Pages

Monday, June 11, 2012

হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এখন জানার বিষয় হচ্ছে- আমি কি প্রকৃতপক্ষেই গোলামের ছেলে গোলাম হয়েছি?

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাইনা। তবে আমার যারা ঘনিষ্ঠজন তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও হযরত আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।’
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমার আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদগণ উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।’
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বতই হচ্ছে ঈমান। আর হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে জুযে ঈমান।
তাই উনাদেরকে মুহব্বত করা এবং উনাদেরকে যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরযে আইন।

যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার নিকটজন তথা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদগণ উনাদের প্রতি তোমরা সদাচারণ করবে।” (সূরা শূরা : আয়াত শরীফ- ২৩) এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে মাযহারী” ৮ম জিলদ ৩২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাই না। তবে (তোমাদের প্রতি আমার নির্দেশ হলো) তোমরা আমার নিকটাত্মীয়, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদগণ উনাদের প্রতি মুহব্বত রাখবে এবং (যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক) হক্ব আদায় করবে।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে কতটুকু তা’যীম-তাকরীম ও মুহব্বত করতে হবে সে প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে চলাচল করতেন, উঠাবসা করতেন। কোনো এক প্রসঙ্গে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে বলেছিলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এটা শুনে তিনি বিষয়টার শরঈ ফায়সালার জন্য উনার পিতা যিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে জানালেন যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এখন জানার বিষয় হচ্ছে- আমি কি প্রকৃতপক্ষেই গোলামের ছেলে গোলাম হয়েছি? খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, বেশ ভালো কথা। এ বক্তব্যের শরঈ ফায়সালা করতে হলে মৌখিকভাবে বললে হবে না বরং লিখিত আনতে হবে, কাগজে-কলমে থাকতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন, হে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম! আপনি যে আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’ এটা লিখিত দিতে হবে কারণ এ বক্তব্যের শরঈ ফায়সালার জন্য আমি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কাছে আরজি পেশ করেছি। তিনি বললেন হ্যাঁ, আমি লিখিত দিবো। সত্যিই তিনি একটা কাগজে লিখে দিলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। সেটা নিয়ে পেশ করা হলো খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কাছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে, আমি এর শরঈ ফায়ছালা বর্ণনা করবো। বিষয়টি নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই চিন্তিত হলেন। উনারা চিন্তিত হলেন যে, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি জালালী তবিয়তের, তিনি ইনছাফগার হিসেবে মশহূর, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব।
একদিকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, আরেকদিকে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম। সকলেই চিন্তিত হলেন, বিষয়টির শরঈ কী ফায়সালা? খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি তো অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তাহক্বীক করে শরঈ ফায়সালা দিয়ে থাকেন। তিনি কী ফতওয়া দিবেন? নির্দিষ্ট স্থান, সময়, দিন, তারিখ সব ঘোষণা করা হলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম যাঁরা ছিলেন সকলেই সেখানে জমা হয়ে গেলেন যে, কী ফতওয়া দেয়া হয় সেটা জানার জন্য।
এদিকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত হলেন। তিনি যখন উপস্থিত হলেন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করে একটা সম্মানিত স্থানে বসালেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন আসলেন, উনাকেও এক পাশে বসালেন। শরঈ ফায়সালার নিদিষ্ট সময় যখন উপস্থিত হলো, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার পকেট থেকে কাগজটা বের করে বললেন যে, একটা কাগজ আমার কাছে পেঁৗঁছানো হয়েছে, এ কাগজের মধ্যে লিখিত রয়েছে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। কাগজটা দিয়েছেন আমার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার বক্তব্য হচ্ছে- হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে বলেছেন- ‘গোলামের ছেলে গোলাম’।
এ বিষয়ে শরঈ ফায়সালার জন্য এ কাগজটা আমার নিকট পেশ করা হয়েছে। তখন খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি আপনি লিখেছেন? তিনি বললেন যে, হ্যাঁ। এটা আমার লিখিত, আমি বলেছি এবং লিখেছি। যখন জিজ্ঞাসা করে উনার স্বীকৃতি মুবারক নেয়া হলো তখন বিষয়টা সবাইকে জানানো হলো যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি দয়া করে এ কথা বলেছেন এবং দয়া করে লিখেও দিয়েছেন। এটা সকলেই শুনলেন। তখন খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, এখন এ বিষয়ে শরঈ ফায়ছালা করা হবে। সকলেই অত্যান্ত মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকলেন। মনে হয়েছে যেনো বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, সকলেই একদৃষ্টিতে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার দিকে চেয়ে রয়েছেন। এ বিষয়টা তিনি কীভাবে ফায়সালা করেন, এবং এর কী ফায়সালা রয়েছে শরীয়তে?
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ঘোষণা করলেন, এই যে কাগজটা যার মধ্যে লিখিত রয়েছে, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। অর্থাৎ হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিনি অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমার ছেলেকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর অর্থ হচ্ছে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন গোলাম আর উনার ছেলে হচ্ছে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর শরঈ ফায়সালা হচ্ছে- আপনারা সকলেই সাক্ষী থাকুন, আমি আমার যিন্দিগীর অনেক সময় অতিবাহিত করেছি, পূর্ববর্তী কুফরী যিন্দিগী বাদ দিয়েছি, আমার অতীতের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যা ছিলো সেটা আমি ত্যাগ করেছি, শরীয়তের নির্দেশবহির্ভূত আহলিয়া ছিলো তাদেরকেও পরিত্যাগ করেছি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির জন্য। আমার চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় এটাই ছিলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যতোটুকু দিয়েছেন ততোটুকু পাওয়া হয়েছে। তবে আমার একটা লিখিত দলীল প্রয়োজন ছিলো, যে লিখিত দলীলের আমি প্রত্যাশা করেছিলাম। আজকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি এটা লিখিত দিয়েছেন। এখন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আমি উনাদের গোলাম। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, বর্তমানে আমার ওছীয়ত হচ্ছে আপনাদের প্রতি, আমি ইন্তিকাল করলে এই কাগজখানা আমার কাফনের ভিতরে, আমার সিনার উপর রেখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! আমি ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কাছে আরজু করবো যে, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার যিনি লখতে জিগার হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনি আমাকে লিখিত দিয়েছেন যে, ‘আমি গোলাম’। কাজেই, আমার আমল যা-ই রয়েছে কমপক্ষে এই দলীলের খাতিরে আমাকে গোলাম হিসেবে কবুল করুন। সুবহানাল্লাহ!

উনি যখন এটা ফায়সালা করলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন সকলেই হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বত ও তা’যীম দেখে আশ্চর্য হয়ে হাক্বীক্বী ইবরত ও নছীহত হাছিল করলেন।।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মূলত এ ঘটনাটির মাধ্যমে যে বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে তা হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা, উনাদেরকে মুহব্বত করা ও সম্মান-ইজ্জত করা। হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত জুযে ঈমান। উনাদেরকে মুহব্বত করা এবং উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরযে আইন।
-০-

তথ্যসূত্র:█║▌│█│║▌║││█║▌│║█║▌ © আল ইহসান.নেট | al-ihsan.net