সমুদ্র সীমানা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক রায়।
সমুদ্র সীমানা ও সম্পদ ব্যবহারে বাংলাদেশ সৃমদ্ধি অর্জন করতে পারে বহুগুণ।
পাশাপাশি আয়তনও বাড়াতে পারে কয়েকগুণ।
অবশেষে অবসান হলো ৩৮ বছরের অপেক্ষার। সমতা না সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হবে, তা নিয়ে বিরোধ। কয়েক দশক ধরে দফায় দফায় বৈঠক ও আলোচনার সিরিজ চললেও সমস্যার কোনো সমাধান সূত্র বের হয়নি। অবশেষে ২০০৯ সালের অক্টোবরে সমুদ্র আইন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাস ছিল যদি ভৌগোলিক অবস্থান ও সমতার নীতি বিবেচনা করা হয়, তাহলে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশ তার অধিকার পাবে।
অন্যদিকে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমানা ভাগের যুক্তি তুলেছে মিয়ানমার। তাদের দাবি, ১৩০ নটিক্যাল মাইলের বেশি প্রাপ্য নয় বাংলাদেশ।
তবে গত পরশু বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৭টায় আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এতে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের জয় হয়েছে। জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সির’ (ইটলস) ২৩ বিচারকের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করে।
মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের ১৩০ নটিক্যাল মাইলের বেশি যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সেখানে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অনুযায়ী এখন ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ভেতরে যাওয়ার আইনগত অধিকার পেল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, মহীসোপানের জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘে সিএলসিএস-এ যে ৪৬০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত দাবি করেছে, তার পথও খোলা রইল। মূলত মিয়ানমার চেয়েছিল, সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে। আর বাংলাদেশ চেয়েছিল সমতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে। আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে। যাতে কোন পক্ষই বঞ্চিত না হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মোট ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭১ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিরোধ ছিল। আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়ে বাংলাদেশকে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এবং মিয়ানমারকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকা দিয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার ও ভারত বাংলাদেশের মোট ২৮টি ব্লকের মধ্যে ২৭টি নিজেদের বলে দীর্ঘদিন দাবি করে আসছিল। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে মামলার এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের কমপক্ষে ১৮টি ব্লকের অধিকার নিশ্চিত হল। বাকিগুলো ভারতের সঙ্গে মামলার রায়ে নির্ধারিত হবে। এছাড়া এই রায়ে বাংলাদেশ যেখানে ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে আটকে যাচ্ছিল, সেখানে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার নিশ্চিত করল। এছাড়া আন্তর্জাতিক আদালত রায় দিয়ে যে সীমারেখা টেনেছে, তাতে বাংলাদেশের জন্য আনুমানিক ২৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত উক্ত হল।
বাংলাদেশের জনগণের জন্য আজ অত্যন্ত গৌরবময় এবং আনন্দের দিন। বঙ্গোপসাগরে পানিরাশি এবং তলদেশের সম্পদরাশিতে আজ বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশের সামনে খুলে গেছে, এক বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার। তেল-গ্যাসসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য বাংলাদেশ নিতে পারবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এছাড়া বিপুল মৎস্যসম্পদ, তেল-গ্যাস ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের তলদেশে রয়েছে কোবাল্ট সালফাইড, নুডল্স, যা থেকে কোবাল্ট, নিকেল, ম্যাগনেসিয়াম, তামার মতো দামি খনিজ পদার্থ আহরণ করা সম্ভব। পাপুয়া নিউগিনিসহ বেশ কয়েকটি দেশে নুডল্স থেকে কিছু পরিমাণ স্বর্ণও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও স্বর্ণ পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য সমুদ্রসীমা রক্ষা ও সম্পদ আহরণের জন্য বাংলাদেশে সমুদ্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন জরুরি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতেও ওশেনোলজি পড়ানো হয় না। ফলে আমাদের এখানে সমুদ্রবিদ্যায় কোনো লোকবল নেই। অথচ ভারতে অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়টি পড়ানো হয়।
এদিকে বঙ্গোপসাগরের নোনাজল হটিয়ে তার বুকে জেগে উঠছে অসংখ্য দ্বীপখ-। এসব দ্বীপে সৃজন করা হচ্ছে বনভূমি, গড়ে উঠছে বসতি। এরইমধ্যে সাগরের বুকজুড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গমাইল আয়তনের ভূখ- গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে, তৈরি হয়েছে নিঝুম দ্বীপের মতো দৃষ্টিনন্দন বনাঞ্চল। এ বছর যুক্ত হবে আরও ২ হাজার ২০০ বর্গমাইল ভূমি। কয়েকটি ক্রস ড্যাম আর প্রযুক্তিগত কিছু উদ্যোগের মাধ্যমেই আগামী দশ বছরে ওই এলাকার আয়তন দাঁড়াবে ২০ হাজার বর্গমাইল।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সমুদ্র-বক্ষে জেগে ওঠা ৪০ হাজার হেক্টর ভূমিকে এখনই স্থায়িত্ব দেওয়া সম্ভব। পর্যায়ক্রমে এর পরিমাণ দুই লক্ষাধিক হেক্টরে বিস্তৃত হতে পারে।
কার্যতঃ এক সমুদ্র সম্পদই যে গোটা বাংলাদেশবাসীর ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যথার্থ গবেষণা, ডাটা সংগ্রহ, তথ্যানুসন্ধানসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ ও উদ্যমের পাশাপাশি প্রয়োজন ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত অনুভূতি ও জজবা।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ‘যতক্ষণ তোমরা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ আঁকড়ে থাকবে ততক্ষণ উন্নতির শীর্ষে থাকবে। আর যখনই তা থেকে বিচ্যুত হবে তখনই লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে।’
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সীমারেখা সংরক্ষণ, বৃদ্ধি, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সমৃদ্ধি সবই এ হাদীছ শরীফ-এর আমলের উপর নির্ভর করে। বলাবাহুল্য, এ হাদীছ শরীফ-এর আমলের জন্য চাই খাছ রূহানী ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতে তা হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net
No comments:
Post a Comment