মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কাফির-মুশরিকদের সাথে মিল রাখবে সে তাদেরই দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।’ আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, ‘যে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ স্মরণ রাখতে হবে যে, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য ‘পহেলা এপ্রিল’ বা ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করা কাট্টা হারাম ও কুফরী। কারণ এদিনের ইতিহাস হলো- বিধর্মী কর্তৃক চরম প্রতারণা ও ধোঁকামূলক আচরণের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করার ইতিহাস। অর্থাৎ এদিন কাফির-মুশরিকরা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করেছে। কাজেই প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- এদিনের ইতিহাস থেকে হাক্বীক্বীভাবে ইহুদী-খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের ইসলাম বিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব সম্পর্কে শিক্ষা নেয়া এবং বিধর্মীদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া। পাশাপাশি সমস্ত মুসলমান পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড় সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব হলো, পহেলা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুল পালন করা থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকেও বিরত রাখা।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, প্রতি বৎসর ১লা এপ্রিলের নামে বাড়িতে-বাড়িতে, পাড়া-মহল্লায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ে ঠকিয়ে প্রতারণা করে পহেলা এপ্রিল পালন করে থাকে। এ প্রতারণার আনন্দকে তারা পহেলা এপ্রিলের আনন্দ মনে করে থাকে এবং মুখেও তা উচ্চারণ করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন “যে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।” পহেলা এপ্রিলের ইতিহাস আলোচনাকালে তিনি রাজারবাগ শরীফ-এ তিনি এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মুসলমানরা আজ ইলম চর্চা হতে অনেক দূরে। মুসলমানরা নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বড়ই বেখবর। আজ মুসলমানরা নিজেদের স্বর্ণযুগ, সারা বিশ্বব্যাপী তাদের বিস্তীর্ণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুই জানে না। আবার অপরদিকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কাফির-বিধর্মীরা যে মুসলমানদের উপর কতো মর্মান্তিক যুলুম করেছে, নির্মমভাবে শহীদ করেছে সে খবরও মুসলমান জানে না। পহেলা এপ্রিলে এমনি ধরনের এক নির্মম কাহিনী রয়েছে। যাতে লাখ-লাখ মুসলমানের নির্মমভাবে শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এর ইতিহাস হলো- খলীফা ওয়ালিদ তৎকালীন সেনাপতিকে ৭১১ ঈসায়ী সনে স্পেন অভিযানের নির্দেশ দেন। স্পেনে চলছিলো তখন চরম অত্যাচারী রাজা রডারিকের নির্যাতন, সামাজিক বৈষম্য ও ধর্মের নামে অনাচার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মুসলমান হয়েছিলেন। আবার অনেকে রাজার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবার জন্য মুসলমানদের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলো। বর্ণিত আছে যে, অত্যাচারী রাজা রডারিক সিউটা দ্বীপের রাজা ফার্ডিনান্ড জুলিয়ানের দুহিতা ‘ফ্লোরিডার’ শ্লীলতাহানি করায় ক্ষুব্ধ হয়ে জুলিয়ান মুসলিম সেনাপতিকে স্পেন বিজয়ের আমন্ত্রণ জানায়। খলীফা ওয়ালিদের সেনাপতি স্পেন বিজয়ের জন্য হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিযুক্ত করেন এবং মাত্র সাত হাজার সৈন্য দেন। এতো অল্প সৈন্য নিয়ে এতো বিরাট কাজ সম্পাদন কঠিন কল্পনা করে হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কান্নাকাটি এবং দোয়া-মুনাজাত করতে থাকেন। একদিন গভীর রাতে স্বপ্নে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিয়ারত লাভ করেন। রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “হে জিয়াদ! তুমি অগ্রসর হও। চিন্তিত হইও না, তুমিই কামিয়াবী লাভ করবে।” এই মুবারক স্বপ্ন দেখে হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রসর হন। স্পেন পৌঁছা মাত্র তিনি আদেশ দেন তার সব নৌজাহাজ পুড়িয়ে ফেলতে। অতঃপর তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে এক বিশেষ ঈমানদীপ্ত উদ্দীপনাপূর্ণ ও জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। ভাষণে বলেন, “হে মুসলমানগণ! তোমাদের এখন যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। কারণ সব জাহাজ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করে অবশ্যই তোমাদের বিজয় লাভ করতেই হবে ইনশাআল্লাহ।” মুসলমান সৈন্যরা উনার এ ঈমানদীপ্ত জজবাপূর্ণ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন এবং বিজয় লাভ করেন। যালিম রডারিক শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নদীগর্ভে নিমজ্জিত হয়। বিজয়দীপ্ত হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কারমোনার সিডোনিয়া, ইজিসা বিজয় করেন। মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে চারভাগে ভাগ করে মালাগা, গ্রানাডা এবং টলেডোর দিকে প্রেরণ করা হয় এবং গথিক রাজ্যের বহু অঞ্চলে মুসলিম সুশাসন কায়িম হয়। এরপর ৭১২ ঈসায়ী সনে একটি বিশাল মুসলিম বাহিনী স্পেনে আগমন করেন এবং সিডোনিয়া, সেভিল, মেরিডা, তালাভেরা অধিকার করেন। হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মিলিত বাহিনীসহ পর্যায়ক্রমে গ্যালিসিয়া, লিওন, অ্যাস্টুরিয়াস, সারাগোসা, আরাগান, ফ্যাঁলোনিয়া, বার্সিলোনা জয় করে উত্তরে পিরেনীজ পবর্তমালা পর্যন্ত অগ্রসর হন। ৭১২ ঈসায়ী সন হতে ৭১৪ ঈসায়ী সনের মধ্যে যালিম খ্রিস্টান রাজার শোষিত স্পেনের প্রায় সমগ্র অঞ্চল শান্তির দ্বীন ইসলামের সুশীতল পতাকাতলে আসে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এরপর কয়েক শতাব্দী স্পেনে মুসলিম শাসন চললেও একদিকে শাসকরা অনৈসলামিক অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী আমল-আখলাক্বে মত্ত হয়ে উঠে। অপরদিকে মুনাফিক ও ধর্মব্যবসায়ীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ১৪৭০ ঈসায়ী সনের দিকে এ সুযোগকে চরমভাবে গ্রহণ করে মহা যালিম খ্রিস্টান শাসক ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা দম্পতি। তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় তাদের খ্রিস্টান গুপ্তচর ব্যক্তিকে ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার উস্তাদ পদেও ঢুকাতে সক্ষম হয়। সেই সাথে তারা উলামায়ে ‘ছূ’দেরকেও হাত করতে সমর্থ হয়। তারা সবাই ইসলামী আদর্শের উপর অটলতা ছেড়ে ঢিলেঢালা চলার পক্ষে জনমত তৈরি করে। শরাব খাওয়া, গান-বাজনা করা ও শুনা, বেপর্দা হওয়া এবং অবৈধ নারী সম্পর্ককে দোষের নয় বলে প্রচার করে। ফলত, মুসলমান তাদের ঈমানী বল হারিয়ে ফেলে। উলামায়ে ‘ছূ’রা আরো প্রচার করে যে, খ্রিস্টানরা মুসলমানদের শত্রু নয়। এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ধুরন্ধর, যালিম ও শঠ ফার্ডিনান্ড দম্পতি অবশেষে মুসলমানদের থেকে পর্যায়ক্রমে স্পেন ছিনিয়ে নেয়। তারা প্রথমে আল হামরা দুর্গের পতন ঘটায়। এরপর গ্রানাডা তুলে দিতে বলে। কিন্তু দিশেহারা, ঈমানহারা, বিভ্রান্ত মুসলমান মুনাফিক ও উলামায়ে ছূ’দের প্রতারণার কারণে তখন খুব সহজেই তাদের কাছে দেশটা সোপর্দ করে দেয়। এমতাবস্থায় দেশহারা মুসলমান সৈন্যদের সন্ধির শর্ত দিয়ে অস্ত্রমুক্ত হতে বলা হয়। কিন্তু তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি এ সন্ধিকে মরণ শর্ত বুঝতে পেরে সন্ধি শর্তে আবদ্ধ না হওয়ার জন্য স্বপক্ষীয় সৈন্যদল ও জনগণকে এক তেজস্বীনী ভাষণে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ পরিণতির ইঙ্গিত দান করেন। কিন্তু উনার অবশ্যম্ভাবী পতনের আশঙ্কায় মুসলমানগণ উনার এ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের কোনো মর্যাদা দেয়নি। তাই তিনি উপায়ান্তর না দেখে এলাভিরা তোরণ দিয়ে অশ্বারোহণে নগর ত্যাগের সময় ওঁৎ পেতে থাকা দশজন খ্রিস্টান অশ্বারোহীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধ করতে করতে তাদের কয়েকজনকে হতাহত করেন এবং নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হন। অবশেষে শেনিল নদীতে পড়ে চিরশান্তি লাভের অমীয় সুধা পান করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এরপর প্রতারক রাজা ফার্ডিনান্ড আদেশ জারি করে মসজিদগুলোকে নিরাপদ ঘোষণা করে। এ আদেশে আরো বলা হয় যে, যারা মসজিদে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ থাকবে। অসংখ্য স্পেনীয় মুসলমান সরল বিশ্বাসে মসজিদগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে আবদ্ধ হয়। যালিম খ্রিস্টান শত্রুরা মসজিদগুলিকে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় অবশিষ্ট স্পেনীয় মুসলমানদের। আর বাইরে থেকে যালিম খ্রিস্টনরা উল্লাসভরে কৌতুক করে সমস্বরে ঋড়ড়ষ! ঋড়ড়ষ!! (ফুল, ফুল) বলে অট্টহাসি আর চিৎকারে মেতে উঠে। দিনটি ছিলো পহেলা এপ্রিল ১৪৯২ ঈসায়ী সন। অদ্যাবধি প্রতারক খ্রিস্টানরা তাদের সেই শঠতার স্মরণে ধোঁকা বা প্রতারণার দিবস হিসেবে পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’। খ্রিস্টানদের জন্য এদিনটি পালনীয় হলেও মুসলমানদের জন্য ভাষাহীন বেদনাদায়ক। কেননা মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা বর্বর অসভ্য যালিম খ্রিস্টানদের নির্মম প্রতারণায় সমূলে উৎখাত হয়ে ভেসে যায় লাখ লাখ মুসলমানদেরই বুকের তাজা রক্ত স্রোতে।” এটাই হচ্ছে এপ্রিল ফুলের বা পহেলা এপ্রিলের নির্মম ইতিহাস। কাজেই এদিনের ইতিহাস থেকে প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- হাক্বীক্বীভাবে ইহুদী-খ্রিস্টানদের ইসলাম বিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব সম্পর্কে শিক্ষা নেয়া। তাদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া। তাদের প্রতিহতকরণে জজবা পয়দা করা। পাশাপাশি সমস্ত মুসলমান পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড় সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব হলো, পহেলা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুল পালন করা থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকেও বিরত রাখা।
তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net
by Admin
|
posted: Monday, March 26, 2012
|
সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ২৫শে মার্চ ভয়াল কালো রাত পার হয়ে বিগত ৪১ বছর পূর্বে এই দিনে বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য। ২৫ মার্চের রাত বাঙালির জাতীয় জীবনের স্মৃতিতে এক ভয়াল কালোরাত। ১৯৭১ সালের এই রাতের ঘটনা আজো প্রত্যেক বাঙালিকে ভয়ার্ত ও আতঙ্কিত করে তোলে। বাঙালি রক্তে-আগুনে-কামানের গোলায় বিভীষিকাময় এই এক রাতের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। সেই ভয়াল কালোরাতে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির উপর। এটা অবশ্যই কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, ছিল পরিকল্পিত আক্রমণÑ অপারেশন সার্চলাইট। আমরা বাঙালি জাতির সেইসব আত্মত্যাগী বীরদের রূহে ছওয়াব বখশাই এবং ধিক্কার জানাই সে সব নরপশুদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে। ইতিহাসের জঘন্যতম এই গণহত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকরা বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। সমগ্র বাঙালি জাতি সেদিন একদেহ একপ্রাণ হয়ে জেগে উঠেছিল। একটা জাতির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল কামানের মুখে। সমস্ত জাতির ভাষা যে বজ্রকণ্ঠ ধারণ করেছিল সেদিন, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যা, আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চালিয়ে পাক শাসকরা চেয়েছিল বাঙালি জাতিকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরই মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় সর্বত্র। ২৫ মার্চের অন্ধকার চিরে আসে ২৬ মার্চের ভোর, জন্ম নেয় একটি স্বাধীন দেশ। বলাবাহুল্য, আজো আমাদের দেশে স্বাধীনতার ঘোষক কে? তা নিয়ে বিতর্ক হয়। কিন্তু এ বিতর্ক অহেতুক, অমূলক। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট একদিনেই তৈরি হয়নি। এটা তৈরি হয়েছে ’৬৬-এর ৬ দফা থেকে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে। ’৭০-এর নির্বাচন না মেনে নেয়ার প্রেক্ষিত থেকে। আর এসব পটভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সব কিছুর অবিসংবাদিত নেতা তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক প্রতীয়মান হয়। পাশাপাশি বিখ্যাত ৭ মার্চের ভাষণেও উল্লেখ ছিলো- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম... এদেশকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’- এ ভাষণেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিষয় ও ঘটনার তাৎপর্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মঘাতী প্রবণতাই এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিলম্বিত করেছিলো এবং জামাত ও তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা কথিত রাজাকার, আল বাদর, আস্ শামস নামধারী কলঙ্কিত কাহিনীর সূচনা করেছিলো। বলাবাহুল্য, ইসলামের নামে হলেই যে তা ইসলামী নয়- এ ফতওয়ার গুরুত্ব যেমন এখনও আছে তেমনি তখনও ছিলো। পাকিস্তান হয়েছিলো ইসলামের নাম। কিন্তু ইসলামের কিছুই হয়নি। ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও মূল্যবোধ কিছুই প্রচার হয়নি, প্রতিষ্ঠা পায়নি। যা কিছু হয়েছে তা তাদের রাজদ- রক্ষার্থে। যা কিছু হয়ে থাকে তা আমাদের রাজদ- রক্ষার্থে। কিন্তু এ শাসকরা খোদ পাকিস্তান আমলেই কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ-এর খিলাফ করে দাদার সম্পত্তিতে নাতিকে ওয়ারিছ করেছিলো। তিন তালাক দিলে নব্বই দিন পার না হলে তালাক কার্যকর হবে না এবং এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে গেলেও তালাক কার্যকর হবে না বলে অনৈসলামী আইন করেছিলো। পাকিস্তান সৃষ্টির পরদিনই ভাষণে তথাকথিত কায়েদে আযম ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভাষণ দিয়েছিলো। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সে বলেছিলো আজকে থেকে পাকিস্তানে কোনো মুসলমান আর মুসলমান থাকবে না। কোনো হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না। সবাই হয়ে যাবে পাকিস্তানী।’ একই সাথে সে ইসলাম বিরোধী ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঝা-া উড়িয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের লাখ লাখ মালানারা সেদিন তথাকথিত কায়েদে আযমের এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদীর ভাষণের কোনো প্রতিবাদ জানায়নি, প্রতিকার করেনি। এমনকি সত্যি বলতে কিছুই বুঝেনি। বলাবাহুল্য, মালানা সাহেবদের এসব কূপম-ুকতা দেশ-জনগণের জন্য বিরাট অভিশাপ। এদের অজ্ঞতা এদেরকে নফসের কাছে অথর্ব করে তোলে। ফলতঃ এরা হয় নফসের পূজারী। হয় ধর্মব্যবসায়ী। হাদীছ শরীফ-এ ঘোষিত নিকৃষ্ট জীব। এ নিকৃষ্ট জীবরা মুসলমানদের ক্ষতি করে। ইসলামের নামে বদনাম করে। ’৭১-এও তাই করেছিলো। জালিম পাকিদের পক্ষাবলম্বন করেছিলো। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। পাকিদের সাহায্য করে, পাকিদের পথ ধরে এদেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছিলো। সম্পদ লুটেপুটে নিয়েছিলো। কিন্তু এসব মহা অনৈসলামী কাজই তারা করেছিলো ইসলামের নামে। নাঊযুবিল্লাহ! বলাবাহুল্য, এসব যুদ্ধাপরাধীরা আজো ধর্মব্যবসা করে যাচ্ছে ইসলামের নামে। এমনকি তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করে যাচ্ছে ইসলামের নাম। দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর বিচার কেনো? এটাও তাদের খোঁড়াযুক্তি। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই লক্ষ লক্ষ বছর পর বান্দার বিচার করবেন, যা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ বিবৃত হয়েছে। তাও কী তাহলে অন্যায় হবে? নাঊযুবিল্লাহ! মূলত এসব ধর্মব্যবসায়ীরা শুধু ধর্মের নামে অপকর্মকারীই নয়, বরং ধর্ম সম্পর্কে মহাঅজ্ঞও বটে। অজ্ঞ বলেই এরা উপলব্ধি করতে অক্ষম যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা শুধু জায়িযই নয়, বরং কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ফরয-ওয়াজিব। কাজেই বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত অবিলম্বে সব যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার করা। যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গো’আযমের বিচার কাজ অতি শীঘ্রই শুরু করা। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে যে অনাকাঙ্খিত বিলম্ব করছে তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং খুবই অশুভ। পাশাপাশি সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে অনুমোদন দিচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বিশেষ আত্মঘাতী। কাজেই এসব অশুভ ও আত্মঘাতী প্রবণতা ও তৎপরতা থেকে সরকার যতো তাড়াতাড়ি সরে আসবে ততই দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ। মূলতঃ এসব দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net
|
Recent Comments