Pages

Tuesday, February 15, 2011

হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত


মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার যিকিরকে বুলন্দ করেছি।” (সূরা আলাম নাশরাহ ৪)
কাজেই মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। সেখানে তাঁর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করা উম্মতের জন্য যে কতটুকু জরুরী, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেননা আল্লাহ পাক আদেশ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবীব-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ কর।”
আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করার ফযিলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার ছলাত-সালাম পাঠ করেব, আল্লাহ পাক তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করবেন।” (মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার ছলাত (দরূদ শরীফ) পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন এবং তার দশটি গুনাহ্‌ ক্ষমা করবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।” (নাসাঈ শরীফ)
ছলাত-সালাম পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তিই ক্বিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার প্রতি বেশী বেশী ছলাত (দরূদ শরীফ) পাঠ করবে।” (তিরমিযী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া আকাশ ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। তোমরা রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ না করা পর্যন্ত দোয়া মোটেও উপরে উঠবে না।” (তিরমিযী শরীফ)
আর ইমাম, মুজতাহিদগণ বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি জীবনে একবার ছলাত-সালাম পাঠ করা ওয়াজিব। এরপর প্রতিবার হযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে ছলাত-সালাম পাঠ করা মুস্তাহাব।” (তাফসীরে রহুল বয়ান)
কাজেই শুধুমাত্র ছলাত বা সালাম পাঠ করা মাকরূহ অর্থাৎ ছলাত ও সালাম উভয়টাই পাঠ করতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে প্রতিটি মুহুর্তে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করার তৌফিক দান করুন। আমিন

Monday, February 14, 2011

ভ্যালেন্টাইন ডে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর পর্যালোচনা।


মুসলমানদের দ্বীন ‘ইসলাম’। ইসলাম এসেছে ‘সলম’ ধাতু থেকে। যার অর্থ শান্তি। কাজেই মুসলমানদের উপর শান্তির সব নিয়ামতই বিরাজমান। মুসলমান স্বামী-স্ত্রী যে অভাবিত শান্তিতে থাকে ও ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তা ইহুদী-খ্রিস্টান তথা পাশ্চাত্য বিশ্ব কল্পনাও করতে পারে না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমানুর রহিম। আর রেহেম শব্দের এক অর্থ হলো বন্ধন। অর্থাৎ মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রহমানুর রহিম উনার রহমতে যে রেহেম বা বন্ধন তৈরি হয় তা বিধর্মীদের জীবনে বিরল। কারণ, এটা খোদায়ী নিয়ামত আর মুসলমান স্বামী-স্ত্রীই কেবল সে নিয়ামত পেয়ে থাকে।
ইসলাম প্রতিটি দিনে প্রতিটি মুহূর্তেই স্বামী-স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসার প্রেরণা দেয়। হাদীছ শরীফ-এ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার চেতনা ও প্রেরণা দিয়ে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” আবার স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, “আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া যদি অন্য কাউকে সিজদা করা জায়িয হতো তবে আমি স্ত্রীদের বলতাম তারা যেনো স্বামীদের সিজদা করে।”
হাদীছ শরীফ-এ সব সময়ই স্ত্রীদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, স্ত্রীর দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকানোর জন্য, স্ত্রীর কাজে সাহায্য করার জন্য, স্ত্রীকে ক্ষমা করার জন্য, স্ত্রীকে সম্মান দেয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে। অপরদিকে স্বামীর খিদমত, সম্মান, কথানুযায়ী চলার জন্য স্ত্রীদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইসলামী আদর্শের কারণে যে অগাধ মুহব্বত থাকে তা ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মী অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্ব ও এদেশীয় পশ্চিমা এজেন্টরা কল্পনাই করতে পারে না ও পারবে না। বরং তারা তার বিপরীত আযাব-গযব তথা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-ফাসাদ ও ভালবাসাহীনতায় ভুগে। তাদের সে ভালবাসাহীন যন্ত্রণাকাতর দগ্ধ জীবনে একটু ভালবাসার চেতনার জন্যই মুলত তারা তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
তথাকথিত ভালবাসা দিবস পালন মূলত অভালবাসা তথা নোংরামীর বিস্তার ঘটায়। পাশ্চাত্যে ভালবাসা দিবস প্রচলনের পেছনে ছিলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ। পাশাপাশি এদেশে তা প্রবর্তনের পেছনে আছে পাশ্চাত্য গোলাম শফিক রেহমান ও ইহুদী খ্রিস্টানদের সুদূর প্রসারী ইসলাম বিরোধী স্বার্থ। এটা এদেশে মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্র।
পশ্চিমাদের খাছ গোলাম শফিক রেহমান পশ্চিমাদের কাছে আরো প্রিয় এবং এদেশের হুজুগে মাতা বাঙালিদের কাছে একটি তথাকথিত সংস্কৃতির প্রচলনের প্রবক্তা সাজার উদ্দেশ্যে ও তার কাঙ্খিত বাহবা ক-ড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে তার সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার মাধ্যমে তথাকথিত ভালবাসা দিবসের প্রবর্তন ঘটিয়েছে। তবে শুধু শফিক রেহমানই নয় এর পেছনে সুযোগ-সন্ধানী ইসলামবিদ্বেষী মহলের বিবিধ স্বার্থ কাজ করেছে, করছে।
ভালবাসা দিবস-এর ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া সহ আরো বহু রেফারেন্স থেকে জানা যায়, “রোমান এক খ্রিস্টান পাদ্রি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। চিকিৎসা বিদ্যায় সে ছিলো অভিজ্ঞ। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সে যখন বন্দি ছিলো তখন তরুণ-তরুণীরা তাকে ভালবাসা জানিয়ে জেলখানায় জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিতো। বন্দি অবস্থাতেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন জেলারের অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়ার চিকিৎসা করে। মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে লেখা এক চিঠিতে সে লিখে যে, “ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন।” অনেকের মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
বর্ণিত ইতিহাস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, তথাকথিত ভালবাসা দিবস কখনোই এদেশীয় অর্থাৎ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ ছিলো না। আর মুসলমানদের সংস্কৃতিতো নয়ই। বরং তা সম্পূর্ণরূপেই বিজাতীয়, বিধর্মীয় তথা, পশ্চিমা ইহুদী-নাছারাদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি, তর্জ-তরীক্বা যা অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য কাট্টা হারাম ও শক্ত কবীরা গুনাহ। এছাড়া তথাকথিত ভালবাসা দিবসের নামে মূলত চলে বেপর্দা-বেহায়াপনার নির্লজ্জ উৎসব। যাতে ইবলিস শয়তানের ওয়াসওয়াসা থাকে ও নফস বা প্রবৃত্তির উদ্দামতা যুক্ত হয়। যা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক শক্ত কবীরাহ গুনাহ এবং পরকালে এসব কাজের জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হবে তথা জাহান্নামে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” অর্থাৎ যারা কথিত ভালোবাসা দিবস পালন করবে তাদের হাশর-নশর ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের সাথেই হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
মূলকথা হলো- যারা ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালন করবে তারা কুফরী করবে। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস সম্পূর্ণরূপেই ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা কাফিরদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি বা তর্জ-তরীক্বা। যা মুসলমানদের মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্রও বটে। তাই মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- ভ্যালেন্টাইন ডে’সহ সর্বপ্রকার কুফরী প্রথা থেকে বিরত থাকা ।