Pages

Sunday, December 27, 2015

মুসলমানদের উচিত সপ্তাহের বারসমূহের নাম পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী উচ্চারণ করা

একজন বয়োঃপ্রাপ্ত ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মুসলমান পুরুষ-মহিলার জন্য দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হয়। এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নামকরণ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই হয়েছে। যেমন ফজর, যুহর, আছর, মাগরিব ও ‘ইশা।
আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে ওয়াক্তের ভিত্তিতে যথাক্রমে ভোরের নামায, দুপুরের নামায, বিকালের নামায, সন্ধ্যার নামায ও রাতের নামায বলে অভিহিত করে না। এমনকি ইংরেজীতেও লেখার সময় লেখা হয়- Fajar prayer, Zuhor prayer, Asar prayer, Magrib prayer, Isha prayer|আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সপ্তাহের বারসমূহ- সাবত (يوم السبت), আহাদ (يوم الأحد), ইছনাইন (يوم الأثنين), ছুলাছা (يوم الثلاثاء), আরবিয়া (يوم الأربعاء), খ¦মীস (يوم الخميس), জুমু‘আ (يوم الجمعة) হিসেবে অভিহিত। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابي هريرة رضي الله تعالى عنه قال‏‏ أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدي فقال‏‏ ‏خلق الله التربة يوم السبت، وخلق فيها الـجبال يوم الأحد، وخلق الشجر يوم الأثنين وخلق الـمكروه يوم الثلاثاء، وخلق النور يوم الأربعاء، وبث فيها الدواب يوم الخميس، وخلق آدم عليه وسلم بعد العصر من يوم الجمعة في آخر الـخلق في آخر ساعة من النهار فيما بين العصر إلى الليل‏.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হাত ধরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইয়াওমুস সাবত পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, ইয়াওমুল আহাদ পর্বত সৃষ্টি করেছেন, ইয়াওমুল ইছনাইন গাছ সৃষ্টি করেছেন, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়গুলো সৃষ্টি করেছেন, ইয়াওমুল আরবিয়া আলো সৃষ্টি করেছেন, ইয়াওমুল খ¦মীস সব ধরনের প্রাণী সৃষ্টি করেছেন, ইয়াওমুল জুমু‘আ আছরের পর হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সর্বশেষ সৃষ্টি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।” (মুসলিম শরীফ)
অন্যদিকে বাংলায় সপ্তাহের বারসমূহ হিন্দু-মুশরিকদের বিভিন্ন দেব-দেবীর বা গ্রহ-নক্ষত্রের নামানুসারে (গ্রহ-নক্ষত্রগুলোকে হিন্দু-মুশরিকরা দেব-দেবী হিসেবেই গ্রহণ করেছে) ও ইংরেজীতে বিভিন্ন রোমান দেব-দেবীর নামানুসারে এসেছে। যেমন-

Saturday Saturn বা শনি গ্রহের সম্মানে শনিবার শনি দেবতার নাম অনুসারে
Sunday Day of God (বিধাতার দিন) রবিবার রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
Monday MoonÕs day (চাঁদের দেবীর সাথে মিলিয়ে) সোমবার সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে
Tuesday দেবতা Tyr-এর নাম থেকে মঙ্গলবার ধূপ বা দ্বীপের নাম অনুসারে
Wednesday Mercury দেবতার নাম থেকে বুধবার গ্রহের নাম অনুসারে
Thursday Thor দেবতার নাম থেকে বৃহস্পতিবার গ্রহের নাম অনুসারে
Friday দেবী Frigg -এর নাম থেকে শুক্রবার গ্রহের নাম অনুসারে
তাহলে মুসলমানরা কি করে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত নামকরণ বাদ দিয়ে সপ্তাহের বারের নাম উচ্চারণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেব-দেবীর নাম উচ্চারণ করে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি মুসলমানদের মুহব্বত কি কমে গিয়ে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতি বেশি হয়ে গিয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি মুসলমানদের মুহব্বত যদি সত্যিই বেশি হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবীর সকল মুসলমানের উচিত সপ্তাহের নামকরণের ক্ষেত্রে সকল দেব-দেবীর নাম উচ্চারণ/লেখা পরিহার করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত নাম অনুযায়ী সপ্তাহের নাম উচ্চারণ করা বা লেখা।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক ও পবিত্র বিছালী শান মুবারকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শান মুবারক ইছনাইন বারে প্রকাশ করেছেন। তাই ইছনাইন বারকে আলাদাভাবে সম্মানার্থে “ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম” হিসেবে সম্বোধন করতে হবে।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ জুলহাজুদ্দীন।© আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

সমগ্র পৃথিবীতে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ জাতীয়ভাবে পালন হতো তার প্রমাণ

ইমামুল মুহাদ্দিসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি সমগ্র বিশ্বে সকলের কাছে এক নামে স্বীকৃত একজন মুহাদ্দিস। এখন থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে উনার বিলাদত শরীফ। তিনি পবিত্র ইলমে হাদীছ শরীফ উনার জ্ঞান অর্জন করতে পবিত্র মক্কা শরীফ শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ সব স্থানে ছফর করেন। সকল মাদরাসায় পঠিত এবং সকল উছুলে হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে উনার নাম স্বমহিমায় উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়াচ্ছে। উনার রচিত ‘মিশকাত শরীফ’-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরক্বাত শরীফ’ সারা পৃথিবীতে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব। তিনি সারাটা জীবন অসংখ্য কিতাব রচনা করে মুসলিম জাহানের জন্য এক বিশাল নিয়ামত রেখে গিয়েছেন।
উনার অসংখ্য কিতাবের মধ্যে একটা খুবই গুরুত্ব¡পূর্ণ এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম হচ্ছে ‘আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ কিতাবে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সম্পর্কে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ থেকে দলীল পেশ করেছেন। এবং সেই সাথে একটা বিষয় উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে, “সারা পৃথিবীর সকল দেশে যে জাঁকজমকের সাথে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পালন হতো তার ঐতিহাসিক প্রমাণ উল্লেখ করেছেন।” আমরা উক্ত কিতাব থেকে সে ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!
(১) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
“আমাদের মাশায়েখ উনাদের ইমাম, হযরত ইমাম শায়েখ শামসুদ্দিন মুহম্মদ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফে মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানে যারা কয়েক বছর উপস্থিত ছিলেন, আমি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমরা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনুষ্ঠান উনার বরকত অনুভব করছিলাম যা নির্দিষ্ট কয়েক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মধ্যেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত আমার কয়েকবার হয়েছে।
আল্লামা হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, পবিত্র মক্কাবাসীগণ বরকত ও কল্যাণের খনি। উনারা সেই প্রসিদ্ধ পবিত্র স্থান উনার প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেন, যেটা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার স্থান। এটা সাউকুল লাইলে অবস্থিত। যাতে সুমহান বরকতে প্রত্যেকের সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়। এসকল সম্মানিত মানুষেরা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার দিন আরো অনেক কিছুর আয়োজন করে থাকেন। এ আয়োজনে আবেদ, নেককার, পরহিজগার, দানবীর কেউই বাদ যায় না। বিশেষ করে হেজাজের আমীর বিনা সংকোচে সানন্দে অংশগ্রহণ করেন এবং উনার আগমন উপলক্ষে ঐ জায়গায় এক বিশেষ নিশান তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে এটা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিচারক ও বিশিষ্ট আলিম আল-বুরহানিশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে আগত যিয়ারতকারী খাদিম ও সমবেত লোকদের খানা ও মিষ্টি খাওয়ানো পছন্দনীয় কাজ বলে রায় দিয়েছেন।”
(২) পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল:
“পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসিগণও পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করতেন এবং অনুরূপ অনুষ্ঠানাদি পালন করতেন। বাদশাহ হযরত মোজাফফর শাহ আরিফ অধিক আগ্রহী এবং সীমাহীন আয়োজনকারী ছিলেন। হযরত ইমাম আবু শামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম শায়েখ এবং বিশিষ্ট বুযুর্গ ছিলেন, তিনি স্বীয় কিতাব “আল বায়াছ আলাল কদয়ে ওয়াল হাওয়াদিছে” বাদশাহের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন- এরকম ভালো কাজসমূহ উনার খুবই পছন্দ এবং তিনি এধরনের অনুষ্ঠান পালনকারীদের উৎসাহ প্রদান ও প্রশংসা করতেন। ইমাম হযরত জাজরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো সংযোজন করে বলেন, এসব অনুষ্ঠানাদি পালন করার দ্বারা শয়তানকে নাজেহাল এবং ঈমানদারদের উৎসাহ উদ্দীপনা দানই উদ্দেশ্যে হওয়া চাই।”
(৩) মিশর ও সিরিয়াবাসীগণ উনাদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিলে সবচাইতে অগ্রগামী ছিলেন মিশর ও সিরিয়াবাসী। মিশর সুলতান প্রতি বছর পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সুমহান রাত্রে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। ইমাম হযরত সামছুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ননা করেন আমি ৭৮৫ হিজরী সনে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান রাতে সুলতান বরকুকের উদ্যোগে আল জবলুল আলীয়া নামক কেল্লায় আয়োজিত মীলাদ শরীফ মাহফিলে হাজির হয়েছিলাম। ওখানে আমি যা কিছু দেখেছিলাম, তা আমাকে অবাক করেছে অসীম তৃপ্তি দান করেছে। কোনোকিছুই আমার কাছে অসস্থিকর লাগেনি। সেই মহান পবিত্র রাতে বাদশাহর ভাষণ, উপস্থিত বক্তাগণের বক্তব্য, ক্বারীগণের তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, এবং না’ত শরীফ পাঠকারীগণের না’ত শরীফ আমি সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছি।”
(৪) স্পেন ও পাশ্চাত্য দেশে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
স্পেন ও পাশ্চাত্য শহরগুলোতে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে রাজা-বাদশাহগণ বিশাল লোকবহর নিয়ে শহরের রাস্তা প্রদক্ষিণ করতেন। সেই লোকবহরে বড় বড় ইমাম ও ওলামায়ে কিরামগণ অংশগ্রহণ করতেন। মাঝ পথে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসে উনাদের সাথে যোগ দিতেন এবং কাফিরদের সামনে সত্য বাণী তুলে ধরতেন। আমি যতটুকু জানি, রোমবাসীগনও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলো না। তারাও অন্যান্য বাদশাহগণের মতো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করতেন।”
(৫) অনারব দেশে তথা ভারতবর্ষে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
“আরব ছাড়াও অনারবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার প্রচলন ছিলো মহাসমারোহে। যেমন- পবিত্র রবীউল আউওয়াল মাসে এবং মহিমান্বিত দিনে এসব এলাকার অধিবাসীদের পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে জাঁকজমকপূর্ণ মজলিসের আয়োজন হতো, গরিব মিসকিনদের মধ্যকার বিশেষ ও সাধারণ সকলের জন্য বহু ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। তাতে ধারাবাহিক তিলাওয়াত, বহু প্রকার খতম এবং উচ্চাঙ্গ ভাষায় প্রশংসা সম্বলিত ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা হতো। বহু বরকতময় ও কল্যাণময় আমলের সমাহার ঘটতো, বৈধ পন্থায় আনন্দ প্রকাশ করা হতো, বহু বিখ্যাত আলিমগণও তাতে অংশগ্রহণ করতেন। মুঘল বাদশাহ হুমায়ুনও বিশাল জাঁকজমকের সাথে প্রতিবছর পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করতেন।” (দলীল- আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবিইয়ি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। লেখক- ইমামুল মুহাদ্দিসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। বিছাল শরীফ: ১০১৪ হিজরী।)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! দেখুন, সারা দুনিয়াতে আজ থেকে ৫০০/৬০০ বছর আগেও সমগ্র দেশব্যাপী দেশের বাদশাহ এবং জনগণ সবাই মিলে ব্যাপকভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতেন। এবং সেসব মাহফিলে উপস্থিত থাকেন তখনকার যুগশ্রেষ্ঠ আলিম এবং ইমামগণ। তখন পৃথিবীর যমীনে কোনো মানুষই এর বিরোধিতা করে নাই। কোনো আপত্তি করে নাই।
তবে আজ ২০/২৫ বছর ধরে কোন্ নব্য দল উদয় হলো যে, এরা যুগযুগ ধরে চলে আসা এই বরকতময় আমল উনার বিরোধিতা করে? পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন হারাম-নাজায়িয বলে কোন্ সাহসে? এই নব্য উদিত ফিতনা ওহাবী, সালাফী, জামাতী, দেওবন্দী, খারিজীদের কে অধিকার দিয়েছে মনগড়া ফতওয়া দেয়ার?
শুধু তাই নয়, বিষয়টি বিখ্যাত হাদীছ শরীফ বিশারদ, লক্ষাধিক হাদীছ শরীফ উনার হাফিয, বিখ্যাত মুহাদ্দিস, বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকারক, হাফিযে হাদীছ, আল্লামা ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে বর্ননা করেন,
ﻭﻻﺯﺍﻝ ﺍﻫﻞ ﺍﻻﺳﻼﻡ ﻳﺤﺘﻔﻠﻮﻥ ﻳﺸﻬﺮ ﻣﻮﺍﻟﺪﻩ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻳﻌﻤﻠﻮﻥ ﻟﻮﻻﺀﻡ ﻭ ﻳﺘﺼﺪ ﻗﻮﻥ ﻓﻲ ﻟﻴﺎﻟﻴﻪ ﺑﺎﻧﻮﺍﻉ ﺍﻟﺼﺪﻗﺎﺕ ﻭﻳﻈﻬﺮﻭﻥ ﺍﻟﺴﺮﻭﺭﻳﺮﻳﺪﻭﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺒﺮﺍﺕ ﻭ ﻳﻌﺘﻨﻮﻥ ﺑﻘﺮﺍﺓ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﻳﻈﻬﺮ ﻋﻠﻬﻢ ﻣﻦ ﺑﺮﻛﺎﺗﻪ ﻛﻞ ﻓﻀﻞ ﻋﻤﻴﻢ ﻭ ﻣﻤﺎ ﺟﺮﺏ ﻣﻦ ﺧﻮﺍﺻﻪ ﺍﻧﻪ ﺍﻣﺎﻥ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻌﺎﻡ ﻭﺑﺸﺮﻱ ﻋﺎﺟﻠﺔ ﺑﻨﻴﻞ ﺍﻟﺒﻐﻴﺔ ﻭ ﺍﻟﻤﺮ ﺍﻡ ﻓﺮﺣﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻣﺮﺀ ﺍﺗﺨﺬ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺷﻬﺮ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻙ ﺍﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻴﻜﻮﻥ ﺍﺷﺪ ﻋﻠﺔ ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﻓﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﺮﺽ ﻭ ﻋﺘﺎﺩ ﻭﻟﻘﺪ ﺍﻃﻨﺐ
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মাসে মুসলিম মিল্লাত সর্বদা মাহফিল অনুষ্ঠিত করে আসছেন, আনন্দের সাথে খাওয়া-দাওয়া তৈরি করছেন এবং খাওয়ার দাওয়াত করে আসছেন। এই মহান রাতে উনারা বিভিন্ন রকমের দান-খয়রাত এবং আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন এবং ভালো কাজ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধিই করে আসছেন। উনার বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ে আসছেন। যার বরকতে উনাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বরাবরই হচ্ছে। এর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে এটা পরিলক্ষিত যে, পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার কারণে ঐ বছর নিরাপত্তা কায়িম থাকে এবং সমস্ত নেক উদ্দেশ্য পূরণে তড়িৎ সুসংবাদ প্রবাহিত হয়। অতএব, মহান অল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তির উপর অসংখ্য রহমত বর্ষণ করেন। যিনি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাসে প্রতিটি রাতকে ঈদ বানিয়ে নিয়েছেন। আর পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার এই ঈদ তাদের অন্তরে কঠিন মুছিবত হয়ে যায় যাদের অন্তরে ব্যাধি ও শত্রুতা আছে।” (দলীল- আল মাওয়াহেবুল লাদুনীয়া ১ম খ- ২৭ পৃষ্ঠা, মিসর থেকে প্রকাশিত।)
আসুন এবার আমরা দেখি, হাফিযে হাদীছ আল্লামা হযরত কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপরোক্ত বক্তব্য মুবারক থেকে কীসব বিষয় প্রমাণিত হচ্ছে,
১) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাসে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠান করা মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহ্যবাহী তরীক্বা।
২) মুসলিম জাহান এই মহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে এবং দান-সদকা করে আসছে!
৩) মহান রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে ঈদ পালন করা মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী আমল।
৪) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে অধিক থেকে অধিক হারে নেক কাজ করা মুসলমান উনাদের একটি প্রিয় তরীক্বা হিসাবে গণ্য হয়ে আসছে।
৫) মহান রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনাতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়া এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ার বৈশিষ্ট্যম-িত বিশেষ আয়োজন করা মুসলমান উনাদের একটি অত্যন্ত প্রিয় আমল হিসাবে বিবেচিত।
৬) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মহান বরকতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকারী দের উপর আল্লাহ তায়ালা উনার ব্যাপক অনুগ্রহ সর্বদা বর্ষিত হয়ে আসছে।
৭) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার বৈশিষ্ট্যসমূহ হতে একটি অতীব সত্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যে বছর এই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, ঐ গোটা বছরই পরম নিরাপদে অতীত হয়। সুবহানাল্লাহ!
৮) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার অনুষ্ঠান নেক উদ্দেশ্য পূরণে খোশ সংবাদ প্রদানকারী।
৯) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ উনার রাত্রিতে আনন্দ উদযাপনকারী মুসলমানগণ উনারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত উনার ভাগীদার হন।
১০) পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করা এবং পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাসে প্রত্যকটি রাতেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ কারার আনন্দ উদযাপন করা ঐ জাতীয় লোকদের জন্য কঠিন মুছিবত, যাদের অন্তরে নাপাকী আছে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে দুশমনী আছে। নাউযুবিল্লাহ!
সুতরাং প্রমাণিত হলো- পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ নতুন কোনো আমল নয়, বরং সমগ্র পৃথীবির সব প্রান্তেই পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হয়ে আসছে। আর ইবলিস শ্রেণীর মানুষ যাদের অন্তরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ আছে তারাই একমাত্র পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিদয়াত বলে। নাউযুবিল্লাহ!
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-আল্লামা মুহম্মদ নূর উদ্দীন পলাশ। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার ফযীলত পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি (মহান আল্লাহ পাক) আপনার আলোচনা ও মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সমুন্নত ও বুলন্দ করেছি।” (পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)
স্বয়ং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার আলোচনা, মর্যাদা মুবারক সমুন্নত ও বুলন্দ করেছেন উনার আলোচনা, মর্যাদা, মুহব্বত উম্মতদেরকে কতটুকু ধারণ করতে হবে? বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান উনাদের অন্তরে এই বরকতময়, ফযীলতপূর্ণ আলোচনা বুলন্দ করতে হলে বা জারি করতে হলে পাঠ্যপুস্তকে খুব সুচারুরূপে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার আলোচনা, ফাযায়েল-ফযীলত ফুটিয়ে তুলার বিকল্প নেই। এর মধ্যেই রয়ে গেছে মুসলমানদের দুনিয়া ও পরকালের সফলতা।
সুতরাং ৯৮ ভাগ মুসলমানের পাঠ্যপুস্তক থেকে নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুয়ানীয় বিষয়সমূহ সম্পূর্ণরূপে উঠিয়ে দিয়ে এর পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় ও অত্যাধিক ফযীলতপূর্ণ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কিত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল।© আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Thursday, December 24, 2015

পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী অর্থাৎ মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: সবচাইতে মহান, বড় ও সম্মানিত এই দিনের জন্য আপনি কি প্রস্তুত?

সেই ছোটবেলা থেকেই একটি বাক্য প্রায়ই পড়তে হতো- ‘সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।’ তাইতো বিশ্বের সকল মানুষের মতো আমি, আপনি আমরা সকলেই অনেক ব্যস্ত। আমাদের নিজেদের জীবনকে শাইন করার জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্যই মূলত আমাদের এত ব্যস্ততা। আমাদের এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা এতইবেশি যে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকেই বিচ্যুত হয়ে গেছি। কারন মহান আল্লাহ পাক তিনি হলেন আমাদের খালিক্ব মালিক রব। আর তিনি এ সমস্ত কায়িনাত তথা আমাদের সকলকে ও সবকিছু সৃষ্টি করেছেন উনারই সম্মানিত ও প্রিয় হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, উনার মুহব্বতে। সুবহানাল্লাহ!
তাই আমাদের মনে রাখা উচিত- আমরা যতই ব্যস্ত হই না কেন- আমাদের এই জ্বলজ্বলে চক্ষু একদিন বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের এই পরিবার, সম্পত্তি সবকিছু ছেড়ে আলাদা হয়ে যেতে হবে। তাই আমাদের সবারই উচিত- কর্মব্যস্ত এই চলমান জীবন থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় বের করা- যাতে করে আমরা আমাদের খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার সম্মানিত ও প্রিয় হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, উনার মুহব্বতে সেই সময় ব্যয় করতে পারি।
আর শাহরুল আ’যম পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস ও উনার পবিত্র ১২ শরীফ তারিখ হলো সর্বোচ্চ সম্মানিত মাস ও দিন। তাই আমাদের সকলেরই উচিত পবিত্র এই মাস ও দিন উনাদেরকে যথাযথ তা’যীম তাকরীম করা, মুহব্বত করা ও খিদমতের আনজাম দেয়ার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া। এটা আমাদের ঈমানের দাবি, মুসলমানিত্বের দাবি।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-হামদ-ই-রাব্বি। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Monday, December 21, 2015

স্বীয় সন্তানদেরকে হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরয

স্বীয় সন্তানদেরকে হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরয। এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىِّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَدِّبُوْا اَوْلَادَكُمْ عَلـٰى ثَلَاثِ خِصَالٍ حُبِّ نَـبِـيِّكُمْ وَحُبِّ اَهْلِ بَيْتِهٖ وَقِرَاءَةِ الْقُرْاٰنِ
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা প্রদান করোÑ ১. তোমাদের যিনি নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, ২. উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং ৩. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত।” সুবহানাল্লাহ! (আল জামিউছ ছগীর ফী হাদীছিল বাশীর ওয়ান নাযীর লিস সুয়ূত্বী ১/২২, আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ১/৫৭, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২/৮৯, দায়লামী শরীফ, কাশফুল খফা লিল ‘আজূলানী ১/৮৫ ইত্যাদি)
এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক পিতা-মাতার উপর স্বীয় সন্তানদেরকে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয করে দিয়েছেনÑ ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক, ২. উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক এবং ৩. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত। সুবহানাল্লাহ!
এখানে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তারপর উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সর্বশেষ বলা হয়েছে সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ!
প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় হচ্ছে সরাসরি সম্মানিত ঈমান উনার সাথে সম্পৃক্ত। আর শেষোক্ত বিষয়টি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় শিক্ষার মাধ্যমে ঈমান লাভ হবে। আর শেষোক্ত বিষয়টি শিক্ষার মাধ্যমে আমল সুন্দর হবে।
আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, ঈমান পরিশুদ্ধ না থাকলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যায়। আর ঈমান ঠিক থাকলে, আমলে কিছু ত্রুটি থাকলেও সে নাজাত পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যেমন কারো অন্তরে যদি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত থাকে, নিঃসন্দেহে সে নাজাত পাবে। যদিও তার আমলে ত্রুটি থাকুক না কেন। এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَـجَـلِـىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ شَهِيْدًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مَغْفُوْرًا لَّهٗ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ تَائِبًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مُؤْمِنًا مُّسْتَكْمِلَ الْاِيْـمَانِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشَّرَهٗ مَلَكُ الْمَوْتِ بِالْـجَنَّةِ ثُـمَّ مُنْكَرٌ وَّنَكِيْرٌ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَفُّ اِلَـى الْـجَنَّةِ كَمَا تُزَفُّ الْعَرُوْسُ اِلـٰى بَيْتِ زَوْجِهَا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَحَ اللهُ لَهٗ فِـىْ قَبْرِهٖ بَابَيْنِ اِلَـى الْـجَنَّةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ اللهُ قَبْرَهٗ مَزَارَ مَلَائِكَةِ الرَّحْـمَةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ عَلَى السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ.
অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে কনেকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ব্যক্তি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি সম্মানিত আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার উপর ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعَةٌ اَنَا لَـهُمْ شَفِيْع يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُكْرِمُ لِذُرِّيَتِىْ وَالْقَاضِى لَـهُمْ حَوَائِجَهُمْ وَالسَّاعِىْ لَـهُمْ فِىْ اُمُوْرِهِمْ عَنْدَ مَا اِضْطَرُّوْا اِلَيْهِ وَالْمُحِبُّ لَـهُمْ بِقَلْبِه وَلِسَانِه
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন চার শ্রেণীর লোকদের সুপারিশ করবোÑ এক. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করবে। দুই. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মালী তথা আর্থিকভাবে খিদমত মুবারক উনার আনজাম দিবে। তিন. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জান দিয়ে তথা ক্বায়িকশ্রম দিয়ে খিদমত মুবারক উনার আনজাম দিবে। এবং চার. যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অন্তরে মুহব্বত করবে এবং জবানে উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবে।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ ৪/২২৯, জামউল জাওয়ামি’, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৭/১১, দায়লামী শরীফ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حضرت عَلِيٍّ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَفَاعَتِي لأمَّتِي مَنْ أحَبَّ أَهْلَ بَيْتِي وهم شيعتى.
অর্থ:- “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার শাফায়াত ওই সকল উম্মত উনাদের জন্য যাঁরা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদরেকে মুহব্বত করে থাকেন। আর উনারা হচ্ছেন আমার খাছ উম্মত তথা অনুসারী।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউছ ছগীর ২/১৪, আল ফাতহুল কাবীর ২/১৬৯, জামিউল আহাদীছ ১৩/৪১৫, জামউল জাওয়ামি’, তারীখে বাগদাদ ২/১৪৬ ইত্যাদি)
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন। কারো বাহ্যিক আমল সুন্দর; কিন্তু ঈমানে ত্রুটি রয়েছে, তাহলে সে নিশ্চিত জাহান্নামী। অর্থাৎ কারো পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বিশুদ্ধ এবং অতি সুন্দর; কিন্তু তার অন্তরে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে, তাহলে তার পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতসহ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে সে চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَكْتُوْبًا بَيْنَ عَيْنَيْهِ اٰيِسٌ مِّنْ رَّحْـمَةِ اللهِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ كَافِرًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَشُمَّ رَائِحَةَ الْـجنَّةِ.
অর্থ: “সাবধান! আর যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত উনার ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو أن رجلا صف بين الركن والمقام فصلى وصام ثم لقى الله مبغضا لاهل بيت محمد دخل النار.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো ব্যক্তি যদি সম্মানিত রুকন ইয়ামেন এবং মাক্বামে ইবরাহীম শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থানে সারিবদ্ধ হয়ে থাকে। অতঃপর নামায পড়ে এবং রোযা রাখে। কিন্তু এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয় যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (যাখাইরুল উক্ববা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৮, খ¦ছায়িছুল কুবরা ২/৪৬৫)
ইমাম ত্ববারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন,
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قالَ قالَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا يَبْغَضُنَا وَلَا يَحْسُدُنَا أَحَدٌ إِلَّا ذِيدَ عَنِ الْحَوْضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِسِيَاطٍ مِنْ نَارٍ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ করবে, পরকালে তাদেরকে সম্মানিত হাউযে কাওছার হতে আগুনের দোররা দ্বারা প্রহার করে তাড়িয়ে দেয়া হবে।” (আল মু’জামুল আওসাত্ব ৩/৩৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৭২, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৮, আছ ছওয়ায়িক্বুল মুহরিক্বাহ ২/৫০৪ )
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে এসেছে,
عن حضرت جابر بن عبد الله الانصاري رضى الله تعالى عنه قال خطبنا رسول الله صلى الله عليه و سلم فسمعته وهو يقول يا أيها الناس من أبغضنا اهل البيت حشره الله يوم القيامة يهوديا فقلت يا رسول الله وان صام وصلى قال وان صام وصلى وزعم انه مسلم.
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা মুবারক দিলেন এবং বলতে থাকলেন যে, হে লোক সকল! যারা আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, উনাদের বিরোধিতা করলো, তাদের হাশর-নশর হবে ইহুদীদের সাথে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদিও তারা রোযা রাখে এবং নামায পড়ে? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ! যদিও তারা রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দাবি করে যে, তারা মুসলমান। (তা সত্ত্বেও হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতা করার কারণে, উনাদের শত্রু হওয়ার কারণে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সমস্ত ইবাদত বিনষ্ট করে দিয়ে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন ইহুদীদের দলভুক্ত করে উঠাবেন।)” (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিতত্ববারণী ৪/২১২, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ১০/৪৭৫, জামউল জাওয়ামি‘ লিস সুয়ূত্বী, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৯/৭১২, তারীখে জুরজান ৩৬৯ পৃষ্ঠা)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حضرت عَلِيٍّ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من آذاني في عترتي فقد آذي الله عز وجل.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিলো সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিলো।” নাঊযুবিল্লাহ! (দায়লামী শরীফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حضرت عَلِيٍّ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من آذاني وعترتي فعليه لعنة الله.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমাকে এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কষ্ট দিলো, তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” নাঊযুবিল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯)

এরূপ আরো অনেক সম্মানিত বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ রয়েছে এবং এই বিষয়ে বাস্তবে অসংখ্য ঘটনাও রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অতএব, প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য স্বীয় সন্তানদেরকে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত শিক্ষা দেয়া ফরয উনার উপর ফরয। শুধু তাই নয়, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতসহ অন্য সকল যাহিরী ইলম শিক্ষা দেয়ার চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। সুবহানাল্লাহ!
আর মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক পেতে হলে অবশ্যই উনাদের সম্পর্কে, উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে জানা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয উনার উপর ফরয। সুবহানাল্লাহ! আর হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা হচ্ছেন মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরয হচ্ছে স্বীয় সন্তানদেরকে হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আবনা’ (ছেলে) আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক শিক্ষা দেয়া। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সকল দেশের সরকারের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন!
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক্ব।© আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Thursday, December 17, 2015

‘সম্মানিত ত্বাহির আলাইহিস সালাম’ নাম মুবারক উনার অর্থ ও তাৎপর্য মুবারক


اَلطَّاهِرُ (আত ত্বাহির) শব্দ মুবারকখানা আরবী ক্বাওয়াইদ وَاحِدٌ مُذَكَّرٌ اِسْمٌ فَاعِلٌ উনার ছীগাহ। উনার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হচ্ছেন اَلطَّهَارَةُ (আত ত্বহারাত)। মূল বর্ণ হচ্ছেন ط-ه- ر। অর্থ:Ñ পূত-পবিত্র, মহাপবিত্র, পূত-পবিত্রতাদানকারী। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْراً.
অর্থ: “হে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৩)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সম্মানিত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ قَسَّمَ الْـخَلْقَ قِسْمَيْنِ فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهِـمَا قِسْمًا ثُـمَّ جَعَلَ الْقِسْمَيْنِ اَثْلَاثًا فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا ثُلُثًا ثُـمَّ جَعَلَ الْاَثْلَاثَ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا قَبِيْلَةً ثُـمَّ جَعَلَ الْقَبَائِلَ بُيُوْتًا فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا بَيْتًا فَذٰلِكَ قَوْلُهٗ تَعَالـٰى{اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُـمْ تَطْهِيْراً} فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম ভাগে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উভয় ভাগকে তিন প্রকারে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম প্রকারে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর প্রত্যেক প্রকারকে গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্র মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর গোত্রকে সম্মানিত আহাল বা পরিবার মুবারক-এ বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম সম্মানিত আহাল বা পরিবার মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।’ সুবহানাল্লাহ! আর আমি এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, শিফা ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫ ইত্যাদি)
দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উনার বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ’ উনার মধ্যে একখানা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন,
حدث الضحاك بن مزاحم رضي الله عنه أن نبي الله صلى الله عليه وسلم كان يقول نحن أهل بيت طهرهم الله من شجرة النبوة وموضع الرسالة ومختلف الملائكة وبيت الرحمة ومعدن العلم.
অর্থ: “হযরত দ্বহ্হাক ইবনে মুযাহিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (প্রায়) ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা এতো অধিক যে, উনারা সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক ইত্যাদি সমস্ত কিছু থেকেও পবিত্র। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনারা সমস্ত কিছু থেকে বেনিয়াজ। সুবহানাল্লাহ! উনাদের পবিত্রতা ও ফযীলত মুবারক সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! উনাদের কারণেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি ইত্যাদি সমস্ত কিছুই ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত সম্মানিত আয়াত শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদুল বাশার, মালিকুল জান্নাহ, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার কারণেই সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক, সম্মানিত রিসালাত মুবারক, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি ইত্যাদি সমস্ত বিষয় মুবারকগুলো ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, এক মুহূর্তের তরেও উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা এতো অধিক পবিত্রতা মুবারক হাছিল করেছে যে, তা আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে; এমনকি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি পবিত্র, ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক যেমনিভাবে আরো পবিত্রতা হাছিল করেছেন, সম্মানিত ও বরকতময় হয়েছেন এবং সকলের উপর ফখর করেছেন, তেমনিভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত ধূলি-বালি মুবারক পেলেও সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আরো অধিক পবিত্রতা হাছিল করবেন, সম্মানিত ও বরকতময় হয়ে যাবেন এবং সকলের উপর ফখর করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। কেননা সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন বিদ‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিস্ম মুবারক উনার গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরো মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিস্ম মুবারক উনার যেই হুকুম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনারও ঠিক একই হুকুম। সুবহানাল্লাহ! যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত পবিত্রতা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান কত বেশি তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু পূত-পবিত্রই নন; বরং তিনি হচ্ছেন পূত-পবিত্রতাদানকারী। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত লখতে জিগার মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক রেখেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে যাহিরী-বাতিনী সর্বদিক থেকে হাক্বীক্বী পবিত্রতা দান করুন। আমীন!
الأزكى (আল আযকা)Ñ সর্বাধিক পূত-পবিত্র: যেহেতু ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি কায়িনাতের মাঝে সর্বাধিক পূত-পবিত্র এবং পূত-পবিত্রতাদানকারী, তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আবনা’ (ছেলে) সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক রেখেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ত্বাহির আলাইহিস সালাম নাম মুবারক উনার আরো একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন, তাযকিয়াদানকারী, ইছলাহকারী:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদারদের প্রতি দয়া-ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন যিনি তাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনিয়ে থাকেন। তাদেরকে তাযকিয়া তথা যাহিরী-বাতিনী ইসলাহ দান করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতঃপূর্বে সম্মানিত হিদায়াত মুবারক উনার উপর, সরল-সঠিক পথের উপর ছিল না। তারা প্রকাশ্য গুমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত ছিল।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদুল বাশার, মালিকুল জান্নাহ, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানার্থে জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী তাযকিয়াহ হাছিল করে থাকে, ইছলাহ হাছিল করে থাকে। সুবহানাল্লাহ! উনাকে যারা বিন্দু থেকে বিন্দুতমও মুহব্বত মুবারক করবে, উনাকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার সাথে স্মরণ করবে, উনাকে সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করবে, উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করবে তারা হাক্বীক্বী তাযকিয়াহ তথা পবিত্রতা হাছিল করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করবে। সুবহানাল্লাহ!
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক্ব। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়াত মুবারক

সম্মানিত রওযা শরীফ সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার একখানা বাগান মুবারক:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْقَبْرُ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ جَهَنَّمَ أَوْ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্ববর হচ্ছে জাহান্নামের গর্তসমূহ হতে একটি গর্ত অথবা সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার বাগানসমূহ থেকে একখানা সম্মানিত বাগান মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (ইছবাতু গাযাবিল ক্ববর লিলবাইহাক্বী ১/৫৫)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم:إِنَّمَا القَبْرُ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الجَنَّةِ أَوْ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ النَّارِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কবর হচ্ছে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার বাগানসমূহ থেকে একখানা সম্মানিত বাগান মুবারক অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহ হতে একটি গর্ত।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আল মু’জামুল আওসাত্ব লিত্ব ত্ববারনী ৮/২৭৩, মু’জামুশ শুয়ূখ ২/৮৬৭ ইত্যাদি)
স্বাভাবিকভাবে একজন ওয়ালীআল্লাহ উনার কবর বা মাজার শরীফ হচ্ছেন সম্মানতি জান্নাত উনার বাগানসমূহ থেকে একখানা বাগানস্বরূপ। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, যারা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করে থাকেন উনাদের কবরগুলোও সম্মানিত জান্নাত উনার বাগান মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত এবং সম্মানিত রহমত মুবারক উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারত মুবারক করার স্থান। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَحَ اللهُ لَهٗ فِـىْ قَبْرِهٖ بَابَيْنِ اِلَـى الْـجَنَّةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ اللهُ قَبْرَهٗ مَزَارَ مَلَائِكَةِ الرَّحْـمَةِ.
অর্থ: “সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ব্যক্তি উনার কবরকে সম্মানিত রহমত মুবারক উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত যিয়ারত মুবারক করার স্থান বানাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫)
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে যিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মালিক, বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার হুকুম কী? অবশ্য অবশ্যই ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার হুকুম মুবারক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার অনুরূপ। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরসহ সমস্ত কায়িনাতের ক্বিবলা, কেন্দ্র বিন্দু। সুবহানাল্লাহ! সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত কায়িনাত উনার গোলাম, খাদিম। প্রধান চার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা দায়িমীভাবে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক, ছানা-ছিফত মুবারক-এ মশগুল রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে দায়িমীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করে থাকেন, ঠিক তেমনিভাবে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই জন্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওই কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْنُ أَهْلُ بَيْت شَجَرَة النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক। সৃষ্টি জগতে আমি ব্যতীত আর কেউ আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার অধিকারী নেই। অর্থাৎ সৃষ্টি জগতে আমার পর পরই আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, ফযীলত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (তারতীবুল আমালী ১/২০২, আল ঈমা ইলা যাওয়ায়িদিল আমালী ৫/১৭৯)

সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ দুধপানকারিনী আছেন:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا مَاتَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ لَهٗ مُرْضِعًا فِى الْـجَنَّةِ.
অর্থ: “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একজন সম্মানিতা দুধপানকারিনী রয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا تُوُفِّـىَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ ابْنُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ لَهٗ مُرْضِعًا فِى الْـجَنَّةِ تُتِمُّ بَقِيَّةَ رَضَاعِهٖ
অর্থ: “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একজন সম্মানিতা দুধপানকারিনী রয়েছেন, যিনি উনার অবশিষ্ট দুধ মুবারক পান করার মেয়াদ পূর্ণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল আহাদ ওয়াল মাছানী শরীফ)
এরূপ আরো অনেক রিওয়ায়েত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
ইমামুল মুহাদ্দিছীন, ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যদিও এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই সম্মানিত হাদীছ শরীফগুলো আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আবনা’ (ছেলে) আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলের শান মুবারকেই প্রযোজ্য।” সুবহানাল্লাহ!
এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মাধ্যমে এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, সমস্ত কায়িনাতই হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাদিম। সুবহানাল্লাহ! উনারা সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর যখন উনাদেরকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়েছে, তখন থেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক-এ সম্মানিত জান্নাতী দুধমাতাগণ উনারা উনাদেরকে দুধ মুবারক পান করানো থেকে শুরু করে উনাদের যাবতীয় সমস্ত প্রকার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত বয়স মুবারক সম্মানিত দুধ মুবারক পান করার শেষ সীমায় উপনীত হয়েছেন, তখন সম্মানিত জান্নাতী দুধমাতাগণ উনারা উনাদের সম্মানিত দুধ মুবারক পান করানো থেকে বিরত থেকেছেন। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক-এ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দায়িমীভাবে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! এইভাবে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়ার বিষয়টি ফায়সালা মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, উনারা জান্নাতী বয়স মুবারক-এ উপনীত হওয়া পর্যন্ত উনাদের সম্মানিত বয়স মুবারক বাড়তে থাকেন। অতঃপর যখন উনারা সম্মানিত জান্নাতী বয়স মুবারক তথা ৩৩ বছর বয়স মুবারক-এ উপনীত হয়েছেন, তখন উনাদের বয়স মুবারক বৃদ্ধি পাওয়া বন্ধ হয়েছেন। উনারা বর্তমানে সেই সম্মানিত জান্নাতী বয়স মুবারকেই সম্মানিত অবস্থান মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের, বিশেষ করে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, খুছূছিয়াত মুবারক সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে কবূল করুন, হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক, মা’রিফত-মুহব্বত, তায়াল্লুক্ব-নিসবত, কুরবত মুবারক, পবিত্রতা ও ইছলাহী মুবারক নছীব করুন। আমীন!
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-আল্লামা মুহম্মদ ছিদ্দীকুর রহমান। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত (২)

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَااَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مّـِنْ رَّبّـِكُمْ وَشِفَاء لّـِمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لّـِلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـِمَّا يَـجْمَعُوْنَ.
অর্থ: “হে মানুষেরা! হে সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসী! অবশ্যই তোমাদের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সর্বপ্রকার ব্যাধিসমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যদানকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়াত দানকারী এবং সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য, খাছ করে ঈমানদারদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রহমতস্বরূপ আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। (সুবহানাল্লাহ) হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যে, ফযল, করম ও রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে, ঈদ পালন করে তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা, ঈদ পালন করাটা, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাটা সবকিছু থেকে উত্তম; যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ইউনূস শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৮)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার সম্মানার্থে খুশি প্রকাশ করা, ঈদ পালন করা কায়িনাতবাসীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মর্যাদা, ফাযায়েল-ফযীলতের দিক থেকে যেমনিভাবে কায়িনাত মাঝে একক অজুদ মুবারক, তেমনিভাবে উনার জন্য খুশি প্রকাশ করাটাও মাখলুকাতের সমস্ত আমল ও ইবাদত হতে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম। (সুবহানাল্লাহ) এ জন্যই আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانـما شهد غزوة بدر وحنين.
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেন বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা, এ জন্য খুশি প্রকাশ করা, মহাসম্মানিত বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক থাকার নামান্তর। আর বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক থাকার গুরুত্ব সম্পর্কে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّـهُ بِبَدْرٍ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে বদর প্রান্তরে সাহায্য করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আল ইমরান শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৩২)
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন,
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّـهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ ۙ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে অনেক প্রান্তরে এবং হুনাইন জিহাদের দিন সাহায্য করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা তওবা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ২৫)
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সমস্ত জিহাদেই সরাসরি খোদায়ী গাইবী মদদ নাযিল হয়েছে। তবে বদর ও হুনাইন জিহাদে সরাসরি খোদায়ী গাইবী মদদ নাযিল হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। আর মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা, এজন্য খুশি প্রকাশ করা, মহাসম্মানিত বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক থাকার হলো সেই ব্যক্তি দায়েমীভাবে গাইবী মদদ লাভ করতে থাকবে। দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিকভাবে মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মদদ, রহমত, বরকত, সাকীনা, দয়া, দান, ইহসান দায়িমীভাবে লাভ করবে এবং উনাদের দায়িমী নিসবতে সে সম্পৃক্ত থাকবে। সুবহানাল্লাহ
মূলকথা হলো, সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের মাধ্যমে যাবতীয় নিয়ামত মুবারক লাভ হয়। আর এজন্যই সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাকে কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে ঘোষণা মুবারক দেয়া হয়েছে।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ যায়েদ।© আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত (১)

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَااَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مّـِنْ رَّبّـِكُمْ وَشِفَاء لّـِمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لّـِلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـِمَّا يَـجْمَعُوْنَ.
অর্থ: “হে মানুষেরা! হে সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসী! অবশ্যই তোমাদের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সর্বপ্রকার ব্যাধিসমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যদানকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়াত দানকারী এবং সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য, খাছ করে ঈমানদারদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রহমতস্বরূপ আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। (সুবহানাল্লাহ) হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যে, ফযল, করম ও রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে, ঈদ পালন করে তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা, ঈদ পালন করাটা, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাটা সবকিছু থেকে উত্তম; যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ইউনূস শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৮)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার সম্মানার্থে খুশি প্রকাশ করা, ঈদ পালন করা কায়িনাতবাসীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মর্যাদা, ফাযায়িল-ফযীলতের দিক থেকে যেমনিভাবে কায়িনাত মাঝে একক অজুদ মুবারক, তেমনিভাবে উনার জন্য খুশি প্রকাশ করাটাও মাখলুকাতের সমস্ত আমল ও ইবাদত হতে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম। (সুবহানাল্লাহ) এ জন্যই আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘ছিদ্দীক্বে আকবর’। ‘ছিদ্দীক্ব’ শ্রেণীর মহান ব্যক্তিত্ব উনাদের মধ্যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। এখন সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বন্ধু হয়ে থাকবে। অর্থাৎ সেই ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই ‘ছিদ্দীক্ব’ উনাদের অন্তর্ভুক্ত তথা ‘ছিদ্দীক্ব’ হয়েই জীবন অতিবাহিত করবে। সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
أَنْعَمَ اللَّـهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا
অর্থ: “ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, ছিদ্দীক্বগণ, শহীদগণ, ছালিহীনগণ উনাদেরকে নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন। (সম্মানিত সূরা নিসা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৬৯)
এখন ফিকিরের বিষয় হলো, সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করে জান্নাতে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বন্ধু হয়ে থাকার মাধ্যমে ‘ছিদ্দীক্বিয়াত’ লাভ হয়। আর ছিদ্দীক্বগণ উনাদেরকে যাবতীয় নিয়ামত দেয়ার ব্যাপারে স্বয়ং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে সরাসরি ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলকথা হলো, সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের মাধ্যমে যাবতীয় নিয়ামত মুবারক লাভ হয়। আর এ জন্যই সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাকে কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে ঘোষণা মুবারক দেওয়া হয়েছে।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ যায়েদ। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

এক নজরে ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ সাইয়্যিদুনা হযরত ছানী আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক

সম্মানিত নাম মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়িব আলাইহিস সালাম।
সম্মানিত লক্বব মুবারক: ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, আল আবাররু, আল আজওয়াদ এছাড়াও আরো অসংখ্য অগণিত। সুবহানাল্লাহ!
যেই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ছানী আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত আব্বাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত দাদাজান আলাইহিস সালাম: আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম।
মহাসম্মানিতা দাদীজান আলাইহাস সালাম: সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার প্রায় ৯ বছর পূর্বে মহাসম্মানিত রবী‘উল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ২ তারীখ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: সম্মানিত মক্কা শরীফ।
সম্মানিত অবস্থান মুবারক: সম্মানিত মক্কা শরীফ।
ভাই-বোন আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম: চার ভাই এবং চার বোন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন,
১. সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম,
২. সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম,
৩. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়িব আলাইহিস সালাম,
৪. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম,
৫. সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বইয়্যাহ আলাইহাস সালাম,
৬. সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম
৭. সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং
৮. সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ভাই উনাদের মধ্যে উনার অবস্থান মুবারক: ছানী তথা দ্বিতীয়।
ভাই-বোন আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে উনার সম্মানিত অবস্থান মুবারক: তৃতীয়।
মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশের ৯ বছর পূর্বে ৮ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার স্থান মুবারক: সম্মানিত মক্কা শরীফ।
দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারক: কয়েক দিন।
সম্মানিত রওযা শরীফ: সম্মানিত মক্কা শরীফ।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ ছিদ্দীকুর রহমান। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Monday, December 14, 2015

মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধীরা আবু লাহাবের চেয়ে কোটি কোটিগুণ নিকৃষ্ট এবং জাহান্নামের কীট

আবু লাহাব একাধারে বারো বছর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করেছিল। মহান আল্লাহ পাক তিনি আবু লাহাব ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সকলের ধ্বংসের ব্যাপারে পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ নাযিল করেছেন এবং তারা আযাবে-গযবে ধ্বংস হয়ে জাহান্নামের কীটে পরিণত হয়ে গেছে। তার কুফরী-শিরকী সারা জীবনের সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দিয়েছিলো একটি আমল ব্যতীত। আর সেই আমলটি হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি হয়ে তার বাঁদী হযরত ছুয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করার জন্য আযাদ করে দেয়া। এতোটুকুই ছিল তার আমল।
সে কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক নেয়াতে খুশি প্রকাশ করেনি, বরং সে তার ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছিল। তার এই আমলের জন্য তাকে জাহান্নামের মধ্যে বিশেষ নিয়ামতের ব্যবস্থা করা হয়েছে; যার ফলে সে প্রতি সোমবার শরীফ-এ ঠাণ্ডা পানি পেয়ে থাকে, যা পান করার কারণে বিগত সপ্তাহের আযাব-গযব অনুভূত হয় না। সুবহানাল্লাহ!
এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান যামানার যে সমস্ত কথিত মাওলানা, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, ছূফী, দরবেশ, ইসলামী চিন্তাবিদ দাবিদাররা মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতা করে যাচ্ছে তারা মূলত আবু লাহাবের চেয়ে কোটি কোটিগুণ নিকৃষ্ট। কারণ আবু লাহাব ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় দুনিয়ার বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বর্তমান যামানার জাহান্নামের নিকৃষ্ট কীট উলামায়ে ‘সূ’রা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন তো দূরের কথা, বরং পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন বিদয়াত, নাজায়িয ফতওয়া দিয়ে যাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদেরকে মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নেক দৃষ্টি ও দোয়া মুবারক উনার উসীলায় এ সকল নিকৃষ্ট কীটের ওয়াসওয়াসা থেকে হিফাযত করুন এবং অনন্তকাল ধরে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার তাওফীক দান করুন। আমিন।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ জিয়াউদ্দীন (তুষার), উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকা। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

পবিত্র মীলাদ শরীফ থেকে বিরত থাকার অর্থ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মূল হলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এই সত্যটি অনেক মুসলমান না বুঝলেও কাফির, মুশরিকরা খুব ভালো করে বুঝেছে। আর তাই তো ওরা মুসলমানগণ উনাদের মাঝ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দূরে সরানোর অশেষ ভাবনা ও অপচেষ্টা করে আসছে।
ইহুদী, নাছারা ও মুশরিকরা তাদের স্থানীয় দোসরদের মাধ্যমে আমাদের সমাজ থেকে পবিত্র মীলাদ শরীফ একদম উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত রহমত ও বরকতপূর্ণ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপন থেকে সাধারণ মুসলমানগণদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছে এবং প্রচার করছে ঈদ মাত্র ২টি।
তাই তো রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ঘরে ঘরে পবিত্র মীলাদ শরীফ চালু করে দিয়েছেন; যাতে মুসলমানগণ ফয়েয, বরকত পেয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। দীর্ঘ দিন ব্যাপী বিভিন্ন মাহফিলের মাধ্যমে ঐতিহাসিক পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনাকে পালন করে এই দিনটি পালনের সচেতনতা সৃষ্টি করছেন। এভাবেই ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শত্রুদের সমস্ত প্রকার চক্রান্ত। আসুন, রাজারবাগ দরবার শরীফ গিয়ে পবিত্র ঈদে মীলাদ শরীফ উনার রহমত, বরকত, সাকিনা ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ অর্জন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করি।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-লে. কর্নেল মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন খান, পিএসসি (অব.) ঢাকা। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

হাসপাতালে নারীর নিরাপত্তাহীনতা এবং শরয়ী পর্দাভিত্তিক আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা

সম্প্রতি রাজধানীতে ইউনাইটেড হাসপাতাল নামক এক অভিজাত হাসপাতালে এক নারী রোগীর শ্লীলতাহানীর খবর ফাঁস হয়েছে। অপারেশনের পর রোগীকে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে হস্ত সঞ্চালন করে ওই হাসপাতালের সাইফুল নামের এক স্টাফ নার্স। স্পর্শকাতর জায়গায় অনুভূতি পেয়ে জ্ঞান ফিরে আসার পর রোগী দেখতে পান তার দেহে এক পুরুষের হাত, এক পর্যায়ে সেই হাতটি সরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু অপারেশনের পর নিথর হয়ে পড়ে থাকা নারী নিজের ইজ্জত আব্রুর রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি। মহিলার স্বামী দেখতে আসলে প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর তাদের সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়। এসময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে যেন তার স্বামীকে এসব কথা না জানায়।
ইউনাইটেড হাসপাতালের এই ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। এরূপ ঘটনা অনেক হাসপাতালেই ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত; যা কোনো নারী লোক লজ্জার ভয়ে প্রকাশ করেনা কিংবা অপরাধী বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হুমকীতে অথবা নগদ টাকা পয়সার লোভে গোপন রাখে।
এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন পৃথকভাবে শুধু নারীদের জন্য হাসপাতাল। যেখানে রিসিপশনিস্ট থেকে শুরু করে রেডিওগ্রাফারসহ সকল স্টাফ, নার্স, ডাক্তার, সার্জন সকলেই হবে নারী। এতে একদিক থেকে যেমন নারী রোগীদের ইজ্জত আব্রুর, সম্ভ্রম নিরাপত্তায় থাকবে; পাশাপাশি বহু অসহায় বেকার নারী নার্সদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এরূপ সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতাল পাওয়া স্বপ্নের মতো।
তবে নারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক খবর হচ্ছে- বাংলাদেশে একটি মাত্র হাসপাতালই আছে যেখানে সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দায় শুধুমাত্র নারী চিকিৎসক, নারী প্যাথলজিস্ট, নারী স্টাফ দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই ব্যতিক্রমধর্মী ও সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দায় চিকিৎসাদানকারী হাসপাতালটির নাম হচ্ছে আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল; যা সম্ভ্রান্ত নারীদের জন্য অন্তরের প্রশান্তি। হাসপাতালটি ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশেই প্রতিষ্ঠিত। আমি অত্র প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করছি।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ মুবারক হো!

সবচাইতে বড় ও মহান এ দিবস উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলোতে ‘বিশেষ ক্রোড়পত্র’ বের করতে হবে
সারাবছর ধরেই কতশত দিবস পালিত হচ্ছে। আর এসব দিবসগুলোকে নিয়ে দেশের মিডিয়া, পত্র-পত্রিকাগুলোতেই বেশি হইচই দেখা যায়। তারা এ সব দিবসকে নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল, নিবন্ধসহ বিশেষ ক্রোড়পত্রও বের করে থাকে। যদিও এর বেশিরভাগ দিবসই ইসলাম সংশ্লিষ্ট নয়। আবার এসবের কোনো কোনোটা ইসলাম বিরুদ্ধও বটে।
প্রতিবছর দেখা যায়, নারী দিবস, হাত ধোয়া দিবসের মতো অমুসলিমদের বিভিন্ন দিবস যেমন- ক্রিসমাস যে, পূজা, পহেলা বৈশাখ, বুদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি নিয়ে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সংবাদপত্রগুলো অনেক ধরনের লেখালেখি করে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন ইসলামী দিবস বিশেষ করে পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে ছোট্ট করে গুটিকতক লাইন দুয়েক লিখা ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকাই রাখে না সংবাদমাধ্যমগুলো।
আমরা জানি- অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমগুলোই কারো না কারো পক্ষপাতিত্ব বা পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই টিকে আছে বা থাকে। তাই দেখা যায় তাদের মতবাদ, মনোভাব, ভাবধারাকেই সবসময় হাইলাইট করতে বাধ্য হয় দালাল সাংবাদিকরা। কিন্তু সকলকে মনে রাখতে হবে- এটা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ। এখানে মুসলমানদের বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
তাই অনলাইন সংবাদ মাধ্যম হোক বা প্রিন্ট সংবাদপত্র হোক সবারই উচিত হবে- আসন্ন পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে বিশেষ আর্টিকেল, বিশেষ নিবন্ধ ও বিশেষ ক্রোড়পত্র বেরা করা।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-রিয়াসাত পারভেজ। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

পবিত্র ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছেন-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সঠিক তারিখ

ধর্মব্যবসায়ী, মুনাফিক, ভণ্ড শ্রেণীর কিছু লোক মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য বলে থাকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তাই মতভেদযুক্ত বিষয়ে আমল করা যাবে না। অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
আসলে এই বাতিল ফিরক্বাগুলো মুনাফিক হওয়ার কারণে সত্য বিষয় গোপন করে। দেখুন, ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার তারিখ, বার, মাস সবই বর্ণনা করা আছে। হাফিযে হাদীছ হযরত আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেটা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন-

ﻋﻦ ﻋﻔﺎﻥ سليم بن حيان ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﻣﻴﻦ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﺎﻡ ﺍﻟﻔﻴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﺭﺑﻴﻊ ﺍﻻﻭﻝ

অর্থ: হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হতে বর্ণিত, তিনি হযরত ছালিম ইবনে হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ঘটে হস্তি বাহিনী বর্ষের সুমহান ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল আযীম শরীফ।” (দলীল: মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা; বুলুগুল আমানী শরহিল ফতহুর রব্বানী, ২য় খ- ১৮৯ পৃষ্ঠা; বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩য় খ- ১০৯ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা- দারূল ফিকর, বৈরূত লেবানন)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবীগণ অত্যন্ত ছেকাহ বা বিশ্বস্ত। রাবীগণের নাম ও উনাদের সম্পর্কে রিজাল বিশারদগণ কি বলেছেন আসুন দেখা যাক। উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদে রাবীগণ হচ্ছেন- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি।
সনদের উপরের দু’জনতো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, উনাদের তো কোনো তুলনা নেই। অপর তিন জন রাবী সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছালিম ইবনে হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সম্পর্কে রিজালের কিতাবে বলা হয়েছে- উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, ছিকাহ, তীক্ষè স্মরণ শক্তিসম্পন্ন, বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।” (দলীল: খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব, ২য় খ- ১২৬ পৃষ্ঠা)
শুধু তাই নয়, ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার অন্য সনদেও এ বিষয়ে হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে। হযরত ইমাম হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
“হযরত আল্লামা ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি (তাবেয়ী) তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।”
হযরত ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন- উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। (দলীল: আল মুস্তাদরাকে হাকিম ২য় খ- ৬৫৯ পৃষ্ঠা- কিতাবুল মানাকিব অধ্যায়, হাদীছ শরীফ নম্বর ৪১৮২)
সুতরাং আমরা ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার তারিখ জানতে পারলাম। এবার আসুন দেখা যাক, পরবর্তী উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এ বিষয়ে কি বলেছেন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আলিম হযরত আল্লামা ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ রাতের শেষ ভাগে।” (দলীল: কিতাবুল ওয়াফা পৃষ্ঠা ৮৭। লেখক- আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, প্রকাশনা- দারূল কুতুব ইসলামীয়া, বৈরূত লেবানন)
হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ...১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীদের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার দিবসে উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার স্থান যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জারি রয়েছে।” (দলীল: শরহুল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হযরত ইমাম ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দলীল: সিরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা)
ঐতিহাসিক হযরত ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর সুমহান ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ রাতে অর্থাৎ ছুবহে ছদিকের সময় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন ছিলো বাদশাহ নাওয়াশেরের শাষণকাল।” (দলীল: সিরাতে নববীয়া, ৮১ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল রাতের শেষ ভাগে অর্থাৎ ছুবহে ছদিকের সময় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দলীল: তারিখে ওমুম ওয়াল মুলক, ২য় খন্ড ১২৫ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, “জমহুর উলামায়ে কিরাম উনাদের নিকট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘মহাপবিত্র ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ’ই প্রসিদ্ধ। মহাপবিত্র ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সুমহান দিবস হিসাবে সবাই পালন করে আসছেন।” (দলীল: বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩য় খন্ড ১০৯ পৃষ্ঠা, শরহুল মাওয়াহেব ২য় খন্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)
উপমহাদেশের বিখ্যাত আলিম ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখ’ই মশহুর। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীদের আমল হলো- উক্ত তারিখে উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান যিয়ারত করতেন।” (দলীল: মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)
তিনি আরো বলেন, “প্রসিদ্ধ সীরাতবিদদের মতে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছে হস্তীবর্ষের ৫০ দিন পর। এ মতই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ যে- তা ছিলো পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার সম্মানিত ১২ তারিখ। প্রসিদ্ধ আলিম ও ইতিহাসবিদগণ উনারা এ বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন করেছেন।” (দলীল: মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ, ৮১ পৃষ্ঠা)
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “সমস্ত মুসলমানগণ এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত হয়েছেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” (দলীল: মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)
শুধু তাই নয়, বর্তমানে যেসব গুমরাহ ওহাবী সালাফী বাতিল ফিরক্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার তারিখ মহাসম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে অস্বীকার করে, তাদের গুরু লা-মাযহাবী নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালি সে তার কিতাবে লিখেছে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন পবিত্র মক্কা শরীফে খ্রিস্টান বাদশাহ আবরাহার হস্তী বাহিনীর বছর পবিত্র ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফে ছুবহে ছাদিকের সময়, এটার উপর হযরত উলামায়ে কিরাম উনারা একমত হয়েছেন এবং এটা হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন ও ঐকমত্য পোষণ করেছেন।” (দলীল: শামামাতুর আনবার ইয়ার ফি মাওলিদে খায়রিল বারিয়াহ, ৭ পৃষ্ঠা)
সুতরাং এত স্পষ্ট এবং বিশুদ্ধ দলীল থাকার পরও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার তারিখ সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ নিয়ে বিরোধিতা করা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তি ও গুমরাহীর নামান্তর।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ নূর উদ্দীন পলাশ। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Sunday, December 13, 2015

পবিত্র হিজরত মুবারক ও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারক

আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী ও ফযীলত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি একাধিক স্থানে উনার পবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। উনার প্রশংসায় অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পরে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী তিনিই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করার লক্ষ্যে উনার মাল ও জান সব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ উনি মাল ও জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অধিক মুহব্বত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত করবে।”
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি মুহব্বত না করবে।”
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক উনার কথা জানালেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে প্রিয় ছাহাবী খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আমাকে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ যেতে হবে। আর সেই পবিত্র হিজরত মুবারকের সময় আপনিই হবেন আমার একমাত্র সঙ্গী। কাজেই আপনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকুন। পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক এলে আমি আপনাকে জানাবো।
এদিকে এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। পবিত্র হিজরত মুবারক উনার পথে বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্যে গারে ছুর বা ছাওর পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে অনেক ছিদ্র রয়েছে। সে ছিদ্রতে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পাগড়ী মুবারক ও চাদর মুবারক টুকরো টুকরো করে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করার মতো কোনো কাপড় অবশিষ্ট রইলো না। তাই সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পা মুবারক উনার গোড়ালি মুবারক দ্বারা উক্ত ছিদ্রের মুখে চাপ দিয়ে রাখলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার উক্ত জানু মুবারক উনার উপর মাথা মুবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
উল্লিখিত ছিদ্রের ভিতর অবস্থান করছিল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যুগের একটি সাপ। সাপটি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত লাভ করার উদ্দেশ্যই এখানে অবস্থান করছিল। সাপটি শত চেষ্টা করেও বের হতে না পেরে অপারগ হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারকে আঘাত করলো। আঘাতের সাথে সাথে বিষের ক্রিয়ায় এবং বিষের যন্ত্রণায় উনার চোখ মুবারক দিয়ে দর দর করে পানি মুবারক পড়তে লাগলো। তবুও তিনি নিজ পা মুবারক একটুও নড়াচড়া করলেন না যেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক উনার কোনো ব্যাঘাত না হয়। হঠাৎ করে উনার চোখ মুবারক উনার এক ফোঁটা পানি মুবারক আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার উপর পড়লো। সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক ভেঙে গেলো। দেখলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বিষের যন্ত্রণায় কাঁদছেন।
এ অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ মুখ মুবারক থেকে একটু নূরুল বারাকাত মুবারক (থু থু) মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আপনার এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করলেন না?” জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঘুম মুবারক উনার ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনার সাথে বেয়াদবী হবে ভেবে আমি কোনো নড়াচড়া করিনি এবং আপনাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করিনি। সুবহানাল্লাহ!
ফিকিরের বিষয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কত গাঢ় মুহব্বত ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এত গাঢ় মুহব্বত উনার পরিপ্রেক্ষিতে উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যেকোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি যে কোনো প্রকারের ইহসান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার ইহসান ব্যতীত। অর্থাৎ উনারটাও দেয়া হয়েছে- তবে তিনি যেহেতু অনেক বেশি খিদমত মুবারক করেছেন তাই- স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন উনাকে বিশেষভাবে প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ধন-সম্পদ। আর আমি যদি আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই (তোমাদের সঙ্গী) অর্থাৎ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ তায়ালা উনার বন্ধু।” (তিরমিযী শরীফ)
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-আল্লামা মুফতী মুহম্মদ আবুল খায়ের। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

আপনি কি জানেন কোন্ তিন ব্যক্তি যুগযুগ ধরে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতিসাধন করে আসছে?

একদিন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ২য় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আপনি কি জানেন কোন্ ব্যক্তি বা কারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতিসাধন করে থাকে। তখন তিনি বললেন, আমার সেটা জানা নেই। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, প্রথমতঃ উলামায়ে সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ী আলিম, দ্বিতীয়তঃ যারা কিতাবের অপব্যাখ্যা করে, তাদের মুনাফিকী, তৃতীয়তঃ গুমরাহ শাসক, তাদের গুমরাহীমূলক শাসন ব্যবস্থা। এরা যুগ যুগ ধরে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছে। বর্তমানে আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি। প্রথমতঃ উলামায়ে সূ’রা ফতওয়া দিচ্ছে- “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয, এতো পর্দার দরকার নেই ইত্যাদি। নাউযুবিল্লাহ! আর মুনাফিকরা এর ইন্ধন যোগায়, একটা অবস্থানে পৌঁছায় আর গুমরাহ শাসকদের পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইলম নেই, তাই তারা সেটা বাস্তবায়ন করে। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার উসীলায় আমাদেরকে এই তিন ব্যক্তির মুখোশ উন্মোচন করার তাওফীক দান করেন। আমীন!
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ ইমন খান। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Thursday, December 3, 2015

সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর মহাপবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনে কোনো ঈমানদার মুসলমান বাধা দিতে পারে না-১


একমাত্র গুমরাহ বিদয়াতী ওহাবী খারেজী সম্প্রদায়ের অনুসারীরাই বাধা দিয়ে থাকে! নাউযুবিল্লাহ!
কুল-কায়িনাতে মাঝে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল ইজ্জত উনার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম পবিত্র ইবাদত- সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনে বহুদিন যাবৎ বহু প্রকার গুমরাহ বিদয়াতী ওহাবী খারেজী সম্প্রদায়ের অনুসারী গং বাধা দিয়ে আসছে। তারা নানা প্রকার মিথ্যা তোহমত, মিথ্যা বানোয়াট ইতিহাস, মনগড়া তথ্য-উপাত্ত এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অপব্যাখ্যা করে ধর্মপ্রাণ ঈমানদার মুসলমানগণ উনাদের মাঝে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে আসছে। বিশেষ করে প্রতিবছর মহাপবিত্র সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস আসলেই এসব গুমরাহ বিদয়াতী ওহাবী খারেজী সম্প্রদায়ের অনুসারীরা বিভিন্নভাবে তাদের অপতৎপরতা শুরু করে দেয়। নাউযুবিল্লাহ! এসব ক্ষেত্রে তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা ভাঙ্গা রেকর্ডের ন্যায় শুনাতে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা ওইসব গুমরাহ বিদয়াতী ওহাবী খারেজীদের ভাঙ্গা রেকর্ডের দাঁতভাঙ্গা জবাব তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ। যাতে করে সারাবিশ্বের তামাম ধর্মপ্রাণ ঈমানদার মুসলমান উনাদের ঈমান আরো মজবুত এবং সুদৃঢ় হয়।
-কাট্টা গুমরাহ বিদয়াতী ওহাবী খারেজীরা বলে- প্রথমতঃ এটি রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিংবা উনার খলীফা উনাদের সুন্নাত ছিল না। ফলে এটি একটি নিষিদ্ধ নব উদ্ভাবন তথা বিদয়াত; তাই এটি পরিত্যাজ্য। নাউযুবিল্লাহ!
প্রিয় পাঠক! কত বড় মিথ্যাবাদী মুনাফিক হলে এমন মিথ্যা তোহমত তারা দিতে পারে তা কল্পনা করলেও গাঁ শিউরে উঠে। কারণ সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা, উদযাপন করাতো খোদ ইলাহী পাক উনারই নির্দেশ মুবারক। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক করেন,
قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
অর্র্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে কারণে তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক হুকুম বা নির্দেশের কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তা পালন করেন অর্থাৎ উদযাপন করেন সর্বপ্রথম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই। খুশি প্রকাশ করে উনারা তাবারুকের ব্যবস্থাসহ আযীমুশ শান মাহফিলের আয়োজন করেন এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মুবারক মাহফিলে উপস্থিত হয়ে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াতের সুসংবাদ প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك
অর্র্থ: “বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি আযীমুশ শান বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে সমবেত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার কুদরতী এবং মু’জিযা শরীফ সমৃদ্ধ ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস মুবারক, এই দিবস মুবারক অর্র্থাৎ এই দিবস মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে উনার মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন অর্থাৎ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন তখন সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ আহলান সাহলান জানিয়ে পবিত্র আসন মুবারকে বসালেন।) মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এমন আযীমুশ শান মাহফিল করতে দেখে তিনি উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জন্য রহমতের দরজা উš§ুক্ত করে দিয়েছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ আমল করবে অর্থাৎ সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপন করবে, আপনাদের মতো উনারাও রহমত ও মাগফিরাত এবং নাজাত লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
প্রিয় পাঠক! মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা খোদ মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক; যা মান্য করা জিন-ইনসানসহ কুল-কায়িনাতের সকলের জন্যই ফরয। আর এই পবিত্র ফরয সর্বোত্তম আমল ইবাদত আনুষ্ঠানিকভাবে আমলে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই। উনাদের এই মুবারক ফরয আমল ইবাদতে খুশি প্রকাশ করে রহমত মাগফিরাত এবং নাজাতের সুসংবাদ দিয়েছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা সম্পর্কে কাট্টা গুমরাহ বিদয়াতী ওহাবী খারেজীদের প্রথম প্রলাপ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং খোঁড়া য্ুিক্ত হিসেবে প্রমাণিত হলো।
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-মুহম্মদ মুনতাসীর রহমান। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, কুরবত-নৈকট্য, তালাশকারিনী মহিলাগণ উনাদের উদ্দেশ্যে ....

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لوكنت امرا لاحد ن يسجد لاحد لامرت المراة ان تسجد لزوجها
অর্থ: “আমি যদি কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে মহিলাদেরকে আদেশ দিতাম, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে।” (সুনানুল কুবরা শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, কুবরত-নৈকট্য তালাশকারিনী মহিলাগণ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানার আলোকে আমল করে থাকেন। উনারা উনার স্বামীর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টিকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি মনে করে থাকেন।
মহিলাগণ উনারা যদি নিম্ন লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি সর্বদা গভীর দৃষ্টি রাখেন তাহলে মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, তায়াল্লুক-নিসবতপ্রাপ্তির বিষয়টি অতীব সহজ হবে-
১) স্বামী বাইরে থেকে এলে উনাকে আহলান-সাহলান (স্বাগতম) জানানোর জন্য আহলিয়া (স্ত্রী)কে দরজায় এগিয়ে আসা। স্বামীর হাতে কোনো জিনিসপত্র থাকলে তা নিজের হাতে নেয়ার চেষ্টা করা।
২) স্বামী বাইরে থেকে আসলে বাতাসের ব্যবস্থা করা। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা।
৩) সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সাথে মুহব্বত-ভালোবাসা মিশ্রিত কথা-বার্তা বলা। স্বামীর সামনে উনার ভালো গুণাবলীর কথাগুলো উল্লেখ করে উনার প্রশংসা করা। উনার সম্মান-মর্যাদা বজায় রাখা।
৪) বিশেষ বিশেষ দিন বা উপলক্ষে স্বামীর হাতে, কপালে বুছা দেয়া।
৫) স্বামীর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। (মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার আহলিয়া (স্ত্রী) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন)
৬) রান্না-বান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন, যেভাবে পছন্দ করেন, তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
৭) স্বামীর সামনে সব সময় হাস্যজ্জ্বল বদনে থাকা।
৮) স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে কিংবা রান্না-বান্নার পোশাকে উনার সামনে না যাওয়া।
৯) স্বামীর সামনে কখনোই নিজের কণ্ঠস্বরকে উচু না করা। স্মরণ রাখতে হবে, মহিলাগণ উনাদের সৌন্দর্য উনাদের নম্র কন্ঠে।
১০) সন্তানগণের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও ছানা-ছিফত করা।
১১) নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনদের সামনে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রশংসার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা এবং শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনোই স্বামীর বিরুদ্ধে উনাদের নিকট কোনো অভিযোগ না করা।
১২) সুযোগ-সুবিধা বুঝে স্বামীকে নিজহাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
১৩) কখনো স্বামীর আভ্যন্তরীণ গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। তাতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
১৪) স্বামী কখনো রাগাম্বিত হলে চুপ থাকা। সম্ভব হলে স্বামীর রাগ থামানোর ব্যবস্থা করা। যদি তিনি অন্যায়ভাবে রেগে থাকেন, তাহলে অন্য সময়ে উনার মেজাজ-মর্জি বুঝে সমঝোতার ব্যবস্থা করা।
১৫) কখনোই মুখে মুখে তর্ক-বিতর্ক করা যাবে না। কেননা, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচ্ছন্নতা তথা বিচ্ছেদ দেখা দেয়।
১৬) স্বামীর মাতা-পিতাকে নিজের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে সাধ্যানুযায়ী কিছু কিছু হাদিয়া দেয়া।
১৭) সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব-অনটনের সময় উনাকে সহযোগিতা করা।
উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “একদিন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরজ করলাম- ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!! (আমার পূর্ব স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাবো? তাদেরকে তো আমি এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। তারা তো আমারই সন্তান। তিনি বললেন- হ্যাঁ; তাদের জন্য আপনি যে পরিমাণ সম্পদ খরচ করবেন তার প্রতিদান আপনাকে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
১৮) স্বামীর আদেশ-নিষেধ পালন এবং উনার সংসারে খিদমত ইত্যাদির মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি, নৈকট্য, কুরবত মুবারক কামনা করা।
১৯) ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি হাদিয়া উপঢৌকন ইত্যাদি যা প্রাপ্তি ঘটে তা স্বামীর উসীলায় হয়েছে বলে মনে করা। █║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-আল্লামা মুফতী মুহম্মদ আল কাওসার আহমদ। © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net

Wednesday, December 2, 2015

সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছেন পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ।
যা কুল-কায়িনাতের সকল রাত ও দিনের চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যদাসম্পন্ন ও ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন মুবারক-২

দশম হিজরী শতক উনার মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ই’জাযুল কুরআন শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ্য করেন,
وَمَوْلَانَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا زُجَّ بِهٖ فِىْ عَالَـمِ الْعِزَّةِ اَرَادَ اَنْ يـَّخْلَعَ نَعْلَيْهِ فَاِذَا النّـِدَاءُ يَا مـُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَخْلَعْ نَعْلَيْكَ. فَقَالَ يَا رَبِّ سَــمِعْتُكَ تَقُوْلُ لِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ .فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَئِنْ اَمَرْتُ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ بِنَزْعِ نَعْلَيْهِ عَلٰى جَبَلِ الطُّوْرِ فَقَدْ اَبَحْنَا لَكَ اَنْ تَطَأَ بِنَعْلَيْكَ عَلٰى بَسَاطِ النُّوْرِ لِاَنَّكَ الْمُكَرَّمُ عِنْدَنَا وَالْعَزِيْزُ لَدَيْنَا.
অর্থ: ‘আর আমাদের যিনি মাওলা, নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন (সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে) সম্মানিত ইয্যত উনার জগতে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তথা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ মুবারক খুলে সম্মানিত আরশে আযীম তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন কিনা সেই বিষয়টি চিন্তা মুবারক করলেন। এমতাস্থায় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক করেন, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলবেন না। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করুন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আয় বারে ইলাহী, আমিতো শুনেছি, আপনি জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,
فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ
অর্থ: “(আপনি সম্মানিত তূর পাহাড়ে তাশরীফ মুবারক রাখতে যাচ্ছেন। তাই) আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলুন।” (সম্মানিত সূরা ত্বহা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ:১২)
অর্থাৎ আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ মুবারক খুলে সম্মানিত তূর পাহাড়ে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করুন।
তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদিও আমি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে সম্মানিত তূর পাহাড়ে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেছি। কিন্তু আমি আপনার ক্ষেত্রে এটাই পছন্দ করেছি যে, আপনি যেন আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ সম্মানিত নূর মুবারক উনার প্রশস্ত ময়দান মুবারক-এ তথা নূরে নূরময় সম্মানিত নূরানী আরশে আযীম মুবারক-এ তাশরীফ গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা আপনি আমার নিকট সবচেয়ে অধিক সম্মানিত এবং আমার নিকট সবচেয়ে অধিক প্রিয়, মাহবূব। সুবহানাল্লাহ! (আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের পরশে, আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের ধুলি মুবারক উনাদের স্পর্শ মুবারক-এ ধন্য হবেন, শান-মান, ফাযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করবেন। শুধু তাই নয়, আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক উনার কারণে বরকতময় হয়ে আরো পবিত্রতা হাছিল করবেন এবং অন্য সবার উপর ফখর করবেন।) সুবহানাল্লাহ! (ই’জাযুল কুরআন শরীফ ৩/৬৩)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মাটি, ধূলি-বালি যার কোনো ক্বদর নেই; কিন্তু নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত স্পর্শ মুবারক-এ আসার কারণে উক্ত মাটি, ধূলি-বালির মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা যদি আসমান-যমীন, কা’বা শরীফ, কুর্সী শরীফ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি হয়ে যায় এবং উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনার সাথে স্পর্শকৃত ধূলি-বালি মুবারক উনার পরশে যদি সম্মানিত আরশে আযীম আরো পবিত্রতা হাছিল করেন, সম্মানিত ও বরকতময় হন, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় মুবারক উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
যাঁরা আক্বলমান্দ উনাদের জন্য আর কোনো দলীলের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট জীব মুনাফিক্ব, উলামায়ে সূ’, ওহাবী, খারিজী, দেওবন্দী, লা-মাযহাবী ও বদ আক্বীদাধারী, বদ মাযহাবীদেরকে আরো শত-সহস্র, লক্ষ-কোটি দলীল দিলেও তারা কস্মিনকালেও বুঝবে না। কারণ তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু তথা শূকর, কুকুরের চেয়েও অত্যধিক নিকৃষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ!
যা হোক, এই কারণেই যিনি সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত ফতওয়া মুবারক দিয়েছেন যে, ‘সম্মানিত লাইলাতুর রগইব শরীফ’ তথা সম্মানিত রজব মাস উনার পহেলা জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত্রি মুবারক উনার মর্যাদা সম্মানিত শবে ক্বদর উনার থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ! কেননা সেই সম্মানিত রাত্রি মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুদরতীভাবে উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আর মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সময়, দিন, রাত্রি, তারিখ, বার ও মাস মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেই সম্মানিত সময়, দিন, রাত, বার, তারিখ ও মাস উনাদের ফযীলত অন্যান্য সমস্ত সময়, দিন, রাত, তারিখ, বার ও মাসের থেকে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি এবং বেমেছাল সম্মানিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ!
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ ©
-আল্লামা মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক্ব। আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net