যারা বলে- ‘সারা বছর নামায নেই, রোযা নেই শুধু শবে বরাতে নামায-রোযা করে কি হবে’- তাদের এ কথা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে এক বিন্দু পরিমাণ বা জাররা পরিমাণ নেকী করবে সে তার বদলা পাবে।’
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘যখন মধ্য শা’বান মাসের রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি এসে যাবে তখন তোমরা সারা রাত্র ইবাদত করো ও দিনে রোযা রাখো।’
তাই প্রত্যেকের উচিত পবিত্র শবে বরাতে সারা রাত্রব্যাপী ইবাদত-বন্দেগী করা ও পরের দিন রোযা রাখা।
যারা বলে- ‘সারা বছর নামায নেই, রোযা নেই শুধু শবে বরাতে নামায-রোযা করে কি হবে’-
তাদের এ কথা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের কুফরীমূলক বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, মুর্শিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন তোমরা বরাতের রাত্রি পাবে তখন তোমরা সারা রাত্রি জেগে-জেগে নামায-কালাম পড়বে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে এসে অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করে ফজর তথা ছুবহে ছাদিক হওয়া পর্যন্ত ঘোষণা দিতে থাকেন- তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কেউ রিযিক প্রার্থী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কেউ বিপদগ্রস্ত আছো কি? তার বিপদ দূর করে দিবো।”

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম ‘তিনি বাইহাক্বী শরীফ’-এর হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “বরাতের রাত্রিতে (আগামী এক বছরে) যে সকল আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ইন্তিকাল করবে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। বান্দা-বান্দি উনাদের (এক বছরের) রিযিকের ফায়ছালা করা হয় এবং বান্দা-বান্দি উনাদের (বিগত এক বছরের) আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয়।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া কবুল হয়। রজবের প্রথম রাত্র, মধ্য শাবানের রাত্র বা ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্র, ক্বদরের রাত্র এবং দু’ঈদের দু’রাত্র।” সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি শা’বান মাসের রোযা সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসে তিনটি রোযা রাখবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “শা’বান মাসের পনের তারিখ যে রোযা রাখবে, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।” সুবহানাল্লাহ!
আরো ইরশাদ হয়েছে, “শা’বান মাসের রোযার ইফতারীর সময় যে তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার পূর্বের গুনাহখাতা ক্ষমা করা হবে এবং রিযিকে বরকত দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হাদীছ শরীফ-এ শবে বরাতে ইবাদত-বন্দেগী করার ও দিনে রোযা রাখার অসংখ্য সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও কিছু গুমরাহ লোক সাধারণ মানুষদেরকে উক্ত রাতে ইবাদত করতে নিরুৎসাহিত করে বলে থাকে যে- ‘সারা বছর নামায নেই, রোযা নেই, ইবাদত-বন্দিগী নেই; শুধু শবে বরাতে নামায-কালাম পড়ে ও রোযা রেখে কী হবে’ তাদের এ কথা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, যে যতটুকু নেক আমল করবে সে ততটুকুরই ফায়দা পাবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যে এক বিন্দু পরিমাণ বা জাররা পরিমাণ নেকী করবে সে তার বদলা পাবে।” তাহলে এটাতে বাধা দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে ফিরিয়ে দেয়া। এটা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যদি এ পবিত্র বরাতের রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কবুল করে নেন তাহলেই তো সে কামিয়াব হয়ে গেলো।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পূর্ববর্তী যামানার একটি বিশেষ রাতের ফযীলতের কথা বর্ণনা করে বলেন, পূর্ববর্তী যামানার উম্মতদেরকে ক্ষমা করার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশেষ একটি রাত্রি দিয়েছিলেন। একবার সেই বিশেষ রাতটি যখন আসলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বলে পাঠালেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আজকে রহমতের রাত্রি, বরকতের রাত্রি, মাগফিরাতের রাত্রি। আপনি যমীনে গিয়ে দেখে আসেন আমার বান্দা-বান্দিরা কে কি অবস্থায় রয়েছে? হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম তিনি সারা যমীন ঘুরে বান্দা-বান্দিদের অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনাকে জানালেন, বারে ইলাহী! আপনার বান্দা-বান্দিদের জন্য আফ্সুস! সমস্ত বান্দা-বান্দিরা ঘুমিয়ে রয়েছে। কেবল এক হিন্দু ঠাকুর, সে এক মন্দিরে মূর্তির সামনে বসে ছনম ছনম অর্থাৎ মূর্তি মূর্তি বলে জপছে। সে হিন্দু ঠাকুরের গলায় পৈতা, পরনে ধুতি, মাথায় টিকি। বারে ইলাহী! আপনি যদি ইজাযত দেন তাহলে আমি সেই হিন্দু ঠাকুরকে মন্দির ও মূর্তিসহ উল্টিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দিয়ে আসি। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! অপেক্ষা করুন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন।

পরবর্তী বৎসর আবার যখন সেই রহমতের রাত্রি, বরকতের রাত্রি, মাগফিরাতের রাত্রি আসলো তখন পুনরায় মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! এবারও যমীনে গিয়ে দেখে আসুন বান্দা-বান্দিরা কে কি অবস্থায় রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পেয়ে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সারা যমীন ঘুরে এসে মহান আল্লাহ পাক উনাকে জানালেন, বারে ইলাহী! আপনার বান্দা-বান্দিদের জন্য আফ্সুস! এবারও সমস্ত বান্দা-বান্দিরাই ঘুমিয়ে আছে। তবে একজন বান্দা উনাকে পাওয়া গেছে ইয়া আল্লাহ পাক! যে এক ইবাদতখানায় বসে আপনার নাম মুবারক ‘ছমাদ’ (বেনিয়াজ) ‘ছমাদ’ (বেনিয়াজ) বলে যিকির করছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি কি সেই বান্দা উনাকে চিনতে পেরেছেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, বারে ইলাহী! আপনার লক্ষ-কোটি বান্দাদের মধ্যে সবাইকে তো আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনার কি স্মরণে আছে সেই হিন্দু ঠাকুরের কথা! যাকে আপনি মন্দির ও মূর্তিসহ উল্টিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, বারে ইলাহী! সেই কথা তো আমার স্মরণে আছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, এই বান্দা তো সেই বান্দা। হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম তিনি বললেন, বারে ইলাহী! সেই বান্দা এখানে কি করে আসলো? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, সেই রহমতের রাত্রিতে, বরকতের রাত্রিতে, মাগফিরাতের রাত্রিতে হিন্দু ঠাকুরের জবান পিছলিয়ে হঠাৎ ছনমের পরিবর্তে সে একবার ‘ছমাদ’ বলে ফেলেছিলো আর তৎক্ষণাৎ আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বলেছিলাম, লাব্বাইকা ইয়া আবদী- হে আমার বান্দা তুমি কোথায়! তোমার বয়স নব্বই হয়ে গেছে। পিঠ বাঁকা হয়ে গেছে। আর কতকাল তুমি ছনম ছনম (মূর্তি মূর্তি) বলে ডাকবে? তোমার মূর্তি তো একবারের জন্যেও তোমার ডাকে সাড়া দেয়নি। কাজেই, তুমি তওবা করে ফিরে আসো। তখন সে বান্দা তওবা করে মূর্তিকে আছাড় দিয়ে ভেঙে মন্দির থেকে বের হয়ে গলার পৈতা ছিঁড়ে, মাথার টিকি কেটে, ধুতি পাল্টিয়ে লুঙ্গি, কোর্তা, টুপি, পাগড়ী পরিধান করে ইবাদতখানায় প্রবেশ করে ‘ছমাদ’ ‘ছমাদ’ যিকিরে মশগুল হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা কোন নেক কাজকে ছোট মনে করো না বা কোন নেকীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করো না।” কাজেই ‘সারা বছর নামায পড়ে না, রোযা রাখে না, এখন শবে বরাতে একদিন নামায-কালাম পড়ে কি হবে’ এরূপ কথা বলে পবিত্র শবে বরাতে ইবাদত-বন্দেগী থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা, নিরুৎসাহিত করা যা কাট্টা হারাম ও কুফরী হবে। অর্থাৎ নেক কাজকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, অবজ্ঞা করা, ছোট মনে করা গুমরাহী, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি কবুল করে নেন তাহলে ছোটটাই বড় হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে বাতিল ফিরক্বার লোকেরা আরেকটা কাজ করে থাকে, তা হলো তাড়াতাড়ি ইশার নামায পড়েই মসজিদ বন্ধ করে দেয়। নাউযুবিল্লাহ! অথচ মসজিদগুলো খোলা রাখা উচিত ছিল। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “ওই ব্যক্তির চাইতে বড় জালিম কে? যে মসজিদে মানুষকে ইবাদত-বন্দিগী, যিকির-ফিকির করতে বাধা দেয় এবং বিরান করার জন্য সাহায্য করে।”

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলেন, “তোমরা নেকীতে, পরহেযগারীতে সাহায্য করো, শত্রুতা ও পাপের মধ্যে সাহায্য করো না।” কাজেই বরাতের রাতে ইবাদতকারীকে বাধা দিলে তারা তো নেক কাজে সাহায্যকারী হলোই না বরং তারা বদ কাজে সাহায্যকারী হলো। আর মসজিদ বন্ধ করে রাখার কারণে, মসজিদ বিরান করার দায়ে দায়ী হয়ে তারা জালিমের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই এ সমস্ত জাহিল, মূর্খ, ওহাবী, সালাফী, জামাতী, দেওবন্দী, মওদুদী, তাবলীগী বাতিল ফিরক্বার লোকদের থেকে এবং তাদের গুমরাহীমূলক বক্তব্য থেকে সকলকে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।
-০-
তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment