নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা পবিত্র বরাত উনার রাত্র পাবে তখন সারারাত ইবাদত করো এবং পরের দিন রোযা রাখো।”
আজ দিবাগত রাতটিই পবিত্র বরাত উনার বরকতময় রাত।
যা মুসলমানদের জন্য দোয়া কবুলের রাত, ক্ষমা বা মাগফিরাতের রাত, তওবা কবুলের রাত, বিপদ-আপদ থেকে নাযাত পাওয়ার রাত এবং এক বছরের হায়াত-মউত ও রিযিকের ফায়ছালার রাত।
তাই প্রত্যেক পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে সবার জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, খালিছভাবে তওবা করতঃ সারারাত ইবাদত-বন্দিগী, যিকির-ফিকির ও দোয়া-মুনাজাতে কাটানো এবং পরের দিন রোযা রাখা।
আর বাংলাদেশ সরকারসহ প্রত্যেক মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের উচিত ছিলো, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে কমপক্ষে তিনদিন বাধ্যতামূলক ছুটি ঘোষণা করা। পাশাপাশি পবিত্র শবে বরাত উদযাপনে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ও সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, মুর্শিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “লাইলাতুম মুবারাকাহ বা শবে বরাত উনার মধ্যে সকল প্রজ্ঞাময় বিষয়সমূহ ফায়ছালা করা হয়।” আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘এ রাত্রিতে (আগামী এক বছরে) যে সকল আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ইন্তিকাল করবে তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়ছালা করা হয় এবং বান্দার (বিগত এক বছরের) আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয়।’ সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়। পবিত্র রজবুল হারাম উনার প্রথম রাত্র, পবিত্র শাবান শরীফ উনার ১৫ তারিখ রাত্র বা পবিত্র বরাত উনার রাত্র, পবিত্র ক্বদর উনার রাত্র এবং পবিত্র দু’ঈদ উনাদের দু’রাত্র।’ সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, কয়েক শ্রেণীর লোক তারা খালিছ তওবা না করা পর্যন্ত তাদের দোয়া কবুল হবে না বা পবিত্র শবে বরাত নছীব হবে না। যেমন- যাদুকর (জ্যোতিষ, গণক), শরাবখোর, সেটা যে কোন নেশা জাতীয় মাদক দ্রব্যই হোক না কেন, ব্যভিচারী, শরীয়ত উনার কারণ ব্যতীত আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, চোগলখোর (যে একজনের কথা আরেক জনের নিকট বলে বেড়ায়), শরীয়ত উনার কারণ ছাড়াই কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধকারী, শরীয়ত উনার কারণ ব্যতীত মুসলমানকে হত্যাকারী, মুশরিক, গায়ক ও বাদক ইত্যাদি।
মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে বেপর্দা, ছবি, গানবাজনা, খেলাধুলা, গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, সুদ-ঘুষ, হারাম খাওয়া, মিথ্যা বলাসহ ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী বা হারাম কাজে মশগুল তারাও এগুলো থেকে খালিছ তওবা না করলে ‘শবে বরাত’ উনার মাগফিরাত, রহমত, বরকত, সাকিনা লাভ করতে পারবে না। কাজেই তাদেরকে অবশ্যই এ রাতে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। যদি তারা খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন এবং পবিত্র শবে বরাত উনার সকল রহমত, বরকত ও নিয়ামত দান করবেন। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বরাত উনার রাত্রিতে কি কি ইবাদত-বন্দিগী করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে বলেন,
* প্রথমতঃ বাজামায়াত পবিত্র ইশা উনার নামায আদায় করতঃ পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করে সংক্ষিপ্ত নছীহত করে তওবা-ইস্তিগফার করে দোয়া-মুনাজাত করবে। * অতঃপর দুই দুই রাকায়াত করে ৪ অথবা ৬ অথবা ৮ অথবা ১০ অথবা ১২ রাকায়াত পবিত্র শবে বরাত উনার নামায পড়বে। * অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুনাহ-খাতা ক্ষমা হয়। * যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা ক্বলব বা অন্তর ইসলাহ ও ইতমিনান হয়। * পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। * পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।
* সম্ভব হলে কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত মুবারক আদায় হয়। * তাহাজ্জুদ উনার নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক হাছিল হয়। * অতঃপর পুনরায় পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করে খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দা-বান্দীর সমস্ত গুণাহ-খাতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাযাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়। * আর সর্বশেষ ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে অর্থাৎ আখিরী মুনাজাত করবে। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত মুবারক লাভ হবে। তবে আখিরী মুনাজাত এতটুকু পূর্বে শেষ করবে যাতে দিনে যারা রোযা রাখবে তারা যেন সাহরী খেতে পারে।
মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র শা’বান মাস উনার রোযার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান মাস উনার মধ্যে তিনটি রোযা রাখবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! যদি তিনটি রোযা রাখা সম্ভব না হয় তবে অন্ততঃপক্ষে শবে বরাত উনার পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই শাবান অর্থাৎ ইয়াওমুস সাবত বা শনিবার দিনের রোযাটি রাখবে। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান মাস উনার পনের তারিখ অর্থাৎ বরাত উনার দিনে রোযা রাখবে, তাকে কখনো জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র শা’বান মাস উনার ১৫ তারিখ যারা রোযা রাখবে তারা ইফতারীর সময় তিন বার পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। তাহলে তার পূর্বের গুনাহখাতা ক্ষমা করা হবে এবং রিযিকে বরকত দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অত্যন্ত জওক-শওক এবং মুহব্বত ও খুলুছিয়তের সাথে পবিত্র শবে বরাত পালন করা। মুসলমানগণ যাতে ইতমিনানের সাথে অফুরন্ত নিয়ামতের রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ পালন করতে পারে এবং দিনে রোযা রাখতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ সরকারসহ পৃথিবীর সকল মুসলিম অমুসলিম সরকারের উচিত পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে কমপক্ষে তিনদিন ছুটি ঘোষণা করা এবং মুসলমানগণের পবিত্র শবে বরাত পালনে সর্বপ্রকার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা।
-০-
█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net