মহান স্বাধীনতার দিবসের তাৎপর্য প্রতিফলনে ঘাতক গো’আযমসহ অবিলম্বে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।


সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ২৫শে মার্চ ভয়াল কালো রাত পার হয়ে বিগত ৪১ বছর পূর্বে এই দিনে বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য।
২৫ মার্চের রাত বাঙালির জাতীয় জীবনের স্মৃতিতে এক ভয়াল কালোরাত। ১৯৭১ সালের এই রাতের ঘটনা আজো প্রত্যেক বাঙালিকে ভয়ার্ত ও আতঙ্কিত করে তোলে। বাঙালি রক্তে-আগুনে-কামানের গোলায় বিভীষিকাময় এই এক রাতের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। সেই ভয়াল কালোরাতে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির উপর। এটা অবশ্যই কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, ছিল পরিকল্পিত আক্রমণÑ অপারেশন সার্চলাইট। আমরা বাঙালি জাতির সেইসব আত্মত্যাগী বীরদের রূহে ছওয়াব বখশাই
এবং ধিক্কার জানাই সে সব নরপশুদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে।
ইতিহাসের জঘন্যতম এই গণহত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকরা বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
সমগ্র বাঙালি জাতি সেদিন একদেহ একপ্রাণ হয়ে জেগে উঠেছিল। একটা জাতির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল কামানের মুখে। সমস্ত জাতির ভাষা যে বজ্রকণ্ঠ ধারণ করেছিল সেদিন, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যা, আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চালিয়ে পাক শাসকরা চেয়েছিল বাঙালি জাতিকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরই মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় সর্বত্র।
২৫ মার্চের অন্ধকার চিরে আসে ২৬ মার্চের ভোর, জন্ম নেয় একটি স্বাধীন দেশ।
বলাবাহুল্য, আজো আমাদের দেশে স্বাধীনতার ঘোষক কে? তা নিয়ে বিতর্ক হয়। কিন্তু এ বিতর্ক অহেতুক, অমূলক। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট একদিনেই তৈরি হয়নি। এটা তৈরি হয়েছে ’৬৬-এর ৬ দফা থেকে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে। ’৭০-এর নির্বাচন না মেনে নেয়ার প্রেক্ষিত থেকে। আর এসব পটভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সব কিছুর অবিসংবাদিত নেতা তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক প্রতীয়মান হয়।
পাশাপাশি বিখ্যাত ৭ মার্চের ভাষণেও উল্লেখ ছিলো- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম... এদেশকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’- এ ভাষণেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিষয় ও ঘটনার তাৎপর্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মঘাতী প্রবণতাই এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিলম্বিত করেছিলো এবং জামাত ও তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা কথিত রাজাকার, আল বাদর, আস্ শামস নামধারী কলঙ্কিত কাহিনীর সূচনা করেছিলো।
বলাবাহুল্য, ইসলামের নামে হলেই যে তা ইসলামী নয়- এ ফতওয়ার গুরুত্ব যেমন এখনও আছে তেমনি তখনও ছিলো। পাকিস্তান হয়েছিলো ইসলামের নাম। কিন্তু ইসলামের কিছুই হয়নি। ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও মূল্যবোধ কিছুই প্রচার হয়নি, প্রতিষ্ঠা পায়নি। যা কিছু হয়েছে তা তাদের রাজদ- রক্ষার্থে।
যা কিছু হয়ে থাকে তা আমাদের রাজদ- রক্ষার্থে। কিন্তু এ শাসকরা খোদ পাকিস্তান আমলেই কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ-এর খিলাফ করে দাদার সম্পত্তিতে নাতিকে ওয়ারিছ করেছিলো। তিন তালাক দিলে নব্বই দিন পার না হলে তালাক কার্যকর হবে না এবং এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে গেলেও তালাক কার্যকর হবে না বলে অনৈসলামী আইন করেছিলো।
পাকিস্তান সৃষ্টির পরদিনই ভাষণে তথাকথিত কায়েদে আযম ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভাষণ দিয়েছিলো। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সে বলেছিলো আজকে থেকে পাকিস্তানে কোনো মুসলমান আর মুসলমান থাকবে না। কোনো হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না। সবাই হয়ে যাবে পাকিস্তানী।’ একই সাথে সে ইসলাম বিরোধী ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঝা-া উড়িয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের লাখ লাখ মালানারা সেদিন তথাকথিত কায়েদে আযমের এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদীর ভাষণের কোনো প্রতিবাদ জানায়নি, প্রতিকার করেনি। এমনকি সত্যি বলতে কিছুই বুঝেনি।
বলাবাহুল্য, মালানা সাহেবদের এসব কূপম-ুকতা দেশ-জনগণের জন্য বিরাট অভিশাপ। এদের অজ্ঞতা এদেরকে নফসের কাছে অথর্ব করে তোলে। ফলতঃ এরা হয় নফসের পূজারী। হয় ধর্মব্যবসায়ী। হাদীছ শরীফ-এ ঘোষিত নিকৃষ্ট জীব।
এ নিকৃষ্ট জীবরা মুসলমানদের ক্ষতি করে। ইসলামের নামে বদনাম করে। ’৭১-এও তাই করেছিলো। জালিম পাকিদের পক্ষাবলম্বন করেছিলো। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। পাকিদের সাহায্য করে, পাকিদের পথ ধরে এদেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছিলো। সম্পদ লুটেপুটে নিয়েছিলো। কিন্তু এসব মহা অনৈসলামী কাজই তারা করেছিলো ইসলামের নামে। নাঊযুবিল্লাহ!
বলাবাহুল্য, এসব যুদ্ধাপরাধীরা আজো ধর্মব্যবসা করে যাচ্ছে ইসলামের নামে। এমনকি তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করে যাচ্ছে ইসলামের নাম। দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর বিচার কেনো? এটাও তাদের খোঁড়াযুক্তি।
অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই লক্ষ লক্ষ বছর পর বান্দার বিচার করবেন, যা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ বিবৃত হয়েছে। তাও কী তাহলে অন্যায় হবে? নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত এসব ধর্মব্যবসায়ীরা শুধু ধর্মের নামে অপকর্মকারীই নয়, বরং ধর্ম সম্পর্কে মহাঅজ্ঞও বটে। অজ্ঞ বলেই এরা উপলব্ধি করতে অক্ষম যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা শুধু জায়িযই নয়, বরং কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ফরয-ওয়াজিব।
কাজেই বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত অবিলম্বে সব যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার করা। যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গো’আযমের বিচার কাজ অতি শীঘ্রই শুরু করা।
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে যে অনাকাঙ্খিত বিলম্ব করছে তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং খুবই অশুভ। পাশাপাশি সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে অনুমোদন দিচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বিশেষ আত্মঘাতী।
কাজেই এসব অশুভ ও আত্মঘাতী প্রবণতা ও তৎপরতা থেকে সরকার যতো তাড়াতাড়ি সরে আসবে ততই দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ।
মূলতঃ এসব দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net
Read more ...