ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো বর্তমানে ভাষা শহীদদের প্রয়োজন এবং তার বিপরীতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ফুলে ফুলে ঢেকে দেয়া প্রসঙ্গে



সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
গতকাল প্রায় সব পত্রিকার প্রধান লিড নিউজ ছিল “শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ।” আর ক্যাপশন ছিল মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলে ফুলে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
পত্রিকান্তরে রিপোর্ট হয়েছে, “অমর একুশে তথা মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল বাণিজ্য ছিল রমরমা। এ উপলক্ষে রাজধানীর অলিগলিতে বসেছিল ফুলের দোকান। দশগুণ বেশি দামে ফুল কিনেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করেনি ভাষাপ্রেমিক নাগরিকরা। এসব ফুলের ক্রেতা-বিক্রেতার অধিকাংশই ছিল তরুণ-তরুণী ও কোমলমতি শিশু। ধারণা করা হয়, রাজধানীতেই ফুল বাবদ কয়েক কোটি টাকা হাত বদল হয়েছে।”
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করলে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাতে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জববারসহ অনেকেই শহীদ হন। শহীদদের এই রক্ত বৃথা যায়নি। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী তাদের দাবি মেনে নেয়। সে দিন থেকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে এ দিনটি পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকারের দাবির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ এ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এ দিবসে তাদের স্মরণে তৈরি মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল নিবেদন করা হয়। এ দিবসকে কেন্দ্র করে সারাদেশে কোটি কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়ে থাকে। পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে উঠে হাজার হাজার অস্থায়ী ফুলের দোকান। স্থায়ী দোকানগুলোতে সারাবছরই ফুল বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এ দিবসে সারাদেশে অতিরিক্ত ফুলের চাহিদা দেখা দেয়াতে পাড়া-মহল্লায় এসব অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠে। রাজধানীতে অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকাতে এখানে এ দিবসটি বেশি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে থাকে।
জানা গেছে, রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, স্কুল, মাদরাসা, কিন্ডার গার্টেন, সামাজিক সংগঠনসহ প্রায় ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের ভাষা প্রেমীরা। নগরীর প্রতিটি মহল্লায় একাধিক অস্থায়ী ফুলের দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানিরা গত শনিবার থেকে রাজধানীর পাইকারি ফুলের বাজার থেকে ফুল সংগ্রহ করেন। তবে তাদের ফুল বিক্রি শুরু হয় গত সোমবার থেকে।
উল্লেখ্য, ‘শহীদ’ একটি উঁচু ধারার ইসলামী সংবেদনশীল শব্দ। মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় যারা জিহাদ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে তাঁদেরকেই শহীদ বলা হয়। অর্থাৎ তাঁরাই হচ্ছেন প্রকৃত শহীদ। এছাড়া যাঁরা রয়েছে তাঁরা শহীদী দরজা হাছিল করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রকৃত শহীদগণ সম্পর্কে ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় গিয়ে যারা শহীদ হয় তাঁদেরকে মৃত বলোনা। তাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে রিযিক পেয়ে থাকে।” (সুবহানাল্লাহ!)
তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, মাতৃভাষাকে মুহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ। সুতরাং মাতৃভাষা রক্ষার্থে যারা জীবন দিয়েছে তারাও নিঃসন্দেহে শহীদের অন্তর্ভুক্ত। তবে তাদেরকে ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত ভাবা চলবেনা। তারা জীবিত। এবং জীবিত মানুষের মতই তাঁদের প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসা জানাতে হলে তাঁদের প্রয়োজনের দিকটি সর্বাগ্রে মূল্যায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, ইসলামে বলা হয়েছে যে কোন ব্যক্তির ইন্তিকালের পর তার নেক কামাইয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনিটি ব্যতীত। এক. নেককার উত্তরাধিকারী। তারা যা দোয়া করে। দুই. নেক উসিলা। যথা পীর ছাহেব ক্বিবলা, মুরীদ এবং ওস্তাদ ছাত্র ইত্যাদি। তিন. নেক কাজ। যথা- রাস্তাঘাট, সেতু, হাসপাতাল, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বলা আবশ্যক যে, ভাষা শহীদদেরকে বর্তমানে সত্যিকার অর্থে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে হলে তাঁদের প্রতি কুরআন শরীফ খতম, দান খয়রাত, নফল রোযা, মীলাদ শরীফ-এর ইত্যাদি করে তাঁদের রূহ মুবারক-এ ছওয়াব বখশিয়ে দিতে হবে।
বিপরীত দিকে শুধুই ফুল দিয়ে কবর আচ্ছাদন করা মূলত: শহীদদের কোন উপকারে আসেনা। এটা হয়ে যায় বর্তমানের একটা প্রথাগত সংস্কৃতি পালন। যে অর্থে আমরা শহীদ বলে স্মরণ করি সে অর্থে কথিত শহীদ মিনারে ফুল অর্পণ পূজার শামিল। মুসলমান দাবি করলে ইসলাম অনুযায়ী তার বিপরীত কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বরং অঞ্জলি শব্দটার অর্থই যেমন পূজা দেয়া তেমনি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি শব্দটাও একই অর্থবোধক।
স্মৃতিস্তম্ভকে ইংরেজিতে বলা হয়- Monument. World book -তে লেখা হয়েছে- monument is a structure usually a building or statue built in memory of a person or an event. অর্থাৎ স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে- একটি অবকাঠামো, যা সাধারণত দালান জাতীয় অথবা মূর্তি, যেটা কোন ঘটনা বা ব্যক্তিকে স্মরণ রাখার জন্য বানানো হয়। এ ধরনের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেবার প্রথা চালু হয়, আমেরিকায় ১৮৬৬ সালে। এ প্রসঙ্গে Encyclopedia america লিখা হয়েছে, The custom of placing flower on the graves of the war dead began on may 1866 in watertoo, New York. অর্থাৎ আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্বেই এ প্রথা সেখানে শুরু হয়। Encyclopedia Britannica -তে লেখা হয়েছে- The custom itself of honouring the graves of the war dead began before the close of the civil war. আর নির্দিষ্ট দিনে এই স্মৃতি প্রক্রিয়া চালু রাখা বা স্মরণীয় দিন চালু রাখাও এই সাথেই প্রবর্তিত হয়। অর্থাৎ স্মরণীয় দিন বা শোক দিবস পালনের প্রথাগত প্রচলনও শুরু হয় আমেরিকাতে। New standard Encyclopreia -তে লিখা হয়েছে- The First official observance of memorial day was at waterloo, New York in 1866. তবে এর আগেই আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে কিছু মেয়েরা স্মৃতি দিবস পালন ও ফুল দেবার সংস্কার চালু করেছিল বটে। এবং ১৯৭১ সালের পূর্বে ৩০শে মে তারিখে এই স্মরণীয় দিন পালন করা হতো। কিন্তু তারপরে তা মে মাসের শেষ বুধবারকে ধার্য করা হয় এবং আগে কেবল গৃহযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মরণে এই দিন পালন করা হলেও পরবর্তীতে স্প্যানিশ আমেরিকা যুদ্ধে, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরিয়া ও ভিয়েতনামের যুদ্ধে নিহতদের স্মরণও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথমদিকে গ্রান্ড আর্মির কমান্ডার জেনারেল John a logan নির্দেশনায় সামরিক সদস্যদের দ্বারা এই সংস্কার চালু হলেও পরবর্তীতে কেবল সৈন্যদলই নয়, স্কাউট, বিভিন্ন সংগঠন এবং সাধারণ জনতাও সমাধিস্থলে পতাকা ও ফুল স্থাপন করাসহ বিশেষ কর্মসূচি পালন করে। World book--এ লিখা হয়েছে- On memorial day people place flowers and flags on the graves of military personnel, mane organization, including boy scouts, girl scouts and fraternal groups much in military parades and take part in special programs. উল্লেখ্য খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আমেরিকানদের মাঝে স্মরণীয় দিনে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল স্থাপনসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি পালনের এই রেওয়াজ অন্যান্য দেশে ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকদের সংস্কৃতি বা মূল্যবোধেও পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্তি লাভ করে। বলাবাহুল্য, এসব কিছুর সাথে মিল রেখেই বর্তমানে আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলনে শহীদ স্মরণে, শহীদ দিবস বা ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন হয় অর্থাৎ তাদের স্মরণে স্থাপিত শহীদ মিনারে ফুল স্থাপনসহ বিবিধ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ধর্ম এবং স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, সেহেতু ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে উল্লিখিত শহীদ মিনার সংক্রান্ত সংস্কৃতিটি পর্যালোচনা করা সচেতন মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
মূলত ইসলামী প্রজ্ঞার অভাবে কোন সরকারই এ সত্যটি আদৌ উপলদ্ধি করতে পারেনি। সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, সরকারেরও প্রয়োজন রয়েছে নেক পরামর্শ তথা নেক ছোহবত, রূহানী সংস্পর্শ তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © দৈনিক আল ইহসান | দৈনিক আল ইহসান.

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment