Pages

Wednesday, July 16, 2014

সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী ঐতিহাসিক বদরের জিহাদ

হিজরতের দ্বিতীয় সনে বদরের জিহাদ সংঘটিত হয়। এটাকে বড় বদরও বলা হয়ে থাকে। বদর একটি স্থানের নাম। বদর ইবনে মুখাল্লাদ ইবন নযর ইবন কিনানা-এর নামানুসারে এই স্থানের নাম খ্যাতি লাভ করে। তিনি এই স্থানে তাঁবু করেছিলেন। অথবা বদর ইবন হারিছ নামে এক লোক এখানে একটি কূপ খনন করেছিলেন। এ জন্য তার নামানুসারেই ইহা খ্যাত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এখানে বদর নামে এক বৃদ্ধ বহুদিন বসবাস করেছিল। পরে এই বৃদ্ধের নামেই এই বসবাস স্থানের পরিচিতি লাভ করে। অথবা ইহার নামকরণের কারণ, এই স্থানটি খুবই প্রশস্ত এবং ইহার পানি অত্যন্ত পরিষ্কার ও নির্মল, এমনকি ইহাতে পূর্ণচন্দ্র পরিলক্ষিত হতো।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হায়াত মুবারকে যতগুলি জিহাদ করেছেন তন্মধ্যে এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইহা এক বিরাট জিহাদ। কারণ, এই জিহাদের মাধ্যমেই ইসলামের মর্যাদা, ইযযত ও শান-শওকত প্রকাশ পেয়েছে। ইহা দ্বারা ইসলামের সম্মান-সম্ভ্রম ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সমগ্র আরবে বিস্তার করেছিল। সুতরাং এই দিনটিকে “ইয়াওমুল ফুরকান” বা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাস্তবিকই এই জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম ও কুফরের মধ্যে একটি বিরাট পার্থক্য সূচিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআন শরীফ-এ বলা হইয়াছে-
يوم التقى الجمعان অর্থাৎ এ দিন কাফির ও মুসলিমগণ মিলিত হয়েছিলেন। এ দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইসলাম ও মুসলমানগণকে জয়ী করেছিলেন এবং কাফিরদেরকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করে চরমভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছিলেন। অথচ মুসলমানগণদের সংখ্যার চেয়ে কাফিরদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। তদুপরি কাফিররা পরিপূর্ণরূপে জিহাদের অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অহঙ্কার ভরে এসেছিল। কিন্তু মহান পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মান ও বেমেছাল শানকে প্রকাশ করেছিলেন। এই জিহাদের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক ইসলামের ভিত্তি মজবুত ও সুদৃঢ় করেছেন। ইসলামের জ্যোতির দ্বারা চতুর্দিক আলোকিত করে তুললেন। দুষ্টের দলের অহঙ্কার চূর্ণ-বিচূর্ণ করে তাদের মুখে কলঙ্কের কালিমা লেপন করে দিলেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক মুসলমানগণদের উপর উনার গায়েবী মদদের কথা উল্লেখ করে বলেন-
ذلة لقد تصركم الله ببدر وانتم “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে বদরের দিন জয়ী করেছিলেন, অথচ আপনারা ছিলেন অল্প সংখ্যক” (সূরা আলে ইমরান : ১২৩)। মূলত বিজয় আসে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে। সংখ্যা বেশি-কমের উপর জয়-পরাজয় নির্ভর করে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন, وما النصر الا من عند الله العزيز الحكيم “বিজয় কেবল মহান আল্লাহ পাক উনার হতে এসে আসিয়া থাকে।” (সূরা আলে ইমরান : ১২৬)।
এই জিহাদ ছফরে বাহির হলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ই রমাদ্বান দ্বিতীয় হিজরী, হিজরতের ১৯তম মাসে। মতান্তরে ৮ই রমাদ্বান। জিহাদ সংঘটিত হয় ১৭ই রমাদ্বান শুক্রবার দিন। মতান্তরে শনিবার দিন। এই জিহাদ অভিযানের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ লুবাবা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মদীনায় উনার প্রতিনিধি নিয়োগ করে গিয়েছিলেন। এই জিহাদে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মদীনার আনসারগণও যোগদান করেছিলেন। ইতোপূর্বে আনসারগণ আর কোন জিহাদে বা কোন অভিযানে অংশগ্রহণ করেন নাই। কারণ, আকাবার বাইয়াতের সময় উনাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছিল তাহাতে উল্লেখ ছিল যে, উনারা উনাদের শহরে থেকেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের ব্যবস্থা করিবেন এবং উনার দুশমনদের প্রতিরোধ করবেন।
যা হোক, এই জিহাদে মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা ছিল তিনশত তেরজন থেকে তিনশত পনোরো জন। তন্মধ্যে ৭৭ জন মুহাজির আর ২৩৬ জন আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ছিলেন মাত্র ৩০৫ জন। তন্মধ্যে ৮০ জন মুহাজির ও অবশিষ্টগণ আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। অবশিষ্ট আটজন কোন কারণে জিহাদের ময়দানে উপস্থিত হতে পারেননি। কিন্তু তথাপি উনাদেরকে গনীমতের মালের অংশ দেয়া হয়েছিল। ঐতিহাসিকগণ উনাদেরকে বদর জিহাদের অংশগ্রহণকারী হিসেবে গণ্য করেন। মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে যে তিনজন জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি উনাদের মধ্যে একজন হযরত উসমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে উনার অসুস্থ মেয়ে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার খিদমতের জন্য মদীনা শরীফ-এ থেকে যান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় জন হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সাঈদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুশরিকদের কাফেলার অনুসন্ধানে বাহির হয়েছিলেন। উনারাও সরাসরি জিহাদে অংশ নিতে পারেননি। আর আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যে ৫ জন জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, উনাদের নাম বিভিন্ন জীবন চরিত গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে।
এই জিহাদে মুসলমানগণদের নিকট ছিল, ৩টি অশ্ব, ৭০টি উট, ৬টি বর্ম এবং ৮টি তরবারি। এক একটি উটের পিঠে কয়েকজন করে আরোহণ করে উনারা জিহাদে গমন করেছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাহন মুবারকেও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরোহণে শরীক হয়েছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পদব্রজে চলার সময় আসলে উনারা উভয়েই নিবেদন করতেন যে, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আনার বাহনেই থাকুন। আমরা আপনার সৌভাগ্য-সংস্পর্শে হেঁটে চলি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, তোমরা আমার চাইতে শক্তিশালী নও।
অপরপক্ষে মুশরিকদের সংখ্যা ছিল এক হাজার, তদুপরি বীর ও দক্ষ যোদ্ধা সমন্বয়ে গঠিত একটি সৈন্যবাহিনী।
এক বর্ণনা অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ছিল এক সহ¯্ররে কম তবে নয়শতের ঊর্ধ্বে। তাদের সঙ্গে ছিল একশত অশ্ব ও জিহাদ সম্ভারে বোঝাই সাতশত বা তার চাইতেও অধিক সংখ্যক উট। তদুপরি তাদের ছিল আকাশচুম্বী অহঙ্কার ও গর্ব। তাছাড়া তাদের অশ্বারোহী প্রত্যেকটি সৈনিক ছিল বর্মাচ্ছাদিত এমনকি পদাতিক সৈন্যগণও বর্মধারী ছিল। তাদের সঙ্গে আরও ছিল বাদ্যযন্ত্রসহ জিহাদে উন্মাদনা সৃষ্টিকারী একদল গায়িকা ও নর্তকী। ইহারা যে জলাভূমির ধারেই তাঁবু করতো, সেখানেই তাদের গায়িকা ও নর্তকীর দল সারিন্দা ও তবলা বাজাইয়া গান করতো আর ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম করতো। নাউযুবিল্লাহ! কুরাইশ নেতাদের মধ্যে একেক জন একেক দিন তাদের সকলের ভোজের আয়োজন করতো। দৈনিক তাদের জন্য ১১টি উট যবাহ করা হতো।
এক বর্ণনায় আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া করে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! মুসলমানগণ পদাতিক, তাদেরকে আপনি অনুগ্রহপূর্বক বাহনের পশুর ব্যবস্থা করে দিন। উনারা ক্ষুধার্ত, আপনি মেহেরবানী করে উনাদের আহারের ব্যবস্থা করে দিন। উনাদের পরিধানের কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিন। দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত, উনাদেরকে সম্পদ দান করুন। সুতরাং উনারা যখন মদীনা শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন উনাদের মধ্যে এমন কেউই ছিলেন না, যিনি উট, কাপড় ও অর্থসামগ্রী পাননি।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সাঈদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে উপরোক্ত কুরাইশ কাফেলার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। উনারা যথাসময়ে মদীনা শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন করে কাফেলার অবস্থা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পেশ করলেন।

বদরের জিহাদক্ষেত্র :
মুসলিম সৈন্যবাহিনী জিহাদক্ষেত্রে এসে অবস্থান গ্রহণ করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাতারগুলো সোজা করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন- আমার নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত শত্রুর উপর আক্রমণ চালাবে না। যদি শত্রু তোমাদের নিকটবর্তী হয়ে যায়, তবে তীর নিক্ষেপ করে শত্রুকে প্রতিহত করবে। তবে এই পরিমাণে তীর ছুঁড়িবে যাতে তীর শেষ না হয়ে যায়।
ঐতিহাসিকগণ এই সময়ের একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসামম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিহাদের কাতার সোজা করছিলেন। তখন উনার পবিত্র হস্ত মুবারকে একটি যষ্টি ছিল। হযরত সাওয়াদ ইবনে আযিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন সজ্জন ও সদাখুশি ছাহাবী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাতারের সামান্য অগ্রভাগে গিয়ে দাঁড়ালেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হস্তের যষ্টি দ্বারা উনার বক্ষে আঘাত করে বললেন, ‘হে সাওয়াদ! কাতার সোজা করে দাঁড়াও।’ তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমাকে খুবই ব্যথা দিয়াছেন। অথচ মহান আল্লাহ পাক আপনাকে সত্য ও ন্যায়সহ প্রেরণ করেছেন। ন্যায় ও ইনসাফের মালিক আপনি। আমাকে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও মুবারক সীনা খুলে দিয়ে বললেন, হে আস সাওয়াদ! এই মুহূর্তে তুমি প্রতিশোধ গ্রহণ কর। হযরত সাওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মুখে অগ্রসর হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বক্ষ মুবারকে চুম্বন করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তুমি এমন করছ কেন? তিনি নিবেদন করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি আমার জীবনের চরম মুহূর্ত। আমি এই জিহাদে শহীদ হব। আমার বড় আকাক্সক্ষা ছিল আমার দেহটি আপনার পবিত্র দেহ মুবারক স্পর্শ করুক। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য দোয়া করলেন।
এরপর কাফিরদের সৈন্যবাহিনী হতে উতবা ইবনে রবীআ, ওয়ালীদ ইবনে উতবা এবং শায়বা এই তিনজন জিহাদক্ষেত্রে আসল। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আহবান করল। মুসলিম বাহিনীর মধ্যে হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দুই পুত্র হযরত আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই তিনজন তাদের মুকাবিলা করতে সামনে অগ্রসর হলেন। কাফিররা জিজ্ঞাসা করল, তোমরা কে? উনারা বললেন, আমরা আনসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। কাফিরা বলল, আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমরা তো আমাদের চাচাদের পুত্রগণকে আহ্বান করছি। তাদেরই একজন উচ্চকণ্ঠে আহ্বান করল, হে মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের গোত্রের সমকক্ষ লোক প্রেরণ করুন। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উবাইদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে তাদের মুকাবিলা করতে পাঠালেন। উনারা তিনজন জিহাদক্ষেত্রে কাফিরদের মুকাবিলা করতে উপস্থিত হলেন। এবার কাফিরা বলল, হ্যাঁ, আপনারা আমাদের সমকক্ষ। নাউযুবিল্লাহ! হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিলেন, উনার বয়স মুবারক ছিল ৮০ বৎসর। তিনি উতবার বিরুদ্ধে আসলেন, হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শায়বার বিরুদ্ধে এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওয়ালীদের বিরুদ্ধে উপস্থিত হলেন। অপর বর্ণনায় অন্যভাবে বর্ণিত রয়েছে। যা হোক, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওয়ালীদ ইবনে উতবার বিরুদ্ধে জিহাদ করে তাকে হত্যা করলেন। হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও উনার প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করলেন। কিন্তু হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উতবার বিরুদ্ধে অস্ত্র পরিচালনা শুরু করলেন। হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাঁটুতে আঘাতপ্রাপ্ত হলেন। ইতোমধ্যে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সাহায্যে এগিয়ে আসলেন এবং উতবাকে ধরাশায়ী করতে উনাকে সাহায্য করলেন। তারপর উনারা আহত হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কাঁধে উঠিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে নিয়ে আসলেন। হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পা মুবারক-এর নালী হতে মগজ বইয়া পড়ছিল। হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি শহীদ হই নাই? রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আপনি শহীদ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এরূপ প্রশ্ন করার কারণ হল, হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিহাদক্ষেত্রে শাহাদাত বরন করেননি। উনার বেশ বিলম্ব হচ্ছে ভাবিয়া উনার অন্তরে বিদায়ের খেয়াল উদ্দেগ হয়েছিল। আর তাই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। ইহাতে ফকীহগণ উনাদের দ্বিমত দেখা যায়। হযরত উবাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বদর হতে প্রত্যাবর্তনের সময় সাফরা বা রাওহা প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেছেন এবং সেখানেই দাফন করা হয়।
হযরত মুয়াব্বায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দুই ভাই। উনারা হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার পুত্র। এই দুই ভাই আবূ জাহেলের সন্ধানে ঘুরতেছিলেন।তাকে দেখতে পেয়ে উনারা বিদ্যুৎগতিতে তার নিকট দৌড়ে গেলেন। তরবারি দ্বারা আঘাতের পর আঘাত করে তাকে ধরাশায়ী করেছিলেন। হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- আমি আবূ জাহেলের পায়ে আঘাত করে তার পায়ের নালী পৃথক করে দিলাম। আবূ জাহেলের সাহায্যে ইকরিমা এসে আঘাত করে আমার একটি হাত কেটে ফেলল। সুতরাং আমি এই কাটা হাত নিয়ে জিহাদ করছিলাম। আর আমার হাতটি লটকিয়া ছিল। অবশেষে আমি দুই পায়ে চেপে ধরে আঘাতপ্রাপ্ত হাতটি বাহু হতে পৃথক করে ফেলি। তারপর হযরত মুয়াব্বায ইবনে আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তরবারির এক আঘাতে আবূ জাহলকে ধরাশায়ী করে দিল। কিন্তু তথাপি তার জীবন নিভু নিভু করেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন, তারপর উনারা দুই ভাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির হয়ে বললেন যে, আমরা আবূ জাহেলকে হত্যা করেছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আবূ জাহেলকে হত্যা করেছেন? উনারা দুইজনই বললেন যে, আমি হত্যা করেছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা কি আপনাদের তরবারি পরিষ্কার করে ফেলেছেন? উনারা বললেন, না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনাদের তরবারি আনুন দেখি। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের তরবারি পরীক্ষা করে বললেন যে, আপনারা দুইজনেই হত্যা করিয়াছেন। তবে আবূ জাহেলের সামানপত্র মুয়াজ উনাকে দেয়া হবে।
বর্ণিত আছে যে, হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এরূপ কঠিনরূপে আহত হওয়ার পরও হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত কাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির হলেন, তখনো উনার হাতটি চামড়ার সাথে ঝুলছিল। তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মুখ মুবারক-এর লালা মুবারক উনার কাটা হাতে লাগিয়ে দিলেন, আর হাত তখনই ঠিক হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাই হযরত মুয়াব্বায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বদর জিহাদেই শহীদ হলেন।
উল্লেখ্য যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দেখলেন যে, আবূ জাহেলের জীবন প্রদীপ এখনও নির্বাপিত হয় নাই, এখনও তার জীবনের কিছুটা অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি দেহ হতে উনার শির বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, আবূ জাহেলের খবর নিয়ে আমায় পৌঁছাবে? তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবূ জাহেলের সন্ধানে গেলেন এবং তিনি তাহাকে মৃত অবস্থায় দেখতে ফেলেন। কারণ, ইতিপূর্বেই আফরার পুত্রদ্বয় তাকে হত্যা করেছেন। তখন হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবূ জাহলের বক্ষে বসলেন এবং তার এক কান দিয়ে অন্য কান দিয়ে রশি বের করে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোকে লাঞ্ছিত করেছেন, তুই কি আবূ জাহেল? আবূ জাহেল বলল, হতে অপমানের কিছুই নেই। কারণ, একটি লোককে তার স্বজাতিই হত্যা করছে। আমার জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হতো, যদি আমাকে কোন কৃষক হত্যা করত। এই কথা দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল মদীনার আনসারগণ। নাউযুবিল্লাহ! আলিমগণ বলেন, “যদিও আবূ জাহেলকে এই উম্মতের ফিরাউন বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে ফিরাউনের চেয়েও নিকৃষ্টতর ছিল। ফিরাউন সে পানিতে ডুবে মরার সময় তার কৃত অপরাধের কথা স্বীকার করেছিল এবং দোহাই দিয়েছিল। কিন্তু এই নরাধম আবূ জাহেল তার হঠকারিতা পরিত্যাগ করে নাই।” তারপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার দেহ হতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন এবং তার মস্তকটিতে রশি বেঁধে ছেচরাতে ছেচরাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! সে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে চরমভাবে অপমানিত করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি উনার বান্দাদের দলকে জয়ী করেছেন। উনার দ্বীন ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি আরও বললেন যে, مات فرعون هذه الامة “এই উম্মতের ফিরাউনের মৃত্যু ঘটেছে।” অপর এক বর্ণনায় আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদায়ে শোকর করেন।
কথিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উভয় সৈন্যবাহিনীকে হাতাহাতি জিহাদে লিপ্ত দেখলেন এবং দেখলেন যে, কাফিরদের সংখ্যা অনেক বেশি আর মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা নিতান্তই কম, তখন তিনি উনার তাঁবু মুবারকে ফিরে এসে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অতিশয় বিনয়ের সাথে দোয়া ও মুনাজাত করতে লাগলেন। তাঁবু মুবারকে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছাড়া উনার নিকট আর কেউ ছিলেন না। এই সময় মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার প্রতিশ্রুত বিজয় ও সাহায্যের জন্য আবেদন করিলেন। তিনি দোয়া ও মুনাজাতে এমনভাবে মনোনিবেশ হলেন যে, উনার কাঁধ মুবারক হতে চাদর মুবারক পড়ে গেল, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার চাদর মুবারক উঠিয়ে দিলেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করে বললেন, ‘হে মহান আল্লাহ পাক, আপনি আমাকে দেয়া অঙ্গীকার পূরণ করুন। হে মহান আল্লাহ পাক! কাফিররা যদি এই মুসলিম বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়, তবে এই দুনিয়াতে আপনার নামে যিকির করার কেউ থাকবে না। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দোয়া ও মুনাজাতের গভীরতা প্রত্যক্ষ করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আর দোয়া ও মুনাজাত করতে হবে না। আপনি আপনার রব উনার নিকট যা চেয়েছেন, তিনি তা অবশ্যই আপনাকে হাদিয়া করবেন।
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- বদরের দিন আমি জিহাদে লিপ্ত ছিলাম। তবে বারবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তথ্য জানার জন্য উনার তাঁবু মুবারকের নিকট আসতাম। আর যখনই এসেছি, তখন আমি উনাকে সিজদারত অবস্থায় এই দোয়া করতে দেখেছি-
ياحى ياقيوم برحمتك استغيث
বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ তাঁবু মুবারকে ছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। সামান্য সময় উনার কেটে গেল। তিনি ঘুম থেকে উঠে মৃদু হেসে বললেন, আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য এসে গেছে। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার অশ্বের লাগাম ধরে এসেছেন। উনার সম্মুখের দুটা দাঁতের নূর চমকাচ্ছে। তারপর তাঁবু মুবারক হতে বাইরে এসে জিহাদরত ছাহাবীগণ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে উৎসাহিত করে বললেন, আরো জেনে রাখ, আমি সেই মহান আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলছি! যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার জীবন মুবারক, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও মহান পুরস্কারের আশায় কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শহীদ হবে, জান্নাত তার জন্য অবধারিত।
হযরত উবায়র ইবনে হাম্মাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কয়েকটি খেজুর হাতে নিয়ে খাচ্ছিলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারকে খুশি হয়ে বললেন, এখন আমার জান্নাতে প্রবেশের পথে আর কোন বাধা-বিপত্তি নাই। এখন শুধু কাফিরদের হাতে আমি শহীদ হইলেই জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারি। এই বলো তিনি হাতের খেজুর কয়টি ছুড়ে ফেললেন এবং কাফিরদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়লেন। অতপর তিনি জিহাদ করে শহীদ হলেন। সুবহানাল্লাহ! (মাদারিজুন্ নুবুওয়াত)
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌
-সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net