যে শব্দ মুসলমানদের ব্যবহার করা উচিৎ নয়


শব্দ ব্যবহারের কুচিন্তায় যোগসাধনের ষড়যন্ত্র ইহুদী খৃষ্টানদের ঐতিহ্যগত প্রবৃত্তি। স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময়ও ইহুদী খৃষ্টানদের এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার ছিল। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, "হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলোনা উনজুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।" (সূরা বাক্বারা ১০৪)
আয়াতের শানে নযুলে বলা হয়েছে, ইহুদীরা রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য "রঈনা" শব্দ ব্যবহার করত যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হল "আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন" যা ভাল অর্থে ব্যবহার হয় আর খারাপ অর্থ হল "হে মূর্খ, হে মেষ শাবক" এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদ দুয়া। ইহুদীরা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। আর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ "রঈনা" শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন তবুও কিছু বলতেন না কেননা আল্লাহু পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না। যেমন কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, "তিনি (হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে মনগড়া কোন কথা বলেন না" (সূরা নজম-৩,৪)
এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহু পাক কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল করে "রঈনা" শব্দের বদলে "উনজুরনা" শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ "রঈনা" শব্দ ভাল-খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহার হলেও "উনজুরনা" শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থে ব্যবহার। তাই যে সকল শব্দের ভাল-খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, সে সকল শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত মুতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহার হয়। তাই মুসলামনদের উচিত নিচের শব্দগুলো পরিহার করা।

(১) আনলাকি থার্টিনঃ ইহুদী খৃষ্টানরা ১৩ কে আনলাকি বলে থাকে কারণ ১৩ সংখ্যার সাথে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক জড়িত। ইংরেজীতে “MUHAMMAD” নাম মুবারকের আদ্যক্ষর হল M, যা ইংরেজী বর্ণমালার ১৩ তম অক্ষর। তাই ইহুদী খৃষ্টানরা বিদ্বেষবশতঃ ১৩ কে অশুভ বা আনলাকি বলে থাকে। এমনকি ইহুদী নাছারাদের প্লেনে, রেলে, জাহাজে, হোটেলে ১৩ নং কোন সিট বা রুম থাকে না কিন্তু মুসলমানদের কাছে ১৩ ই হল শুভ বা লাকি । কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান করা আল্লাহ পাকের নির্দেশ। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সম্মান করবে সে জান্নাতী। আর জান্নাতী হওয়া হলো সৌভাগ্যের লক্ষণ। সে হিসেবে ১৩তম সংখ্যাকে (M) সম্মান ও মুহব্বত করা সৌভাগ্যের বা লাকী হওয়ার বিষয়।
(২) লাকি সেভেনঃ আবার ইহুদী খৃষ্টানরা 7 কে লাকি বলে থাকে। কারণ G ইংরেজী বর্ণমালার ৭তম বর্ণ। তাদের God এর G-এর সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু মুসলামদের নিকট ৭ হল অশুভ বা আনলাকি কারণ God বিশ্বাস করার অর্থ হলো শিরক করা। কারণ God এর রয়েছে Goddess। এতে আল্লাহ পাকের সাথে শরিক করা হয়। যে শিরক করবে সে জাহান্নামী আর জাহান্নামী হওয়াটাই আনলাকি বা বদনছসীবের বিষয়।
(৩) বিশ্ব ব্রহ্মান্ডঃ “বিশ্ব ব্রহ্মান্ড” শব্দটির মধ্যেও ঈমানহানীর ফাঁদ লুকায়িত রয়েছে। কেননা “ব্রহ্মান্ড” শব্দটি এসেছে “ব্রহ্মার আন্ডা” থেকে। বাংলা একাডেমী বিশ্বকোষ মতে, ব্রহ্মা বলতে হিন্দুদের একজন পৌরাণিক দেবতাকে বুঝায়। এই দেবতার আন্ডা(ডিম) রূপে এই ভূমি তথা পৃথিবীকে কল্পনা করে ওরা বলে থাকে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড। তাই এই শব্দ পরিহার করে “কুল-ক্বায়িনাত”, “বিশ্ব”, “পৃথিবী”, “আসমান-যমিন” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে পারি।
(৪) মাংসঃ “মাংস” শব্দটি এসেছে “মায়ের অংশ” শব্দ থেকে। হিন্দুরা গরুকে তাদের মা হিসেবে মান্য করে। তাই গরুর গোশতকে তারা মায়ের অংশ তথা মাংস বলে থাকে। তাই কোন মুসলমানের উচিত নয় কোন প্রাণীর গোশতকে মাংস বলা।
(৫) ঝোলঃ সাধারণত আমরা যে কোন তরকারীর তরল অংশটুকুকে আমরা “ঝোল” বলে থাকি। কিন্তুরা হিন্দুরা এ শব্দকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে থাকে। হিন্দুরা তাদের তৈরী খাবারকে তাদের পদ্ধতিতে পাক-পবিত্র করার জন্য গরুর গোবর ও প্রসাব মিশ্রিত তরল পদার্থ দিয়ে থাকে। হিন্দুরা এই তরল পদার্থকে “ঝোল” বলে থাকে। তাই মুসলমানদের উচিৎ ঝোল না বলে “সুরুয়া” বা “সূরবা” বলা।
(৬) বিসমিল্লায় গলদঃ আমরা শুরুতেই ভুল এই কথাটি প্রকাশ করতে গিয়ে বলে থাকি, “বিসমিল্লায় গলদ”। কিন্তু সূক্ষভাবে বিচার করলে এর অর্থ দাঁড়ায় “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম-এ ভুল” অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এ ভুল। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)। তাই এই শব্দ কোন মুসলমানের ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়।
(৭) কষ্ট করলে কেষ্ট মেলেঃ “কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে” এই প্রবাদটি মুসলমানরা হরহামেশাই ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কোন মুসলমানই জানে না এই “কেষ্ট” হচ্ছে হিন্দুদের একটি দেবতার নাম। তাই এ প্রবাদ ব্যবহার করা উচিত নয়।
(৮) ধান ভানতে শিবের গীতঃ “ধান ভানতে শিবের গীত” এই প্রবাদটিও মুসলমানের ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ “শিব” হিন্দুদের দেবতার নাম আর “গীত” বা গান মুসলমানের জন্য হারাম।
(৯)Rx: সব ডাক্তারাই রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে “Rx” লিখা থাকে। অথচ “Rx” অর্থ হল “Referred To Jesus Christ” অর্থাৎ প্রভু যিশু সমীপে সোপর্দ করে। নাছারাদের “প্রভু যিশু”-এর কাছে আত্ননিবদনের পক্রিয়া অনুসরণের কারণে ঈমান হারিয়ে যে কাট্টা কাফির, মুরতাদ পরিণত হতে হয়, তা মুসলমান ডাক্তারদের ভোঁতা মগজে নেই।
(১০) Md/Mohd: অনেকে তাদের নামের Muhammad শব্দটিকে সংক্ষেপে Md. অথবা Mohd. লিখে থাকে। আর এই সংক্ষিপ্তকরণের মাধ্যমে একদিকে মুসলমানেরা নিজেরাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারককে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে, আবার এর ফলে ইহুদী-নাছারারাও এটি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সুযোগ পাচ্ছে। যেমন- সংক্ষিপ্তাকারে লিখিত Md. অথবা Mohd. কে তারা প্রচার করছে Mouth of Dog বলে।(নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক) তাই Md. বা Mohd. পরিহার করতে হবে।
(১১) Mecca: এমনিভাবে মুসলমানেরা মক্কা শব্দটি ইংরেজীতে Mecca লিখে থাকে। অথচ এই শব্দ দ্বারা ইহুদী-নাছারারা Bar অর্থাৎ শরাবখানা বুঝিয়ে থাকে। তাই মুসলমানদের উচিত Mecca না লিখে Makkah লিখা।
(১২)Mosque: একইভাবে মুসলমানেরা মসজিদ শব্দটিকে ইংরেজীতে Mosque লিখে থাকে। অথচ এই শব্দ দ্বারা ইহুদী-নাছারারা House of Mosquito অর্থাৎ মশার ঘর বুঝিয়ে থাকে। তাই মুসলমানদের উচিত Mosque না লিখে Masjid লিখা।
(১৩) মৌলবাদীঃ মৌলবাদ শব্দের অর্থ হলো “যে কোন ধর্ম বা মতবাদের মূলতত্ত্ব, মৌলিক বা মূল বিষয়সমূহ অথবা মৌলিক বা মূল মতবাদসমূহ”। আর ব্যবহারিক অর্থে ধর্মান্ধ চরমপন্থী আমেরিকান খৃষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের বাইবেল সম্পর্কীয় মতবাদকে মৌলবাদ বলে এবং এ অর্থেই এটা ব্যাপকভাবে পরিচিত। আর এই ধর্মান্ধ চরমপন্থী আমেরিকান খৃষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্ট সম্প্রদায়ই মৌলবাদী বলে পরিচিত। কাজেই মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলা বা মুসলমানগণ নিজেদেরকে মৌলবাদী বলে দাবী করা কখনো কোন মতেই শরীয়তসম্মত হবে না। কারণ এটা খৃষ্টানদের শেয়ার বা চিহ্ন বা আলামত মৌলবাদ।
(১৪) গুণকীর্তনঃ “গুণকীর্তন” শব্দটিও মুসলমানদের পরিহার করা উচিত। কারণ গুণ শব্দের সঙ্গে কীর্তন শব্দ রয়েছে যা হিন্দুদের এক ধরনের গান। তাই মুসলমানরা প্রসংশা করা বলতে পারে।
(১৬) ইসলামিক রাষ্ট্রঃ ইসলাম একটি পুনাঙ্গ দ্বীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রের ধারণার উৎপত্তিস্থল হলো গ্রিসে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত যত মতবাদ সব বিধর্মী মতবাদ। আর রাষ্ট্রের সংজ্ঞা হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। ১. নির্দিষ্ট ভূখন্ড ২. জনসমষ্টি ৩. সার্বভৌমত্ব ৪. সরকার। রাষ্ট্রের এ সংজ্ঞার মাঝে ইসলাম নির্দিষ্ট ভূখন্ড,জনসমষ্টি এবং কথিত রাষ্ট্রীয় সরকার বা সংবিধান এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা কোনটাই স্বীকার করে না। সুতরাং ইসলামে কখনই ইসলামিক রাষ্ট্র বলে কোন শব্দ নেই। তবে খিলাফত ব্যবস্থা ইসলামে রয়েছে।
(১৬) ওরসঃ “ওরস” শব্দের আভিধানিক অর্থ “ওলীমা বা বিবাহের খানা, জিয়ারত, বিবাহের দাওয়াত, বাসর যাপন” ইত্যাদি। পারিভাষিক ও রূপক অর্থ “কোন আউলিয়া-ই-কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের ইন্তকালের দিন ফাতিহা পাঠ উপলক্ষ্যে খাওয়া, ওয়াজ-মাহ্‌ফিল, মীলাদ-ক্বিয়াম ইত্যাদির ব্যবস্থা করা”। পূর্ববর্তী যামানায় ওরস শব্দ ব্যবহার করাকে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ দোষণীয় মনে করেননি। কিন্তু পরবর্তী যামানায় ওরসের নাম দিয়ে বেপর্দা, বেহায়াপনা, গান-বাজনা, মেলা ইত্যাদি বেশরীয়তী কাজ করার কারণে পরবর্তী যামানার হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নেক বা দ্বীনী কাজে ওরস শব্দ ব্যবহার করা না করে “ঈসালে সাওয়াব” বা “সাওয়াব রেসানী” শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
(১৭) লাউঃ কদু হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় খাবার। অনেকে কদুকে লাউ বলে থাকে। কিন্তু লাউ শব্দের খারাপ অর্থ আছে বিধায় কুদকে লাউ বলা মুসলমানদের উচিত নয়।
Read more ...

এপ্রিল ফুল


"এপ্রিল ফুল" বাক্যটা মূলত ইংরেজী। অর্থ এপ্রিলের বোকা। এপ্রিল ফুল ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। প্রতি বছর পহেলা এপ্রিল এলেই একে অপরকে বোকা বানানো এবং নিজেকে চালাক প্রতিপন্ন করার জন্য এক শ্রেণীর লোকদের বিশেষভাবে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। বলা বাহুল্য যে তারা অপরকে বোকা বানিয়ে নিজেরা আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, সরল প্রাণ মুসলমানগণ ধোকা-বাজির করুন শিকারে উপণীত হয়েছিল একদিন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ মুসলিম জাতির এক শ্রেণীর লোকেরা সে ইতিহাস ভুলে গিয়ে এপ্রিলের দিনটিকে স্বাচ্ছন্দে অংশ গ্রহণ করছেন এবং প্রচুর কৌতুক ও রসিকতা উপভোগ করছেন।

৭১১ উমাইয়া শাসনামলে বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিয়াদ মুসলিম নৌবহর ভূমধ্য সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন যে, হে মুসলিম বাহিনী! তোমাদের সম্মুখে শত্রুসেনা এবং পশ্চাতে ভূমধ্য সাগরের উত্তাল তরঙ্গ মালা, তোমরা কি ভূমধ্য সাগরে ডুবে নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করতে চাও? নাকি অত্যাচারি স্পেনীয় শাসক রডারিকের দুঃ শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ করে ইসলামের বিজয় নিশান স্পেনের বুকে উড়াতে চাও। যদি তাই হয় তাহলে সামনে অগ্রসর হও। এই রক্তস্তব্দ বক্তব্যের পর মুসলমানগণ মহান প্রজ্ঞাময় আল্লাহ পাক-এর নামে রডারিকের রণসম্ভারে সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ছিল এবং কেড়ে নিয়ে ছিল স্পেন। গড়ে উঠেছিল গ্রানাডার কর্ডোভায় ৮০০ বছরের আলোড়ন সৃষ্টিকারী সভ্যতা। কিন্তু মুসলিম শাসকরা যখন কুরআন শরীফ ও সুন্নাহর কথা একেবারে ভুলে গিয়ে জন-সাধারণের সুখ-শান্তির মূলে পদাঘাত করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয় তখন তারা হারিয়ে ফেলে ইসলামী চেতনা। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগে খৃস্টান নৃপাতরা চারিদিকে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত হতে থাকে এবং ঘোষণা করে যে পিরোনিজ পর্বতমালা অতিক্রমকারী দুধর্ষ মুসলিম বাহিনীকে যদি হটানো না যায়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে ইউরোপের সকল গীর্জা থেকে মুসলমানদের আজান ধ্বনী শোনা যাবে। এই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা পার্শ্ববর্তী রাজ্যের খৃস্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ডের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং উভয় নেতৃত্ব দেয় খৃস্টান বাহিনীর। একের পর এক স্পেনের অধিকাংশ এলাকা খৃস্টানদের দখলে চলে যায়। মুসলিম বাহিনী তখন উপায়ন্তর না পেয়ে আশ্রয় নেয় রাজধানী গ্রানাডায়। অবশেষে ফার্ডিন্যান্ড বাহিনীও গ্রানাডার দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছে যায়। মুসলিম বাহিনী তখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করে যে, "মুসলমানগণ যদি শহরের প্রবেশ দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়ে এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করে, তবে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্ত করা হবে"। অসহায় মুসলমানগণ আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা ভুলে গিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়, এবং তাদের কথা অনুযায়ী মসজিদে আশ্রয় নেয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কুখ্যাত ফার্ডিন্যান্ড মসজিদের চারি পার্শ্বে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলমানদেরকে হত্যার মাধ্যমে বিশ্বাস ঘাতকতার পরিচয় দেয় এবং রক্তে রঞ্জিত করে গ্রানাডার রাজপথ এবং তাদেরকে জোরপূর্বক খৃস্টান বানায়। যে দিন এ সব নির্মম নৃশংসতা কর্মকান্ড করে ছিল, সে দিন ছিল "১লা এপ্রিল ১৪৯২ সাল"। ফার্ডিন্যান্ড সে দিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে ছিল "হায় মুসলমান! এপ্রিল ফুল, তোমরা এপ্রিলের বোকা।" স্পেনীয়দের দ্বারা মুসলমানদের বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকতা বা শঠতা স্মরণীয় রাখার জন্য খৃস্টান জগৎ প্রতি বছর ১লা এপ্রিল খেলে থাকে রসিকতার খেলা, যে খেলা আমাদের কাছে বড় করুণের বড় বেদনার।

ইতিহাসের হৃদয়বিদারক ঘটনা ভুলে না গেলে এপ্রিল ফুল কোনো মুসলিমকে আনন্দ দান করতে পারে না। এখন আমরা কি পয়লা এপ্রিল হাসি-আনন্দের সাথে "এপ্রিল ফুল ডে" উদযাপন করব, নাকি ইউরোপের বুকে অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ, শিশুদের নৃশংস হত্যাকান্ডের স্মরণে দুঃখ অনুভব করব, মুসলিম ভাই-বোনেরা ভেবে দেখবেন কি?

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ইসলামী দৃষ্টিকোণে সবচেয়ে ঘৃণিত হচ্ছে হাসি-মসকরাচ্ছলে মিথ্যা বলা। অনেকে ধারণা করে যে হাসি-রসিকতায় মিথ্যা বলা বৈধ। আর এ থেকেই বিশ্ব ধোঁকা দিবস বা এপ্রিল ফুলের জন্ম। এটা ভুল ধারণা, এর কোন ভিত্তি নেই ইসলাম ধর্মে। রসিকতা কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আমি রসিকতা করি ঠিক, তবে সত্য ব্যতীত কখনো মিথ্যা বলি না"। (তাবরানী ১২/৩৯১; ছহীহুল জামে হা/২৪৯৪)।
আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা একদা বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহু! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো আমাদের সঙ্গে রসিকতা করেন। তিনি বললেন, আমি সত্য ভিন্ন কিছু বলি না। (তিরমিযী শরীফ)।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন তথা একে অন্যকে বোকা বানিয়ে, মিথ্যা বলে আনন্দ লাভ করার প্রচেষ্টা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের পরিপন্থী। সুতরাং এ থেকে আমাদের বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
Read more ...

পহেলা বৈশাখ


মুঘল সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ ঈসায়ীতে হিজরী সনের পরিবর্তে ফসলী সন প্রবর্তন করে । পরবর্তীতে ১৫৮৪ ঈসায়ীর ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাঙলা সন বা বঙ্গাব্দ হিসেবে গণনা শুরু হয়। আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের প্রথম খবর পাওয়া যায় ১৯১৭ ঈসায়ীতে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। পহেলা বৈশাখে হালখাতা পূজা নামে হিন্দুদের আলাদা উৎসব রয়েছে, রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তি, শিবপূজা, রয়েছে লোমহর্ষক চরক পূজা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্রজাতিস্বত্তা রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উৎসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। বর্তমানে তিনটি জাতিস্বত্ত্বা একত্রে এই উৎসবটি পালন করে। যৌথ এই উৎসবের নাম বৈসাবি। উৎসবের নানা দিক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মারমাদের পানি উৎসব। অথচ আজকে মুসলমান সমাজ পহেলা বৈশাখ পালন করছে, বৈশাখী মেলায় যাচ্ছে, বেপর্দা হচ্ছে, ইলিশ-পান্তা খাচ্ছে। তারা একবারও ফিকির করলো না যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসের কোথাও বছরের প্রথম দিন (হোক সেটা বাংলা সন কিংবা আরবী সন) পালন করার কথা উল্লেখ নেই বরং এটা পালনের মাধ্যমে মুসলমানরা হিন্দু-বৌদ্ধেরই অনুসরণ করেছে।(নাউযুবিল্লাহ্‌) অন্যদিকে এটা হিজরী সনকে ধ্বংসের নীল নকশায় শামিলের নামান্তার। আবার, কতিপয় তথাকথিত বাংলা সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ পহেলা বৈশাখকে বাঙলী ঐতিহ্য বলে বুলি আউড়ায়। অথচ বাঙলা সন প্রবর্তনের মুল হোতা সম্রাট আকবর একজন মোঙ্গলীয়ান, তাই এটা বাঙলীর এতিহ্য নয়। আবার তারা পহেলা বৈশাখকে হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে থাকে, অথচ সম্রাট আকবরের মাতৃভাষা ছিল ফার্সি। উপমহাদেশে বাঙলা ভাষা প্রবর্তিত হয় ১৮৩৬ ঈসায়ীতে। এর পূর্বে এখানে ফার্সি ভাষা প্রচলিত ছিল। ইংরেজ জলদস্যূরা এদেশ দখল করে এখানে ফার্সি ভাষার পরিবর্তে বাঙলা ভাষা প্রবর্তন করে। আর এ উপমহাদেশে বাঙলা ভাষার এখনো ২০০ বছরও পূর্ণ হয়নি।
Read more ...