Pages

Saturday, November 14, 2015

কি শেখানো হচ্ছে মুসলিম শিশুকে? প্রচলিত সিলেবাসের নেপথ্যে রয়েছে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের শিক্ষা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত পঞ্চম শ্রেণীর ‘প্রাথমিক গণিত’ (বাংলা এবং ইংরেজি ভার্সন) বইয়ের বিশ্লেষণ


মূল কথা: সম্মানিত মুসলমানগণ উনারাই পৃথিবীতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। ইলম হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে। “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দান করবেন অর্থাৎ ইলম দান করবেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮২)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র এই আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদার মুত্তাক্বী উনাদেরকে ইলম দান করেছেন। হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট থেকে সবাই ইলম ও হিকমত প্রাপ্ত হয়েছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রই মুসলমান উনাদের অবদানে পরিপূর্ণ। কিন্তু যে বিষয়ে মুসলমানগণ উনারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তা হলো গণিত। গণিতে মুসলমান উনাদের অবদানের পিছনে মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ‘ইসলাম’। একজন মুসলমান উনার পুরো জিন্দেগীতেই রয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। সময় গণনা, দিনের গণনা, যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদির হিসাব, সম্পত্তি বণ্টন ইত্যাদি করতে গিয়ে গণিতের যাবতীয় প্রক্রিয়া যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, ভগ্নাংশ ইত্যাদি শিখতে হয় একজন মুসলমান উনাকে। আরো প্রয়োজন হয় জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির। চাঁদ ও সূর্য দেখা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে মুসলিম বিজ্ঞানীগণ জ্যোতির্বিদ্যা এবং গণিত সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের সম্মুখীন হন। আর তাই দেখা যায় গণিতে মুসলমান উনাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সংখ্যাতত্ত্ব, ক্রমবাচক সংখ্যা, গণনা পদ্ধতির জনক হলেন পারসিক মুসলিম বিজ্ঞানী মুহম্মদ মূসা আল খারিযমি। দশমিক সংখ্যার আবিষ্কার করেন জমশিদ আল কাশি। শূন্যের ব্যবহার, গাণিতিক প্রক্রিয়া তথা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, সূচক এবং গাণিতিক চিহ্ন সবকিছুরই আবিষ্কারক মুসলমান। গণিতের অন্যান্য শাখা যেমন বীজগণিত, ক্যালকুলাস, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি সবকিছুই মুসলমান উনাদেরই আবিষ্কার। মুসলমান উনাদের এই গৌরবজ্জল ইতিহাস একজন গণিত শিক্ষার্থীর জানা প্রয়োজন। তাহলে মুসলমান উনাদের হীনম্মন্যতা দূর হবে এবং একজন মুসলিম শিশু নিজেও গণিতে নতুন কিছু অবদান রাখতে সচেষ্ট হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত প্রাথমিক শ্রেণীর গণিত পাঠ্য পুস্তকগুলোতে গণিত শেখার থেকে হিন্দুয়ানি ও মুশরিকী চেতনার শিক্ষাই দেয়া হয়েছে বেশি। এই সিলেবাস পড়ে একটি শিশু যতটুকু শিখবে গণিত তার থেকে অনেক বেশি শিখবে মুশরিকী মূর্খতা। শিশুর মন যা শুনে, যা দেখে তাই শিখে। একজন মুসলিম শিশুর মানসপটে কি করে কাফির-মুশরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আসক্তি, যাবতীয় হারাম কাজ ও বেপর্দাকে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তাকে কি করে ইসলামবিদ্বেষী বানানো যায়- সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে এই সিলেবাসে। বাংলা এবং ইংরেজি ভার্সন বই হবহু একই রকম। নিচে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক গণিত বইটির একটি বিশ্লেষণমূলক সমালোচনা তুলে ধরা হলো।


অধ্যায় পৃষ্ঠা/লাইন ভুল/আপত্তিকর শব্দ, নাম ও ছবি সম্পর্কিত তথ্য তাদের উদ্দেশ্য সংশোধন/ মন্তব্য
কভার পেজ শ্রেণি কলকাতার বানানরীতি এদেশে প্রচলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘দুই বাংলা এক’ করার হীন চক্রান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা এগিয়ে থাকা। শ্রেণী বানানে কলকাতার বানান রীতি অনুসরণ করে ‘ণ’-এর সাথে ‘’ি যুক্ত করে ‘শ্রেণি’ লিখা হয়েছে। শুদ্ধ বানান হবে ‘শ্রেণী’।
কভার পেজের পরের পৃষ্ঠা এবং ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩৬, ৩৭ পাখির ছবি ও কার্টুন। এবং বিভিন্ন পৃষ্ঠায় মানুষ, ছেলে-মেয়ে ইত্যাদি প্রাণির ছবি। মুসলিম দেশের পাঠ্য পুস্তকের শুরুতেই পাখির ছবি দিয়ে মুসলমান শিশুদের অবচেতন মনে হারাম ছবির প্রতি আসক্তি প্রবেশ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। প্রাণীর ছবি ইসলামে হারাম। এগুলো বাদ দিতে হবে। যদি দিতেই হয় তবে পাখির ছবি বাদ দিয়ে ফুল, লতা-পাতা, মসজিদ, মিনার, গম্বুজ বা কারুকাজ দেয়া যেতে পারে- যেগুলো মনের মধ্যে ইসলামী ভাবধারা সৃষ্টি করে।
প্রসঙ্গ কথা প্রসঙ্গ কথার ৩য়, ৪র্থ , ৫ম ও ষষ্ঠ লাইন শিশুর অন্তর্নিহিত অপার বিস্ময়বোধ, অসীম কৌতুহল, অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্যমের মতো মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের সেই মৌল পটভূমিতে পরিমার্জিত হয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম। ২০১১ সালে পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক শিশুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুনঃনির্ধারিত হয় শিশুর সার্বিক বিকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে সামনে রেখে। শিশুর অন্তর্নিহিত অপার বিস্ময়বোধ, অসীম কৌতুহল, অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্যমের মতো মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের নামে তথা শিশুর সার্বিক বিকাশের নামে নতুন শিক্ষানীতি ও সিলেবাসের মাধ্যমে একটি মুসলমান শিশুর ব্রেইন ওয়াশ ও ব্রেইন স্টরর্মিং (মগজধোলাই) করে তাকে ইসলামবিদ্বেষী করে তোলা, নাস্তিক করে তোলা। যাতে করে একজন মুসলমান শিশুর কাছে ইসলামী রীতি-নীতি ও বিধি-নিষেধ মেনে চলাটা বিরক্তিকর ও কঠিন মনে হয়। (নাউযুবিল্লাহ!) এটা আসলে মানবিক বৃত্তির বিকাশের নামে একটি মুসলমান শিশুকে কিভাবে কাফির-মুশরিকে পরিণত করা যায় সেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুরো সিলেবাসে সম্মানিত ইসলামী শিক্ষা এবং ইসলামী অনুভূতির বিকাশ সাধনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
প্রসঙ্গ কথা দ্বিতীয় প্যারার প্রথম লাইন (বাংলা ভার্সন) ‘গণিত বিষয়টি বিমূর্ত’- এখানে ‘বিমূর্ত’ শব্দটি হিন্দুয়ানি এবং অস্পষ্ট অর্থ প্রকাশ করে। মুসলমান উনাদের কথোপকথনের মধ্যে হিন্দু ভাবধারার শব্দ প্রচলন করা। যেমন: হিন্দুরা কখনই ‘পানি’ বলে না, তারা বলে ‘জল’। হিন্দুরা কখনই ‘গোসল’ বলে না, তারা বলে ‘স্নান’। মুশরিক মালাউনরা তাদের কথায়, অভ্যাসে, আচরণে মুশরিকী-হিন্দুয়ানি অভ্যাস ধরে রাখবে ঠিকই কিন্তু মুসলমান শিশুকে মুসলমানি শব্দ ব্যবহারের অভ্যাস বাদ দিয়ে তাকেও হিন্দুয়ানিতে অভ্যস্ত করা। তাহলে তার মন-মগজে হিন্দুত্বের প্রভাব বজায় থাকবে। চেয়্যারম্যানসহ সকলের মন-মগজ থেকে হিন্দুয়ানী চেতনা ঝেড়ে ফেলে মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘বিমূর্ত’ না বলে নিরাকার বা বাস্তব আকার আকৃতিহীন বললে বুঝতেও সুবিধা হতো।
অনুশীলনী ৩(খ) পৃ: ২০-এর ৮নং সমস্যা অনুশীলনী করাতে গিয়ে হিন্দুয়ানী নাম এবং মেয়েদের নাম লিখা হয়েছে যেমন: প্রমা (ঢ়ৎড়সধ), রিমি (ৎরসর), মনীষা (সড়হরংযধ) ইত্যাদি হিন্দুয়ানী নাম। মুসলমান উনাদের নামের সাথে হিন্দুদের নাম মিশিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান শিশুকে এটা শিক্ষা দেয়া যে- হিন্দু মুশরিকেরা তাদের বন্ধু। নাউযুবিল্লাহ! এগুলো বাদ দিতে হবে। কাফির-মুশরিকরা মুসলমান উনাদের শত্রু। তারা কখনো বন্ধু হতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না।”
তাই তাদেরকে বন্ধু ভাবা জায়িয নেই, বরং হারাম।
পৃ: ২৩ গড় শেখাতে একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের আটটি ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজে সংগৃহীত রানের হিসাব দেয়া হয়েছে। মুসলিম শিশুর অবচেতন মনে খেলার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। খেলা করা, খেলার খবর রাখা, খেলার হিসাব করা, খেলার চিন্তা করা- সবই হারাম। এর পরিবর্তে হালাল বিষয়ের মাধ্যমে অংক শেখাতে হবে।
পৃ: ৩৮ সুমি নামে একজন মেয়ের জন্মদিনে তার বন্ধুদেরকে চকলেট বিতরণ করার পর কয়টি থাকে সে বিষয়ে অংক দেয়া হয়েছে। মুসলিম শিশুকে কাফির-মুশরিকদের হারাম কৃষ্টি কালচারে অভ্যস্ত করা, মেয়েদেরকে পুরুষ বন্ধু গ্রহণ করতে শিখানো। পর্দা করা নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরয। তাই একজন মেয়ের কখনো পুরুষ বন্ধু থাকতে পারে না। নারী-পুরুষ একসাথে সহশিক্ষা নাজায়িয।
পৃ: ৪১, ৫১, ৫৭, ৭৪ ৬নং সমস্যায় অনু, মৌ, সায়ন, পিউ এবং ৫১ পৃষ্ঠায় অর্ঘ্য, হিমু, শুভ, সৌমিক, মৌলি, ৫৭ পৃষ্ঠায় জয়া, অনিক, ৭৪ পৃষ্ঠায় নগেন বাবু, কমল বাবুু এছাড়াও উর্মি, মৌমি ইত্যাদি অমুসলিম হিন্দু, খ্রিস্টান, কাফির-মুশরিকদের নামে অংক দেয়া হয়েছে। মুসলমান উনাদের মধ্যে কাফির-মুশরিকদের নামের প্রচলন করা, তাদের প্রতি আসক্ত করা। এই নামসমূহ বাদ দিতে হবে। মুসলমান উনাদের নামে অংক শেখাতে হবে।
পৃ: ৫১ ১১নং সমস্যা দেয়া হয়েছে কোল্ড ড্রিংকস খাওয়াকে কেন্দ্র করে। হিমু এবং তার ছোট বোন ভাগাভাগি করে এক বোতল কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছে। মুসলমান উনাদেরকে হারাম কোল্ড ড্রিংকস-মদ-শরাব খেতে অভ্যস্ত করা। ভাই-বোন মিলে ভাগাভাগি করে মদ খাওয়া শেখানো সর্বপ্রকার কথিত কোল্ড ড্রিংকস বা সফট ড্রিংকস খাওয়া হারাম। এগুলোতেও এলকোহল আছে। তাই কথিত কোল্ড ড্রিংসসহ এলকোহল সংশ্লিষ্ট অংক বাদ দিয়ে ইসলামী ভাবধারার অংক দিতে হবে।
পৃ; ৯০, ৭৪ রেডিও কেনা সংক্রান্ত সমস্যা। রেডিও-টিভি ইত্যাদি কিনে গান-বাজনা শুনতে অভ্যস্ত করা। গান-বাজনা শোনার জন্য রেডিও কেনা হারাম। তাছাড়া যেখানে গান-বাজনা হয়, সেখানে ইসলামী অনুষ্ঠান করাও হারাম।
নবম অধ্যায়: শতকরা পৃ ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১ মুনাফার নামে সুদ সংক্রান্ত সমস্যা দেয়া হয়েছে। মুসলমান শিশুকে সুদ গণনা করে নিকৃষ্ট গুনাহগারে পরিণত করা। সাথে সাথে তাকে সুদের প্রতি লোভী করে তোলা। সুদ হারাম। সুদের হিসাব করাও হারাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সতর্ক ফরমান হয়েছে- যে একবার সুদ খেল সে যেন নিজ মায়ের সাথে ছত্রিশবার জিনা (ব্যাভিচার) করলো। সুদ খাওয়া তার চেয়েও নিকৃষ্ট।
একাদশ: সময় ১০৬ সময় গণনা শেখাতে গিয়ে বাংলা মাস এবং ইংরেজি মাসের নাম দেয়া হয়েছে; কিন্তু আরবী মাসের নাম নেই। মুসলমান উনাদেরকে পবিত্র হিজরী মাস থেকে গাফিল করে দেয়া। হিজরী সনের হিসাব দিতে হবে। সাথে সাথে শামসী হিসাব হিসাব দিতে হবে।
পাঠ শেষ করার কোনো তরতীব নেই। কোনো পাঠ শেষ হলে আল-হামদুলিল্লাহ বা ছদাকাল্লাহ বা জযাকাল্লাহ ইত্যাদি যিকিরমূলক শব্দ লেখা উচিত। কেননা ইলিম অর্জন করা ফরয এবং তা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর ইলিম মহান আল্লাহ পাক তিনি দান করেন। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে পাঠ শুরু করা উচিত এবং উনার নাম মুবারকে শেষ করা উচিত। উনার কাছে ইলিম প্রার্থনা করা উচিত।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-গোলাম মুহম্মদ আরিফুল খবীর। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

No comments:

Post a Comment