা ক্ষতিগ্রস্তদের এখনো ঘরবাড়ি হলো না?
কেন খোদ রাজধানীর ফুটপাথে শুয়ে থাকে লাখ লাখ লোক। কেন কেবল রাজধানীতেই ৬০ লাখ লাঞ্ছিত বস্তিবাসীর বাস?
কেন স্বাধীনতা উত্তর ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ তকমার পর আজও
চাল সিন্ডিকেট, তেল সিন্ডিকেট
চিনি সিন্ডিকেট, বহাল তবিয়তে থাকে?
কেন এদেশে ক্ষমতাসীনরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে?
কীভাবে স্বাধীন দেশে রাজাকাররা মন্ত্রীর পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে ঘুরতে পারে, সংসদে যেতে পারে?
কেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বিবৃত ‘দেশকে স্বাধীন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ’ বলার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি ও চেতনা’ যে ছিলো ‘ইসলাম’ সে কথা প্রতিফলিত হয় না?
কেন আজ ইসলামের নামে ঘৃণিত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কেনার হাট বসাতে পারে?
কেন আজ রাজাকার জামাতীরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রলোভনে প্ররোচিত করতে পারে?
তাই একথা আজ সর্বত্র বিস্তার করা দরকার যে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকাররা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো সুফল পেতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোনো সমাবেশই কেবল নয় বরং কোনো ধরনের কোনো সমাবেশের অনুমোদন তারা পেতে পারে না।
পাশাপাশি আমরা বলব ইসলামের আঙ্গিকেই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের সমাধান হওয়া দরকার। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে যে কেউ একটা বদ কাজ করলো পশ্চিম প্রাপ্ত থেকে যে কেউ তা সমর্থন করলো তার সমান গুনাহ তার হবে।” আমরা তাই শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী সব রাজাকার তথা গোটা জামাতে মুওদুদী এবং তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থনকারী সব শিবির কর্মী এবং তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদেরও যথাযোগ্য বিচার চাই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমেরিকার মতো একটি খ্রিস্টান দেশ থেকে যদি তাদের দেশবিরোধী ঘাতকদের উৎখাত করা হতে পারে, তবে তা ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে হতে পারবে না কেন? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৭৮২ সালে যেসব আমেরিকাবাসী ব্রিটেনের পক্ষ নিয়েছিলো স্বাধীনতার পর তাদের প্রত্যেককে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
আমাদের দেশের রাজাকারদের মতো ওদেরকে বলা হত ‘লয়েলিস্ট’। আমেরিকায় যদি কোনো ‘লয়েলিস্ট’ না থাকতে পারে, তবে আমাদের দেশে ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মতেই কোনো রাজাকার থাকতে পারে না। সঙ্গতকারণেই আমরা স্পষ্ট ও বুলন্দ আওয়াজ এবং তীব্র উচ্চারণ করছি, ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই; ইসলামে রাজাকারের ঠাঁই নেই।’
বলাবাহুল্য, এসব অনুভূতি জাগরুক ও জোরদারের জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত, নেক সংস্পর্শ তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।
যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই তা প্রাপ্তি সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত নছীব করুন। (আমীন)

তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment