পবিত্র আশূরা তথা ১০ই মুহর্‌রম-এর দিনের শ্রেষ্ঠত্ব, ফযীলত ও আমলসমূহ


মুহর্‌রম মাস একটি হারাম বা পবিত্র মাস। মুহর্‌রম মাসের শ্রেষ্ঠতম দিনটি হচ্ছে আশূরা। ইহা আরবী “আশারুন” শব্দ হতে উদগত। অর্থাৎ মুহররম মাসের দশম দিনটি আশূরা হিসেবে পরিচিত।
এ প্রসঙ্গে “মিরকাত শরহে মিশকাত” কিতাবে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা মুহর্‌রম মাসকে এবং এর মধ্যস্থিত আশূরার দিনকে সম্মান কর। যে ব্যক্তি মুহর্‌রম মাসকে তথা আশূরার দিনকে সম্মান করবে, আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।”
এ মাসে বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার, যিকির-ফিকির, দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করার মাধ্যমে পরিপূর্ণ বরকত অর্জন করা সকল মু’মিন-মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য।
এ মাসের ফাযায়িল-ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে আরিফবিল্লাহ হযরত মাওলানা ইকবালুদ্দীন আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মু’মিনকে মাহ ওয়া সাল” কিতাবের ১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, “ছাহাবী হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, মুহর্‌রম মাস হচ্ছে সমস্ত মাসের সরদার।” (দাইলামী শরীফ, মাসাবাতা বিস্‌ সুন্নাহ)

বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারি, পহেলা মুহর্‌রম ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, ইহা আদৌ শরীয়তসম্মত নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারি বা পহেলা মুহর্‌রম ভাল খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোন তাগিদ করা হয়নি। বরং দশই মুহর্‌রমে অর্থাৎ পবিত্র আশূরা-এর দিনে প্রত্যেক পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

১০ই মুহর্‌রম বা আশূরার দিনের বরকতময় ঘটনাসমূহঃ
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, এই আশূরার দিনে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে- যা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো
১. মহান আল্লাহ পাক এই মুহররমের ১০ তারিখে সৃষ্টির সূচনা করেন।
২. আশূরার দিন শুক্রবার ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
৩. এ দিনই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র ওজুদ মুবারক সৃষ্টি করা হয় এবং মর্যাদা, সম্মান ও খুছূছিয়ত ও হাবীবুল্লাহ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। (সুবহানাল্লাহ)
৪. এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর দোয়া মুবারক কবুল করা হয়।
৫. এই দিনে হযরত ইদ্‌রিস আলাইহিস্‌ সালামকে আকাশে তুলে নেয়া হয়
৬. এই দিনে হযরত নূহ আলাইহিস্‌ সালাম এবং উনার সঙ্গী সাথী যারা ছিলেন, আল্লাহ পাক তাঁদের মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি দেন।
৭. আল্লাহ পাক এদিনে হযরত মূসা আলাইহিস্‌ সালাম-এর সাথে কথা বলেন এবং তাওরাত শরীফ উনার উপর নাযিল করেন।
৭. এদিনে বণী ইস্‌রাঈল সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ পাক লোহিত সাগরের উপর দিয়ে রাস্তা করে দেন। যার উপর দিয়ে হযরত মূসা আলাইহিস্‌ সালাম এবং তার সম্প্রদায় পার হয়ে যান। আর ফেরাউনের দলবল ও সৈন্যসামন্তসহ পানিতে ডুবে মারা যায়।
৯. আল্লাহ পাক এদিনে হযরত ইউনূস আলাইহিস্‌ সালামকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দেন।
১০. হযরত আউয়ুব আলাইহিস্‌ সালামকে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থতা দান করেন।
১১. এদিনে দীর্ঘ দিন বিচ্ছেদের পর হযরত ইউসূফ আলাইহিস্‌ সালামকে উনার পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্‌ সালাম-এর কাছে ফিরিয়ে দেন।
১২. এদিনে হযরত দাউদ আলাইহিস্‌ সালাম-এর দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেন।
১৩. হযরত সোলায়মান আলাইহিস্‌ সালামকে উনার রাজত্ব বা কর্তৃত্ব দেয়ার ঘোষণা দেন।
১৪. আল্লাহ পাক এ দিনে হযরত ঈসা আলাইহিস্‌ সালামকে আসমানে তুলে নেন।
১৫. এই ১০ই মুহররম আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন, যে ঘটনা কায়িনাতবাসীকে ব্যথিত ও মর্মাহত করে তবে মুসলিম উম্মাহকে শিক্ষা দেয় ত্যাগের ও সত্যের। সুব্‌হানাল্লাহ!

আহ্‌লে বাইতগণ-এর আলোচনাঃ
মুহর্‌রম মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে- আহ্‌লে বাইত তথা হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা করা। কেননা যার আলোচনা যত বেশী করা হয় তার মুহব্বত ততই বৃদ্ধি পায়। আর আহ্‌লে বাইতগণ-এর প্রতি গভীর মুহব্বত ভালবাসা, পরকালীন মুক্তি এবং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির কারণ। রহমত, বরকত ও সাকীনা লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মর্মে দোয়া করেন যে, “হে আল্লাহ পাক! আমি হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মুহব্বত করি। আপনিও উনাদেরকে মুহব্বত করুন এবং যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করবে তাঁকেও আপনি মুহব্বত করুন।” (তিমমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৫৭০)
সাথে সাথে আশূরা থেকে আরেকটি ইবরত ও নছীহত হাছিল করতে হবে যে, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুখ্যাত ইয়াযিদের কুখ্যাত বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন কিন্তু তবুও অসত্যকে মেনে নেননি। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। কাজেই মুহর্‌রমের দশম তারিখে কুখ্যাত ইয়াযিদ কর্তৃক নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদরের নাতি সাইয়্যিদাতুন্‌ নিসা হযরত মা ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা আনহা-এর নয়নের মণি হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নির্মম শাহাদতবরণ বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুঃখজনক, কষ্টদায়ক এবং বেদনাদায়ক হলেও প্রকৃত পক্ষে এর মাঝেই মুসলমানদের জন্য এক বিরাট নছীহত ও ইবরত রয়েছে। আর তাহলো মাল-সম্পদ এমনকি জীবন দিয়েও হক্বের জন্য বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে মুকাবিলা ও আমরণ কোশেশ করা।

আশুরার রোযার ফযীলতঃ
মহান আল্লাহ পাক-এর রহমত, বরকত ও সাকীনা এবং মাগফিরাত-ক্ষমা সম্বলিত মুহররম মাসের অন্যতম আমল হচ্ছে, আশূরার রোজা। রমাদ্বান শরীফের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশূরার রোযাই ফরয ছিল।
কাজেই রমাদ্বান শরীফ-এর রোযার পরই হচ্ছে, এ রোযার স্থান। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রমাদ্বান শরীফ-এর রোযার পর আল্লাহ পাক-এর মাস মুহর্‌রমের রোযাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ তথা ফযীলতপূর্ণ।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, তিরমিযী শরীফ ও রিয়াদুছ্‌ ছালেহীন)
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রমাদ্বান মাসের পর আর কোন্‌ কোন্‌ মাসের রোযা রাখতে মুবারক নির্দেশ দিয়ে থাকেন? তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি তুমি রমাদ্বান মাসের পর আরো রোযা রাখতে চাও তবে মুহর্‌রম মাসে রোযা রাখ। কেননা এটা আল্লাহ পাক-এর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে যেদিন আল্লাহ পাক এক সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন এবং তিনি আর এক সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করবেন।” (তিরমিযী শরীফ, আহমাদ)
উক্ত হাদীছ শরীফ মুয়াফিক শাইখুল আলম, আরিফ বিল্লাহ্‌, আশেকে রসূল, আল্লামা হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে কোন কঠিন গুণাহ্‌গার ব্যক্তি যদি আশূরার দিন তওবা করে তাহলে আল্লাহ পাক অবশ্যই তার তওবা কবুল করবেন।” (মাছাবাতা বিস্‌ সুন্নাহ্‌, মু’মিন কে মাহ ওসাল)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং আশূরা-এর দিন রোযা রেখেছেন এবং ঐ দিনে সকলকে রোযা রাখার হুকুম দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, রিয়াদুস্‌ সালেহীন)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত আছে, আখিরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশূরার রোযার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এটা বিগত বৎসরের সমস্ত গুণাহর কাফ্‌ফারা স্বরূপ।” (মুসলিম শরীফ)
উল্লেখ্য যে, অন্যান্য মাসে একটি রোযা রাখতে কোন অসুবিধা নেই; কিন্তু আশূরার রোযা একটি রাখা মাকরূহ। কেননা ইহুদীরা আশূরার দিনে রোযা রেখে থাকে। আর আখিরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদী-নাছারাদের অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। হাদীছ শরীফ-এ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের ভিন্ন অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়। কাজেই তোমরা ইহুদী এবং নাছারাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ-৩৯৯ পৃষ্ঠা)
কাজেই আশূরা উপলক্ষ্যে কমপক্ষে দু’টি রোযা রাখতে হবে। ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ এ দু’দিন রোযা রাখতে হবে। তবে ৯ ও ১০ তারিখে রোযা রাখাই উত্তম।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশূরার দিন রোযা রাখলেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এদিনকে ইয়াহুদী ও নাছারারা সম্মান করে। তখন নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি আমি আগামী বৎসর মহান আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে না যাই অর্থাৎ বিছাল শরীফ যদি না হয় তাহলে অবশ্যই নবম তারিখেও রোযা রাখবো।” (মিশকাত শরীফ ১৭৮ পৃষ্ঠা)

ইফতারের ফযীলতঃ
আশূরার রোযার ইফতারীর ফযীলত সম্পর্কে আখিরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আশুরার দিন যে ব্যক্তি কোন আশূরার রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেন সমস্ত উম্মতী হাবীবীকে ইফতার করালো।” (রিয়াদুস্‌সালেহীন, মা সাবাতাবিস্‌ সুন্নাহ)


আশূরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানোঃ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আশূরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়াবে-পরাবে আল্লাহ পাক সারা বৎসর তাকে স্বচ্ছলতা দান করবেন।” (তিবরানী শরীফ, শোয়াবুল ঈমান, মা-ছাবাতা-বিস্‌সুন্নাহ্‌)

আশূরার দিন চোখে সুরমা দেয়ার ফযীলতঃ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, আখিরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আশূরার দিন মিশ্‌ক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে সেদিন হতে পরবর্তী এক বৎসর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবেনা।” (শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মাছাবাতা বিস্‌সুন্নাহ্‌, মুমিনকে মাহ ওসাল-২৩)

আশুরা উপলক্ষে গোসলের ফযীলতঃ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আশূরার দিন গোসল করবে আল্লাহ পাক তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবেনা এবং অলসতা ও দুঃখ-কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।”

আশূরার দিন গরীবদেরকে খাদ্য দানের ফযীলতঃ
মাওলানা ইকবালুদ্দীন আহমাদ সাহেব উনার “মু’মিনকে মাহ ওসাল” কিতাবের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, “আশূরার দিন যে ব্যক্তি আহ্‌লে বাইতের গরীব-মিসকীনগণকে পেট ভরায়ে খাদ্য খাওয়াবে সে ব্যক্তি বিদ্যুতের গতির ন্যায় পুলসিরাত পার হবে।”
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আশুরার দিন কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতিমের মাথায় হাত স্পর্শ করে এবং কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে আল্লাহ পাক তাঁকে বেহেশতের দস্তর খানায় খাদ্য খাওয়াবেন ও জান্নাতের খালিস শরবত “সালসাবীল” ঝর্ণা থেকে পানি পান করাবেন।”
সুতরাং, বুঝা যাচ্ছে, মুহর্‌রম মাসকে সম্মান করা এবং আশূরা মিনাল মুহর্‌রমকে সম্মান করা ওয়াজিব। তাই মুহর্‌রমকে অসম্মানকারীরা জাহান্নামী তথা জান্নাত থেকে বঞ্চিত। মুহর্‌রম মাসে ও অন্য যে কোন মুহূর্তে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর অসম্মানী করা, তা’জিয়া করা, মাতম করা, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে গালমন্দ করা হারাম ও কুফরী। এগুলো আশূরাকে অসম্মান করার পরিচায়ক; যা লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কার্যকলাপ। আয় আল্লাহ পাক! বিশ্ববাসীকে মুহর্‌রমুল হারামের যথাযথ তা’যীম করে বরকত, রহমত অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

Uswatun Hasanah

0 comments:

Post a Comment