GMT পরিবর্তে KMT (Kaba Shareef Mean Time) বলা উচিত


কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, কাবা শরীফ মানব জাতির জন্য নির্মিত প্রথম ঘর। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, কাবা শরীফ-এর নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম যমীন। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অনুসরণ করতে হলে বিশ্বের সব দেশের মুসলমানদেরকে গ্রিনিচের পরিবর্তে কাবা শরীফ থেকেই প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করে নিয়ে সকল ‘টাইম জোন’ নির্ণয় করতে হবে ॥ সউদী সরকারের এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখা অতীব জরুরী|
------------------------------------------------------
ইসলামের দৃষ্টিতে আসমান-যমীনের কেন্দ্র ‘পবিত্র কাবা শরীফ’ থেকে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করে সকল সময়-অঞ্চল নির্ধারণ করা এবং GMT পরিবর্তে KMT (Kaba Shareef Mean Time) বলা উচিত|
যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “মুসলমানদের একটি নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে। ১৯২৮ সাল থেকে GMT বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত হয়ে ১৯৭২ সাল থেকে UTC হলেও ব্রিটিশরা GMT বলতেই পছন্দ করে। আসমান-যমীনের কেন্দ্র ‘পবিত্র কাবা শরীফ’ থেকে প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করে নিয়ে মুসলমানদের উচিত সময়-অঞ্চল নির্ধারণ করে KMT (Kaba Shareef Mean Time) বলা।”
পবিত্র কাবা শরীফ কেন্দ্রিক পৃথিবীর সকল সময়-অঞ্চল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে গতকাল রাজারবাগ শরীফ-এ তিনি এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সময় নির্ধারণে যে আন্তর্জাতিক সময় নির্ধারক রয়েছে তাকে বলা হয় UTC (Co-ordinated Universal Time)। আন্তর্জাতিক সময় নির্ধারক হিসেবে GMT-এর এখন কোন অস্তিত্ব নেই। ১৯৭২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকেই GMT (Greenwich Mean Time) এর পরিবর্তে UTC ব্যবহৃত হচ্ছে। যখন গ্রিনিচ মেরিডিয়ানের উপর সূর্য থাকে তখন দুপুর ১২টা ধরে পৃথিবীর সকল অঞ্চলের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন গতির কারণে সূর্য যখন পুনরায় মাথার উপর আসে তখন সর্বোচ্চ সময়ের পার্থক্য হয় ১৬ মিনিট। এ সকল অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে UTC ব্যবহৃত হতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর সকল সময়-অঞ্চল এখনো গ্রিনিচকে প্রাইম মেরিডিয়ান ধরে নির্ণয় করা আছে। গ্রিনিচকে দ্রাঘিমা ০ ডিগ্রি ধরে সেখান থেকে ১৫ ডিগ্রি অন্তর অন্তর ভাগ করে সমস্ত পৃথিবীকে ২৪টি সময় অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে আমরা যখন ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর ১২টা তখন গ্রিনিচে সময় সকাল ৬টা। গ্রিনিচের পূর্বের দেশগুলোর সময় ভাগ করা হয়েছে গ্রিনিচের সাথে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা যোগ করে এবং গ্রিনিচের পশ্চিমের দেশগুলোর সময় ভাগ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা বিয়োগ করে। যদিও রাজনৈতিক কারণে এই সময়-অঞ্চল ২৪টি থেকে ৩৯টিতে উন্নীত হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মুসলমানদের উচিত কাবা শরীফকে কেন্দ্র ধরে পৃথিবীর ডানে ও বামের সকল সময়-অঞ্চল নির্ধারণ করা। কাবা শরীফ-এর উপর দিয়ে পৃথিবীর প্রাইম মেরিডিয়ান স্থির করা উচিত। গ্রিনিচের উপর দিয়ে প্রাইম মেরিডিয়ান কল্পনা করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, গ্রিনিচ মিন টাইম (GMT) শব্দটি ব্যবহৃত হতো মূলত লন্ডনের গ্রিনিচে অবস্থিত রয়েল অবজারভেটরি-এর উপর সূর্যের সময়কে ধরে। সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য এটমিক ঘড়ি ব্যবহৃত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে UTC আন্তর্জাতিক সময় সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯২৮ সালে GMT প্রথম পরিবর্তিত হয় UT (Universal Time) দ্বারা, পরে তা পরিবর্তিত হয়ে হয়- UT1 এবং পরে UT1-এর সঙ্গে সংশোধনী হিসেবে ০.৯ সেকেন্ড যোগ এবং বিয়োগ করে UTC করা হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, যদিও গ্রিনিচের উপর দিয়ে যাওয়া প্রাইম মেরিডিয়ানের বিষয়টির কোন বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই। এটি একটি গাণিতিক সমাধানের জন্যই ব্যবহৃত হয়। গ্রিনিচে অবস্থিত রয়াল অবজারভেটরি’র বারান্দায় প্রাইম মেরিডিয়ান চিহ্নিত করার জন্য যে লাইন চিহ্নিত করা আছে, প্রাইম মেরিডিয়ান মূলত সেখানে নেই; সরে গেছে কয়েক মিটার দূরে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, একটি বিষয় বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করা যায়; সেটা হলো- প্রথম ১৯২৮ সালে GMT প্রথমে UT এবং পরে UT1 দ্বারা এবং ১৯৭২ সালের পহেলা জানুয়ারিতে UTC দ্বারা পরিবর্তিত হবার পরেও গ্রিনিচ মিন টাইমকে আইনগতভাবে স্বীকৃত দেয় হয় অনেক পরে। যেমন, ব্রিটেনে ১৯৭৮ সালের আইনের ৯ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়, ‘যখনই সময়ের কোন ব্যাখ্যা আসবে, তখন অন্য কোনভাবে অন্য বিষয় উল্লেখ না থাকলে GMT কেই বুঝাবে।’
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এখন গ্রিনিচ টাইম সিগন্যাল মূলত UTC -এর অনুরূপ। ফলে ব্রিটেনে শীতকালীন সময় স্কেল যা UTC -এর অনুরূপ তাকে UTC না বলে GMT বলা হয়। এছাড়াও ব্রিটেনের সিভিল টাইম আইনগতভাবে GMT-এর উপর নির্ভরশীল; UTC -এর উপর নয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, এখান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, ব্রিটিশরা তাদের GMT-র ধারণা থেকে সরে আসতে রাজি নয়। এর মূল কারণ, তারা তাদের আভিজাত্যকে হারাতে রাজি নয়। প্রয়োজনে সংশোধনী আনলেও তারা UTC না বলে GMT বলাই পছন্দ করে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, যদি তাই হয় তবে মুসলমানরা কেন এখনো ব্রিটিশদের GMT বলার মধ্যে আভিজাত্য খুঁজবে? স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা শরীফকে আসমান-যমীনের কেন্দ্র বলেছেন ফলে কাবা শরীফ থেকেই পৃথিবীর মূল মধ্যরেখা স্থির করে নিয়ে পৃথিবীর সময়-অঞ্চল নির্ধারণ করতে হবে। তখন GMT/ UTC না বলে KMT (Kaba Shareef Mean Time বলবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, পৃথিবীপৃষ্ঠের কোন স্থানে দাঁড়িয়ে কেউ যদি বলে আমি পৃথিবীর কেন্দ্রে আছি তার দাবি একদিক থেকে সত্য। কেননা, সেই স্থানের ডানদিক থেকে যে কয়টি দ্রাঘিমা পেরিয়ে সে তার অবস্থানে আসতে পারবে; একইভাবে বামদিক থেকে ঠিক সেই কয়টি দ্রাঘিমা পেরিয়ে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে পারবে। সুতরাং পৃথিবীর যে কোন স্থানের উত্তর-দক্ষিণ মেরুর সংযোজক রেখাকে মূল মধ্যরেখা হিসেবে কল্পনা করা যায়।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, কেউ যদি পৃথিবীর কোন একটি স্থানে মূল মধ্যরেখা কল্পনা করে নেয় এবং সেই কল্পিত রেখার দু’পাশে হাত প্রশস্ত করে দিয়ে ভাবে তার একটি হাত পূর্ব গোলার্ধে এবং অন্য একটি হাত পশ্চিম গোলার্ধে তবে তার এ ধারণাটিও সত্য। যদিও তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। কেননা, সে স্থানের কোন ধর্মীয়, ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেই। সুতরাং পৃথিবীর এমন একটি স্থানের উপর দিয়ে মূল মধ্যরেখা স্থির করা উচিত, যে স্থানটির ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব আছে। আর তা হচ্ছে কাবা শরীফ। কাবা শরীফ এমন একটি স্থান যে স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম। যে স্থানের পবিত্রতা অপরিসীম। যে স্থানটি পূর্ব-পশ্চিমে সবার কাছে পরিচিত এবং গুরুত্বসহকারে বিবেচিত। সকল আহলে কিতাবের কাছে যে স্থানের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। যে স্থানটি ছাড়া আর কোন স্থানের এতটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেই। কাবা শরীফকে কেন্দ্র ধরে যখন পৃথিবীর সকল সময়-অঞ্চল নির্ধারণ করা হবে তখন যেকোন স্থানের স্থানীয় সময় হবে, KMT+ (স্থানীয় সময় অঞ্চল) অথবা KMT-স্থানীয় সময় অঞ্চল)।

সূত্র: দৈনিক আল ইহসান/৩০ জানুয়ারী, ২০১০ ঈসায়ী সন

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment