Pages

Saturday, February 13, 2016

তথাকথিত ‘ভালোবাসা দিবস’ পালন মূলত নোংরামীর বিস্তার ঘটায় ॥ পাশ্চাত্যে ভালোবাসা দিবস প্রচলনের পেছনে ছিলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ।
বাংলাদেশে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র প্রবর্তক হলো- যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতিবাজ জামাত-জোটের খাছ এজেন্ট, ফরমাবরদার ও তল্পীবাহক, সুবিধাভোগী ও নীতিভ্রষ্ট এক সম্পাদক।
তার কথায় এদেশের প্রায় ২০ কোটি মুসলমান তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে মুসলমানগণ উনাদের জন্য কথিত ‘ভালোবাসা দিবস’ পালন করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম। এটা এদেশে মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্র।

যে ভ্যালেন্টাইনস ডে আজকে সারাবিশ্বেই ব্যাপকতা লাভ করেছে, সে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র উদ্ভাবক তথা আয়োজক হলো কার্ড ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’-এরপর ‘ইস্টার সানডে’ পালনের মধ্যবর্তী সময়টা ছিলো তাদের ব্যবসার জন্য খুবই মন্দা। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্থ হাছিলের জন্যই তারা ‘ভ্যালেন্টাইন’ তত্ত্ব জাহির করে এবং প্রভূত অর্থও উপার্জন করে। গ্রীটিংস কার্ড অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এদিনে কমপক্ষে একশ’ কোটি কার্ড বিনিময় হয়।
ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা সাচি অ্যান্ড সাচি, ভারতীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থা এভারেস্ট, রিডিফিউশন, মার্কিন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ঢেউ বেটস- এক এলাকার সংস্কৃতিকে অন্য ধরনের সংস্কৃতির লোকের কাছে বিজ্ঞাপনের পদ্ধতিতে বিপণন করায় সিদ্ধ হস্ত। কিন্তু সাধারণ মধ্যবিত্ত তাদের পদ্ধতিটা, মনোবৃত্তিটা, প্রক্রিয়াটা, আদৌ মালুম করতে পারেনি।
এমনকি যে ভ্যালেন্টাইস ডে নিয়ে এদেশে এখন বিস্তর মাতামাতি, এর পিছনে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির তল্পীবাহক লেফাফার শফিক রেহমানের একক কৃতিত্বের দাবিদার হওয়ার মনোবৃত্তি কাজ করেছে, তা সাধারণ মধ্যবিত্ত আজও উপলব্ধি করেনি। পাশাপাশি এর দ্বারা যে মুসলমান হারিয়েছে তার ঈমান, আমল, ঐতিহ্য, সুখশান্তি- তাও সাধারণ মধ্যবিত্ত মুসলমান আজও অনুভব করেনি।
১৯৯৩ সালে ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান ভ্যালেইন্টাইন ডে’র কথা বললো। এ সম্পর্কে পত্রিকাটির এক ভালোবাসা সংখ্যায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, “এটি নিয়ে বাংলাদেশ গর্বিত হতে পারে। বাংলাদেশে ১৯৯৩ এ যায়যায়দিন প্রথম ভালোবাসা দিন পালনের আহবান জানিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে।”
এদিকে শফিক রেহমানের কাঁধে খোদ ইবলিস সাওয়ার হয়ে তার দ্বারা যে কোটি কোটি মুসলমানের মাঝে বেপর্দা, বেহায়া, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার মচ্ছবের প্রচলন ঘটিয়েছে; তা সে নিজেও উপলব্ধি করতে পারেনি।
তথাকথিত ভালোবাসা দিবস পালন মূলত অ-ভালোবাসা তথা নোংরামীর বিস্তার ঘটায়। পাশ্চাত্যে ভালোবাসা দিবস প্রচলনের পেছনে ছিলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ। পাশাপাশি এদেশে তা প্রবর্তনের পেছনে আছে পাশ্চাত্য গোলাম শফিক রেহমান ও ইহুদী খ্রিস্টানদের সুদূর প্রসারী ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র। মুসলমানের জন্য ভালোবাসা দিবস পালন করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম। এটা এদেশে মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্র।
উল্লেখ্য, তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের প্রচারণা মূলত এটা প্রমাণ করে যে, আসলে ভালোবাসা দিবস পালনকারী স্বামী-স্ত্রীরা ভালোবাসার অভাবে ভুগছে। ভালোবাসার বন্ধনহীনতায় ভুগছে। অশান্তিতে ভুগছে। যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছে। তার থেকে উত্তরণ লাভের জন্য তারা তথাকথিত ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার চেতনায় উজ্জীবিত হবে।
মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শের কারণে যে অগাধ মুহব্বত থাকে তা ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মী অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্ব ও এদেশীয় পশ্চিমা এজেন্টরা কল্পনাই করতে পারে না ও পারবে না। বরং তারা তার বিপরীত আযাব-গযব তথা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-ফাসাদ ও ভালোবাসাহীনতাই ভুগে। তাদের সে ভালোবাসাহীন যন্ত্রণাকাতর দগ্ধ জীবনে একটু ভালোবাসার চেতনার জন্য তাদের কাছে ভালোবাসা দিবসের প্রয়োজনীয়তা গ্রহণযোগ্য ও আদরণীয় হয়েছে।
ইদানীংকালে এদেশেও পশ্চিমা সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে বিস্তারের কারণে পশ্চিমা সামাজিক সাংস্কৃতিক সমস্যা ও সঙ্কটও এদেশে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে এবং সে সমস্যা সমাধানে পশ্চিমা ধাঁচের অনুকরণেই প্রয়াস চলছে। এতদ্বপ্রেক্ষিতে এদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রচারণার বিস্তার ঘটছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই তথাকথিত ভালোবাসা দিবস কখনোই এদেশীয় অর্থাৎ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ ছিল না। আর মুসলমানদের সংস্কৃতিতো নয়ই।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ভিড় বেড়েছে নগরীর বিভিন্ন বিপণী বিতান ও গিফট শপগুলোতে। হচ্ছে ফুলব্যবসা। ভালোবাসার এ নিদর্শনের পার্সেল অর্ডার নিচ্ছে পুষ্প বিতানগুলো, নির্ধারিত ঠিকানায় প্রাপককে ভালোবাসার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়ার আয়োজন করছে। ব্র্যান্ড ও জাদু শিল্পীদেরও অনুষ্ঠানের কমতি নেই। তারাও ব্যস্ত স্টেজ শো করতে। তারকা হোটেলসহ সর্বত্র আয়োজন। সোনারগাঁও, শেরাটন, র‌্যাডিসন হোটেলও কথিত ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর বিশেষ পার্টির আয়োজন করে। গভীর রাত পর্যন্ত এসব অনুষ্ঠানে চলে নাচ-গান, র‌্যাফেল ড্র এবং বেস্ট কাপল অ্যাওয়ার্ড।
তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের নামে মূলত চলে বেপর্দা-বেহায়াপনার নির্লজ্জ উৎসব। যাতে ইবলিস শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা থাকে এবং নফস বা প্রবৃত্তির উদ্দামতা যুক্ত হয়। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের মুবারক নির্দেশ মুতাবিক শক্ত কবীরা গুনাহ এবং পরকালে এসব কাজের জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হবে তথা জাহান্নামে যেতে হবে। কারণ এ দিবসের প্রবর্তন হয়েছে বিধর্মীদের থেকে এবং তা পালিত হয় বেশরীয়তী পন্থায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।”
অতএব, মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের অনুসরণ করে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ পালন কুফরী ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এর থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্য ফরয।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।© আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

No comments:

Post a Comment